উপভোক্তাকে নয়, রাজ্যকে সরাসরি টাকা দিক কেন্দ্র! নয়া শর্তে পিএম কিসান, আয়ুষ্মান চালুর প্রস্তাব!

উপভোক্তাকে নয়, রাজ্যকে সরাসরি টাকা দিক কেন্দ্র! নয়া শর্তে পিএম কিসান, আয়ুষ্মান চালুর প্রস্তাব!

কলকাতা: বাংলায় পিএম কিসান প্রকল্প চালু করতে চেয়ে এবার নয়া শর্ত দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রীকে চিঠি নয়া শর্তের উল্লেখ করা হয়েছে বলে খবর৷ কেন্দ্রের পিএম কিসান চালুর করতে হলে প্রকল্পের বরাদ্দ অর্থ বণ্টনের দায়িত্ব রাজ্য সরকারকে দিতে হবে বলেও তোলা হয়েছে দাবি৷ কৃষি বিল নিয়ে বিতর্কের মধ্যে মুখ্যমন্ত্রীর এই চিঠি ঘিরে নতুন করে তৈরি হয়েছে বিতর্ক৷ যদিও, বাংলায় কেন পিএম কিসান প্রকল্প চালু হয়নি, তা জানতে চেয়ে রাজ্য সরকারের এক হাত নিয়েছেন খোদ রাজ্যপাল৷

কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র সিংহ তোমরকে চিঠি পাঠিয়ে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেছেন, পিএম কিসান প্রকল্পের আওতায় বাংলার কৃষকদের সুবিধা পৌঁছে দেওয়া হবে৷ তবে, প্রয়োজনীয় তহবিল সরাসরি রাজ্য সরকারকে দিতে হবে৷ রাজ্য উপভোক্তার হাতে আর্থিক সুবিধা পৌঁছে দেবে৷ যদিও, এই প্রকল্পে সরাসরি উপভোক্তার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা পৌঁছে দিয়ে থাকে কেন্দ্রীয় সরকার৷ কিন্তু, রাজ্য সরকার চাইছে, প্রকল্পের বরাদ্দ টাকা রাজ্যের হাতে তুলে দিতে হবে৷ তারপর হবে বণ্টন৷ পিএম কিসানের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষবর্ধনের কাছেও মুখ্যমন্ত্রীর আর্জি, আয়ুষ্মান প্রকল্পে খরচের পুরোটা কেন্দ্রই বহন করুক৷ প্রকল্পের পুরো বরাদ্দ রাজ্য সরকারের মাধ্যমেই খরচ করা হোক৷ অর্থাৎ কেন্দ্র যদি প্রকল্পের পুরো বরাদ্দ রাজ্য সরকারের মাধ্যমে বিলি-বণ্টনের ছাড়পত্র দেয়, তাহলে আপত্তি থাকবে না৷

কৃষকদের জন্য পিএম কিসান ও চিকিৎসা বিমা সংক্রান্ত কেন্দ্রের আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্প বাংলায় চালু করতে দেয়নি মা-মাটি-মানুষের সরকার৷ বাংলা ভোটের আগে কেন্দ্রের দুই প্রকল্প চালু না হওয়ায় ইতিমধ্যেই তপ্ত হতে শুরু করেছে রাজনৈতিক ময়দান৷ রাজ্যের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা ককেছে বিজেপি৷  পিএম কিসান ইস্যুতে মাঠে নেমেছেন খোদ রাজ্যপা৷ টুইটারে রাজ্যকে সরসরি আক্রামণও করেছেন তিনি৷ মঙ্গলবার সাংবাদিক বৈঠকে রাজ্যে কৃষক বঞ্চনার অভিযোগে সরব হলেন তিনি৷ সাংবাদিক বৈঠক শেষে টুইটারে মুখ্যমন্ত্রীকে ‘মধ্যস্বত্ত্বভোগী এজেন্ট’ হতে চান কি না, তাও জানতে চেয়েছেন রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধান৷

