কলকাতা: ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বাংলায় পরিবর্তনের হাওয়া এনে ৩৪ বছরের বাম জমানার পতন ঘটিয়েছিলেন তিনি। আর ২০২১ সালের নির্বাচনে প্রতিকূল পরিস্থিতিতে তৃতীয়বারের জন্য বাংলার মসনদের দখল নিজের ঝুলিতে রাখলেন। তবে কোন লড়াইটা বেশি কঠিন? ২০১১ সালের লড়াইটা ছিল ৩৪ বছরের একটা সরকারকে ধুলিস্মাৎ করে বাংলায় ক্ষমতায় আসার লড়াই। এই লড়াইতে অবশ্য বামপন্থীদের প্রতি বীতশ্রদ্ধ বাংলার মানুষ অনেকটাই সাহায্য করেছিল তৃণমূলকে। কিন্তু ‘২১ সালের লড়াইটা ছিল প্রেস্টিজের। ‘১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের পর থেকে বাংলায় ওঠা প্রবল বিজেপি ঝড়কে স্তব্ধ করে নবান্নের গদি বজায় রাখার চ্যালেঞ্জ। আর সেই চ্যালেঞ্জ নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কার্যত হেলায় উড়িয়ে দিলেন প্রতিদ্বন্দ্বি বিজেপিকে। যেমন বলেছিলেন তেমনটাই করলেন। ২০১১ এবং ২০১৬ থেকেও বেশি আসন নিয়ে সরকার গড়ার পথে তৃণমূল কংগ্রেস। কিন্তু তৃণমূলের এতবড় জয়ের রহস্যটা কী? বিদ্যুতের গতিতে ছড়িয়ে পড়া বিজেপিকে রুখে কীভাবে সবুজ ঝড় তুললেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একজন মহিলা হয়ে বাংলার মহিলা ভোটব্যাঙ্কটাকে ভালো কাজে লাগিয়েছেন মমতা। পার্থক্য গড়ে দিয়েছে ওই ৪৯ শতাংশ মহিলা ভোটব্যাঙ্ক। বাংলার ‘মা-বোন’ দুহাত ভরে ভোট দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। দেবেন নাই বা কেন? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গত ১০ বছরের শাসনকালে বিশেষ করে মেয়েদের জন্য একাধিক কল্যান মূলক প্রকল্প এনেছেন। কখনও কন্যাশ্রী, আবার কখনও রুপশ্রী। মহিলা ভোটব্যাঙ্ক টানার তৃণমূলের থিঙ্কট্যাঙ্ক মমতার কৌশল বাজিমাত করেছে ইভিএম মেশিনে। ভোটের আগে শুধুমাত্র পরিবারের মহিলাদের জন্য স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পও সেই আগুন ঘি ঢেলেছে। আবার নির্বাচনী ইস্তেহারে সরকার গড়লে বাড়ির মহিলাদের ৫০০ টাকা করে হাতখরচ দেওয়ারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তৃণমূল। যার জেরে রাজ্যের মহিলারা একজোটে মমতার পাশে দাঁড়িয়ে তার হাত শক্ত করেছে। অনেকের মতে আবার, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর প্রকাশ্য জনসভা থেকে সুর করে ‘দিদি..ও দিদি’ ডাক একেবারেই ভালোভাবে নেয়নি বাংলার নারী সমাজ। একজন পুরুষ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে একজন মহিলা মুখ্যমন্ত্রীকে এই ডাকের মধ্যে লিঙ্গভিত্তিক অশ্লীল আক্রমণের গন্ধ পেয়েছে মানুষ। আর তাই মোদী ব্রিগেডকে সপাটে জবাব দিয়ে মমতাকে মসনদের গদি উপহার দিয়েছে বাংলার মানুষ।
হিসেব বলছে, একুশের ভোটের প্রচারে বাংলায় মোট ১৫টি জনসভা করেছেন নরেন্দ্র মোদী। সভা ও রোড শো মিলিয়ে মোট ৬২টি কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ । আর অন্যান্য রাজ্যের নেতা-মন্ত্রীরা বাংলায় এসে মোট ১০৫টি প্রচার কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেছেন। এই সব কিছুর মূলে একটাই লক্ষ্য, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হার। যেন তেন প্রকারেণ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সরাতেই হবে বাংলার গদি থেকে। কিন্তু এই ম্যারাথন জনসভা, রোড শো করেও ইভিএম মেশিনে প্রবল ব্যর্থ ভাজপা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে গদি থেকে সরানো তো দূরের কথা, একচুল নড়াতেও পারেননি বিজেপির বড় বড় নেতারা। ভোটের সময়ে সব কাজ ফেলে করোনার দায়িত্ব এড়িয়ে দিনের পর দিন বাংলায় ‘ডেইলি প্যাসেঞ্জারি’ করে আখেরে লাভ কিছুই হল না। বাংলার মানুষ ‘সাম্প্রদায়িক’ বিজেপিকে রুখতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপরেই পূর্ণ আস্থা দেখাল।