পাথরপ্রতিমা: কাল বাদে পরশু রাজ্যে প্রথম দফার ভোটগ্রহণ। হাতে বেশি সময় নেই। তাই দক্ষিণবঙ্গ জুড়ে গত এক সপ্তাহ ধরে ম্যারাথন জনসভা করছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। হুইলচেয়ারে বসে আহত পা নিয়েই চলছে শেষ মুহূর্তের জনসংযোগ। বৃহস্পতিবার দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার পাথরপ্রতিমায় বিশাল জনসভা থেকে নাম না করে আইএসএফ-কে তীব্র কটাক্ষ করলেন মমতা। বললেন, “হঠাৎ করে বিজেপি থেকে একটা দল গজিয়েছে!” এদিন তৃণমূল সুপ্রিমো বিজেপিকে কটাক্ষ করার পাশাপাশি পাথরপ্রতিমার মানুষের জন্য তিনি যা যা করেছেন তা আরেকবার মনে করিয়ে দিলেন।
বৃহস্পতিবার পাথরপ্রতিমার কলেজ মাঠে তৃণমূলের বিশাল জনসভা থেকে মমতা নাম না করে আব্বাস সিদ্দিকীর দল আইএসএফকে কটাক্ষ করে বললেন, “বিজেপির সাথে ডিল করে নতুন একটা দল এসেছে। হঠাৎ করে বিজেপি থেকে গজিয়ে উঠেছে। বিজেপি তাদের টাকা দিয়ে পাঠিয়েছে সংখ্যালঘু ভোট ভাগ করতে। আমি আপনাদের অনুরোধ করবো, জীবনে যদি নিরাপত্তা-শান্তি চান আর বিজেপিকে যদি রুখতে চান আপনার একটি ভোটও অন্য দলকে দিয়ে নষ্ট করবেন না। যে সিপিআইএম সেই বিজেপি, আর যে কংগ্রেস সেই বিজেপি। আর যে সংখ্যালঘুর নামে বলছে সে বিজেপির থেকে প্রচুর টাকা নিয়েছে।”
বিগত বছরে সরকারে থেকে তৃণমূল কংগ্রেস পাথরপ্রতিমা তথা সুন্দরবনের মানুষের জন্য যা যা করেছে তা এদিন মানুষকে স্মরণ করিয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। বললেন, “এখানে আগে যাতায়াত নিয়ে মানুষের খুব সমস্যা ছিল। হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে নতুন সেতু বানিয়েছি। সুন্দরবন অঞ্চলে ১৭টা নতুন সেতু বানিয়েছি। মানুষ উপকৃত হয়েছে। ৫৩০০ কিলোমিটার রাস্তা হয়েছে সুন্দরবন জুড়ে। আরও কাজ চলছে। আড়াই হাজার টিউবওয়েল আছে এই সুন্দরবনে।” আমফান কিংবা বুলবুল ঝড়ের ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতির কথা মনে করিয়ে দিলেন মমতা। বললেন, “আমফানের সময় ১৯ লক্ষ মানুষকে বাঁচিয়েছি। সারারাত জেগে আপনাদের পাহারা দিয়েছি। নবান্নটা থরথর করে কাঁপছিল। আবার বুলবুলের সময় ২০ লক্ষ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। দুর্গত মানুষদের সাহায্য করার জন্য কোনো কার্পণ্য আমরা করিনি। আমফানের পরে আমরা ৭ হাজার কোটি টাকা দিয়েছিলাম। ২১ লক্ষ বাড়ি বানানোর জন্য আমরা ২ হাজার কোটি টাকা দিয়েছিলাম।”
আমফানে সাহায্য করা নিয়ে বিজেপিকে তুলোধোনা করে মমতা বললেন, “আমফানে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ১ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি। নরেন্দ্র মোদি একদিন ঢং করে দেখতে এল প্লেনে করে। বলল টাকা দেব। বলল ১ হাজার কোটি টাকা দিয়ে গেলাম। কার টাকা? মাছের তেলে মাছ ভাজা। রাজ্য সরকারের প্রাপ্য টাকা রাজ্যকে দিয়ে বলছে আমরা দিয়ে গেলাম। এক টাকা দেয়নি। শুধু বড় বড় কথা বলছে। বিজেপির লোকেরা আমফানে আপনাদের পাশে ছিল না। বুলবুলেও ছিল না। নরেন্দ্র মোদি সবচেয়ে বড় মিথ্যেবাদী। এত বড় মিথ্যেবাদী কোথাও দেখতে পাবেন না। আর অমিত শাহ হোদল কুঁতকুঁত নেতা।” তিনি আরও বলেন, “ওরা বলছে নাকি, সরকারি কর্মীদের জন্য সপ্তম পে কমিশন দেবে। শুনে রাখুন, ত্রিপুরায় ক্ষমতায় এসে সরকারি কর্মচারীদের গ্র্যাচুয়িটি বন্ধ করে দিয়েছে, পিএফ বন্ধ করে দিয়েছে। অসমে ১৪ লক্ষ মানুষকে ঘরছাড়া করেছে।” স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ কদিন আগেই দক্ষিণ ২৪ পরগনায় গিয়ে সুন্দরবনকে আলাদা জেলা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী এদিন জানান, “পাথরপ্রতিমা আমার ধ্যানে রয়েছে। সুন্দরবন আলাদা জেলা হবে আগেই বলেছি। নতুন করে আর কারোর বলার অপেক্ষা রাখে না।”