রাজ্যপাল বলেন, পশ্চিমবঙ্গে ৭০ লক্ষ কৃষক রয়েছেন৷ অথচ রাজ্যের সেই কৃষকরা পিএম কিষাণ প্রকল্পের সুবিধা পেলেন না কেন? কেন এই কৃষকদের বঞ্চিত করা হচ্ছে? রাজ্য সরকারের সামনে সেই প্রশ্ন রাখেন রাজ্যপাল৷ দেশের সব রাজ্যের কৃষকরা প্রধানমন্ত্রী কিষাণ সম্মান নিধি (পিএমকিষাণ) প্রকল্পের সুবিধা পেলেও, পশ্চিমবঙ্গের কৃষকদের এই প্রকল্পের সুবিধা থেকে বঞ্চিত রাখা হয়েছে বলেও অভিযোগ তোলেন তিনি৷ এর আগে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে এই বিষয়ে চিঠিও পাঠিয়েছিলেন রাজ্যপাল৷ পশ্চিমবঙ্গ ছাড়া দেশের সমস্ত কৃষক পিএম-কিষাণ প্রকল্পে প্রভূত সুবিধা পেয়েছেন। এখনও পর্যন্ত ৯২ হাজার কোটি টাকা কৃষকদের দেওয়া হয়েছে। অথচ এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে রাজ্যের কৃষকদের৷ রাজ্যের কৃষকদের প্রতি এই অবিচার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সংকীর্ণ রাজনীতি ও দুর্বল অর্থনীতির পরিচায়ক৷ তিনি বলেন, পশ্চিমবঙ্গের ৭০ লক্ষ কৃষক ৮,৪০০ কোটি টাকার সুবিধা পেলেন না৷  তাঁরা এই প্রকল্পে যোগ দিলে আজ প্রত্যেক চাষিভাইয়ের ব্যাঙ্কে ১২ হাজার টাকা জমা পড়ত।

সাংবাদিক বৈঠক শেষ করেই টুইটারে সংক্রিয় হয়ে ওঠেন রাজ্যপাল৷ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ট্যাগ করে বাংলা ভাষায় টুইট করেন রাজ্যপাল৷ লেখেন, ‘‘পিএম কিষাণ হল চাষির অ্যাকাউন্টে সরাসরি টাকা পাঠানোর পোক্ত ও স্বচ্ছ ব্যবস্থা৷ এখানে কাটমানিও নেই, মধ্যস্বত্বভোগীও নেই৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকার (মুখ্যমন্ত্রীকে ট্যাগ করে) এর মধ্যস্বত্ত্বভোগী এজেন্ট হতে চায়, কেন? হায় ভগবান! MAP ঘোলাজলে মাছ ধরার সুযোগ খুঁজছে কি?’’ দ্বিতীয় টুইটে রাজ্যপালের খোঁচা, ‘‘আমপানের ত্রাণ বিলি আর চাল-ডাল বিলিতে কী হয়েছিল সবার তা জানা!’’

যদিও রাজ্যের দাবি, কেন্দ্রীয় প্রকল্পগুলি চালু হওয়ার অনেক আগে থেকেই বাংলায় কৃষকবন্ধু ও স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্প চালু আছে৷ সুবিধার দিক থেকে কেন্দ্রীয় প্রকল্পের থেকে অনেক এগিয়ে রাজ্যের প্রকল্প৷ কেন্দ্রের দাবি, রাজ্য কেন্দ্রের প্রকল্পের অনুমতি দিলে বহু মানুষের উপকার হত৷ উপভোক্তার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা সরাসরি টাকা পেয়ে যেতে পারতেন৷ কিন্তু, প্রথমে আপত্তির পর কেন্দ্রের ২টি প্রকল্প চালু করতে চেয়ে হঠাৎ কেন চিঠি চালাচালি? পর্যবেক্ষক মহলের একাংশের ধারণা, আগামী বছর বিধানসভা ভোট৷ তার আগে এই কৌশলী পদক্ষেপ রাজ্যের৷ তবে শর্তসাপেক্ষে হলেও রাজ্য কেন এই প্রকল্প চালু করতে চাইছে? তা নিয়ে মন্তব্য করতে নারাজ সরকার৷

কেন্দ্র ও রাজ্যের দুই প্রকল্পের সুবিধা কী? পিএম কিসান প্রকল্প কী? কেন্দ্রের দাবি, ওই প্রকল্পে সাড়ে আট কোটি ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষক বার্ষিককে ৬ হাজার টাকা অর্থ সহযোগিতা করা হবে৷ কৃষকবন্ধু কী? রাজ্যের দাবি, এই প্রকল্পে ৫ হাজার টাকা সহযোগিতা করা হয়৷ কৃষক মৃত্যুতে পরিবারকে ২ লক্ষ টাকা সহযোগিতা করা হয়৷ সরকারি খরচে কৃষকদের ফসলেও বিমা করে দিয়েছে রাজ্য৷ আয়ুষ্মানের সুবিধা কী নিলে রাজ্যের প্রায় দেড় কোটি পরিবার বছরে ৫ লক্ষ টাকার স্বাস্থ্যবিমা পেতে পারত৷ কেন্দ্রীয় এই প্রকল্পে রাজ্যকে খরচ ৪০ শতাংশ বহন করতে হয়৷ রাজ্যের স্বাস্থ্যসাথীতে প্রায় সাড়ে ৭ কোটি মানুষ সুবিধা পাচ্ছেন৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

17 − 12 =