কলকাতা: বলার সুযোগ নেই৷ তাতেই ‘অপমান’ করা হয়েছে বাংলাকে৷ মূলত এরই প্রতিবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর ঢাকা মুখ্যমন্ত্রীদের বৈঠকে গরহাজির ছিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ বুধবার কেন্দ্রের বিরুদ্ধে ‘বিদ্রোহ’ ঘোষণার পর শুক্রবার ইন্দো-চিন সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে নরেন্দ্র মোদির ডাকা সর্বদল বৈঠকে অংশ নিতে চলেছেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে শুক্রবার বিকেলে সর্বদল বৈঠকে ডাক দিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর দফতর৷ তৃণমূল সূত্রে খবর, কেন্দ্রের ডাকা সর্বদল বৈঠকে অংশ নেবেন নেত্রী৷
পূর্ব লাদাখ সীমান্তে ভারত-চিন সংঘর্ষ যখন নিয়ে চড়তে শুরু করেছে রাজনীতির ময়দান৷ দেশের রক্ষায় নিজের প্রাণ বলে দিয়েছেন দেশের ২০ জওয়ান৷ শহিদ রক্ত বিফলে যাবে না বলেও চিনের নাম না করে হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছেন প্রধানমন্ত্রী৷ চিনকে যোগ্য জবাব দিতে ইতিমধ্যেই উচ্চ পর্যায়ে বৈঠক শুরু করেছে কেন্দ্র৷ সেনাবাহিনীকে দেওয়া হয়েছে পূর্ণ স্বাধীনতা৷ লাদাখ সীমান্তে বাড়ানো হচ্ছে সেনাবাহিনীর সংখ্যা৷ ভারত-চিন সংঘাত আবহে ঠিক কী কী পদক্ষেপ নেবে তা নিশ্চিত? তা চূড়ান্ত করতে সর্বদল বৈঠকে ডাক দিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর দফতর৷ সেখানে দেশের সমস্ত রাজনৈতিক দলের প্রধানদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে৷ দেশের অন্যতম বিরোধী দল হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে তৃণমূলকে৷
সূত্রের খবর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দফতরের ডাকা ওই বৈঠকে অংশ নিতে চলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ তৃণমূল সূত্রে খবর, যেহেতু ইন্দো-চিন সম্পর্ক বিষয়টি দেশের বিষয়, তাই তৃণমূল সুপ্রিমো বন্দ্যোপাধ্যায়ই সর্বদল বৈঠকে অংশ নেবেন৷ প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় উত্তেজনা মোকাবিলা করতে গেলে কী করা উচিত, তা কেন্দ্রের উপর সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়ে ছেড়ে দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ তৃণমূল কেন্দ্রের বিদেশনীতি নিয়ে কখনই কোন কিছু মন্তব্য করবে না বলেও গতকাল জানিয়ে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী৷ কিন্তু দেশের বিদেশনীতি নিয়ে তৃণমূলের তরফে কোনও অবস্থান স্পষ্ট না করা হলেও আগামীকালের বৈঠকে তৃণমূল সুপ্রিমোর অংশগ্রহণ রাজনৈতিকভাবে বেশ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষক মহলের একাংশ৷
ইন্দো-চিন সীমান্ত বাংলার ২ জওয়ানের শহীদ হওয়ার ঘটনা প্রসঙ্গে টুইট বার্তা দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ জানান, ‘‘দেশের জন্য তাঁরা যে চরম বলিদান দিয়েছেন কিংবা পরিবারের যে ক্ষতি হয়ে গেল তা অপূরণীয়৷ কিন্তু এই সংকটের মুহূর্তে আমরা ভূমিপুত্র পরিবারের পাশে আছি৷ আমাদের নিহতদের পরিবারকে ৫ লক্ষ টাকা ও পরিবারের এক সদস্যকে সরকারি চাকরি দেব৷’’
চিন ই্যসুতে শুক্রবার সর্বদলে তৃণমূলের হাজির হওয়ার সম্ভবনা তৈরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদির ডাকা বুধবার মুখ্যমন্ত্রীদের বৈঠকে অংশগ্রহণ করেননি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ এ প্রসঙ্গে নবান্নে মুখ্যমন্ত্রীর জানিয়েছিলেন, ‘‘বাংলার মানুষ সম্মান নিয়ে চলে৷ বাংলার মানুষ মাথা উঁচু করে চলে৷ একটা বৈঠকে আমরা গেলাম না, তাতে বাংলার ভবিষ্যৎ কি ঠিক হয়ে যাবে? হয়তো তাঁরা প্রয়োজন মনে করেনি৷ তাই ডাকেনি৷ তা নিয়ে ঝগড়া করার কোন কারণ নেই৷ এখন আমি মনে করি, মানুষের সাথে লড়াই করাটা বড় কাজ৷ ডাক পাইনি তো কি হয়েছে, এমন তো হতে পারে একদিন, বাংলার সবাইকে ডাকবে৷’’
প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে বাংলার নাম বক্তার তালিকায় না থাকা নিয়ে গোটা বৈঠক বয়কট করেন মুখ্যমন্ত্রী৷ অন্যান্য মুখ্যমন্ত্রীরা বলতে সুযোগ পেলেও কেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর বলার সুযোগ দেওয়া হল না? প্রতিবাদে করা হয় বৈঠক বয়কট৷ কিন্তু এবার ইন্দো-চিন সীমান্ত সংঘাত পরিস্থিতিতে তৃণমূল সুপ্রিমোর সর্বদলে অংশগ্রহণ বেশ তাৎপর্যবলে মনে করছে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলের একাংশ৷