মমতার সরকার মধ্যস্বত্ত্বভোগী এজেন্ট হতে চায়, কেন? ফের বিস্ফোরক রাজ্যপাল

মমতার সরকার মধ্যস্বত্ত্বভোগী এজেন্ট হতে চায়, কেন? ফের বিস্ফোরক রাজ্যপাল

 

কলকাতা:  কৃষক ইস্যুতে রাজ্য সরকারের সঙ্গে ফের সংঘাতে জড়ালেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়৷ মঙ্গলবার সাংবাদিক বৈঠকে রাজ্যে কৃষক বঞ্চনার অভিযোগে সরব হলেন তিনি৷ সাংবাদিক বৈঠক শেষে টুইটারে মুখ্যমন্ত্রীকে ‘মধ্যস্বত্ত্বভোগী এজেন্ট’ হতে চান কি না, তাও জানতে চেয়েছেন রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধান৷

আজ সন্ধ্যায় সাংবাদিক বৈঠক করে রাজ্যপাল বলেন, পশ্চিমবঙ্গে ৭০ লক্ষ কৃষক রয়েছেন৷ অথচ রাজ্যের সেই কৃষকরা পিএম কিষাণ প্রকল্পের সুবিধা পেলেন না কেন? কেন এই কৃষকদের বঞ্চিত করা হচ্ছে? রাজ্য সরকারের সামনে সেই প্রশ্ন রাখেন রাজ্যপাল৷ দেশের সব রাজ্যের কৃষকরা প্রধানমন্ত্রী কিষাণ সম্মান নিধি (পিএমকিষাণ) প্রকল্পের সুবিধা পেলেও, পশ্চিমবঙ্গের কৃষকদের এই প্রকল্পের সুবিধা থেকে বঞ্চিত রাখা হয়েছে বলেও অভিযোগ তোলেন তিনি৷ এর আগে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে এই বিষয়ে চিঠিও পাঠিয়েছিলেন রাজ্যপাল৷

এদিন রাজ্যপাল বলেন, রাজ্যের চাষিদের পিএম কিষাণ প্রকল্পের টাকা পেতে দিচ্ছে না রাজ্য সরকার৷ পাশাপাশি কৃষি বিলের প্রসঙ্গও তুলে ধরেন তিনি৷ কেন্দ্রের কৃষি বিলকে ‘কৃষক বিরোধী’ আখ্যা দিয়েছে তৃণমূল সরকার৷ এদিন জগদীপ ধনখড় বলেন, কৃষক স্বার্থেই কৃষি বিল আনা হয়েছে৷ কৃষক স্বার্থেই তাঁদের অ্যকাউন্টে সরাসরি টাকা পাঠানো হয়েছে৷ প্রতি বছর তাঁরা এই টাকা পাবেন৷ কেন্দ্রীয় সরকার কৃষকদের পাশে দাড়িয়েছে৷ কিন্তু কিষাণ সম্মান নিধি প্রকল্পে পশ্চিম বাংলার চাষিদের যে প্রাপ্য ছিল তা পেতে দেওয়া হয়নি৷ পশ্চিমবঙ্গ ছাড়া দেশের সমস্ত কৃষক পিএম-কিষাণ প্রকল্পে প্রভূত সুবিধা পেয়েছেন। এখনও পর্যন্ত ৯২ হাজার কোটি টাকা কৃষকদের দেওয়া হয়েছে। অথচ এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে রাজ্যের কৃষকদের৷ রাজ্যের কৃষকদের প্রতি এই অবিচার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সংকীর্ণ রাজনীতি ও দুর্বল অর্থনীতির পরিচায়ক৷ তিনি বলেন, পশ্চিমবঙ্গের ৭০ লক্ষ কৃষক ৮,৪০০ কোটি টাকার সুবিধা পেলেন না৷  তাঁরা এই প্রকল্পে যোগ দিলে আজ প্রত্যেক চাষিভাইয়ের ব্যাঙ্কে ১২ হাজার টাকা জমা পড়ত।

সাংবাদিক বৈঠক শেষ করেই টুইটারে সংক্রিয় হয়ে ওঠেন রাজ্যপাল৷ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ট্যাগ করে বাংলা ভাষায় টুইট করেন রাজ্যপাল৷ লেখেন, ‘‘পিএম কিষাণ হল চাষির অ্যাকাউন্টে সরাসরি টাকা পাঠানোর পোক্ত ও স্বচ্ছ ব্যবস্থা৷ এখানে কাটমানিও নেই, মধ্যস্বত্বভোগীও নেই৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকার (মুখ্যমন্ত্রীকে ট্যাগ করে) এর মধ্যস্বত্ত্বভোগী এজেন্ট হতে চায়, কেন? হায় ভগবান! MAP ঘোলাজলে মাছ ধরার সুযোগ খুঁজছে কি?’’ দ্বিতীয় টুইটে রাজ্যপালের খোঁচা, ‘‘আমপানের ত্রাণ বিলি আর চাল-ডাল বিলিতে কী হয়েছিল সবার তা জানা!’’

 

আগে টুইট করেও তিনি বলেছিলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী মহোদয়া আপনার কুমির কান্নায় চাষির দু:খ ঘুচবে না!!’’ রাজ্যপাল বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আমার আর্জি, অন্নদাতাদের পেটে দয়া করে লাথি মারবেন না৷ অন্নদাতাদের দুঃখ অনুভব করুন৷’’ তিনি আরও বলেন, আম্পানের ত্রাণ নিয়েও অকল্পনীয় দুর্নীতি হয়েছে৷ রাজ্য সরকারের অকর্মণ্যতার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের ঘোষিত ৩.৫ লক্ষ কোটির করোনা প্যাকেজের মধ্যে ৩০ হাজার কোটি টাকাও পায়নি পশ্চিমবঙ্গ। আশা করব, মুখ্যমন্ত্রী মহোদয়া পিএম-কিষাণের সুবিধা যাতে বাংলার চাষিরা পান সেজন্য পদক্ষেপ করবেন।

কৃষি বিল বা পিএম কিষাণ নিয়ে রাজ্যপাল এদিন সুর চড়ালেও অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের তালিকা থেকে আলু-পেঁয়াজকে বাদ দেওয়া নিয়ে রা কাড়লেন না তিনি৷ মঙ্গলবার বিরোধী শূন্য রাজ্যসভায় পাশ হয়ে গেল অত্যাবশ্যকীয় পণ্য আইনের সংশোধনী বিল৷ এই বিল পাশ করে অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের ধারণাটাই একপ্রকার বদলে দেওয়া হল৷ এখন থেকে চাল, আলু, পিঁয়াজ, ভোজ্য তেল, ডালের মতো বেশ কয়েকটি দৈনন্দিন খাদ্যসামগ্রী আর অত্যাবশ্যকীয় পণ্য হিসেবে গণ্য হবে না। অথচ এই নিয়ে কোনও মন্তব্যই করলেন না ধনখড়৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

six − 3 =