হলদিয়া: নন্দীগ্রামে প্রচারে গিয়ে আক্রান্ত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ পড়ে গিয়ে আঘত পেয়েছেন তিনি৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে জানিয়েছেন, ৪-৫ জন ভিড়ের মধ্যে থেকে তাঁকে লক্ষ্য করে ধাক্কা মারেন৷ ধাক্কা লেগে পায়ে চোট পান তিনি৷
আজ বুধবার হলদিয়ায় মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর নন্দীগ্রামে বিভিন্ন একাধিকয় যান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ বিকেলের যান রানিচকে একটি উৎসবে৷ সেখান থেকে রেয়াপাড়ার কাছে ফেরার আগেই ঘটে বিপত্তি৷ বাড়ির কাছাকাছি এসে আচমকা থমকে যায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কনভয়৷ দেখা যায়, মমতা পা ধরে গাড়ির মধ্যে বসে আছেন৷ দ্রুত তাঁর জন্য আনা হয় বরফ৷ পরে নিরাপত্তাকর্মীরা পাঁজাকোলা করে সামনের আসনে বসে থাকা মমতাকে দ্রুত পিছনের আসনে বসানোর ব্যবস্থা করা হয়৷
আজ সাংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, চার-পাঁচজন চক্রান্ত করে আমাকে ধাক্কা মেরেছে৷ বাঁ পায়ে চোট পেয়েছি৷ আমি তখন গাড়ির কাছে দাঁড়িয়ে নমস্কার করছিলাম৷ তখন চার-পাঁচজন আচমকা আমার দরজা বন্ধ করে দেয়৷ পায়ে আমার খুব লেগেছে৷ বাঁ পা পুরো ফুলে গিয়েছে৷ জেনেবুঝে চক্রান্ত করে এটা করা হয়েছে৷ চক্রান্ত৷ তখন আমার সঙ্গে পুলিশ সুপার ছিলেন না৷ স্থানীয় পুলিশের সহযোগিতা মেলেনি৷ আমার বুকে ব্যথা হচ্ছে৷’’ আজ রানিচকে এই ঘটনা ঘটেছে বলে খবর৷
তৃণমূল সুপ্রিমোর অভিযোগ, প্রচারের সময় কোনও পুলিশকর্মী ছিল না৷ গোটা ঘটনার পিছনে চক্রান্ত থাকতে পারে বলে অভিযোগ তুলেছেন মমতা৷ আঘাত লাগার পর পা ফুলে যাওয়ার কারণে তিনি গাড়ি থেকে মানতে পারেননি৷ পরে তাঁর নিরাপত্তাকর্মী গাড়ি থেকে নামাতে সহযোগিতা করেন৷ যদিও, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সর্বদা থাকেন নিরাপত্তা কর্মীরা৷ জেড প্লাস নিরাপত্তাও পেয়ে থাকেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ বিরাট নিরাপত্তা বলয়, নিরাপত্তাকর্মীদের চোখ এড়িয়ে কীভাবে মুখ্যমন্ত্রীকে ধাক্কা, নিরাপত্তা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন৷ খোদ মুখ্যমন্ত্রীকে নিরাপত্তা দিতে কি ব্যর্থ রাজ্য সরকার? খোদ মুখ্যমন্ত্রীকে ঘিরে চক্রান্ত হতে পারে, সেই খবর কি গোয়েন্দা বিভাগের কাছে ছিল না? উঠছে প্রশ্ন৷ আহত হওয়ার পর নন্দীগ্রাম থেকে তাঁকে দ্রুত কলকাতা নিয়ে আসার তৎপরতা শুরু হয়৷ আজ রাতে তাঁর নন্দীগ্রামে থাকার কথা থাকলেও আহত হওয়ার পর ফিরছেন কলকাতায়৷
আহত হওয়ার ঘটনা ঘিরে যখন পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী, ঠিক তখন পুলিশকে কাজে লাগিয়ে এলাকায় টাকা বিলির মতো গুরুতর অভিযোগ তুলেছে বিজেপি৷ বিজেপির অভিযোগ, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভোট প্রচারের জন্য কাজে লাগানো হচ্ছে পুলিশ কর্মীদের৷ এলাকায় এলাকায় সাদা পোশাকে প্রচারে নামছে পুলিশ এবং বিভিন্ন নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করছে৷ একইসঙ্গে বিভিন্ন ক্লাবের কর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করছে পুলিশকর্মীরা, একই সঙ্গে এলাকায় এলাকায় টাকা বিলি করা হচ্ছে বলেও বিস্ফোরক অভিযোগ করছে বিজেপি শিবির৷ এদিন সাংবাদিক বৈঠক করে বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ এবং নেতা শমীক ভট্টাচার্য জানান, মূলত ডিএসপি সহ বেশ কয়েকজন ইন্সপেক্টরকে দিয়ে কাজ করাচ্ছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অভিযোগ করা হয়েছে, চণ্ডীপুর এবং নন্দকুমারের মধ্যবর্তী সমস্ত হোটেল নাকি পুলিশ বুক করে নিয়েছে। সেখান থেকেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হয়ে ভোট প্রচারের সমস্ত কাজ করছেন তারা৷
এবার বিজেপির তরফে এহেন অভিযোগের পর মুখ্যমন্ত্রীর আহত হওয়ার ঘটনা, ফের প্রশ্নের মুখে পুলিশের ভূমিকা৷ কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জেড প্লাস নিরাপত্তার বলয় ভেঙে কীভাবে ঘটে গেল এই দুর্ঘটনা? মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে থাকা নিরাপত্তাকর্মীরা তখন কী করছিলেন? উঠছে গুরুতর অভিযোগ৷ গোটা ঘটনার তদন্তের দাবি জানিয়েছে গেরুয়া শিবির৷