কলকাতা: ২০২১-এর নবান্ন দখলের যুদ্ধে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ক্যারিশ্মার পরে যদি কেউ সবচেয়ে বেশি নজর কেড়ে থাকেন, তা হলে তিনি হলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূল নেত্রীর পাশাপাশি তিনি যেমন কোচবিহার থেকে কাকদ্বীপ চষে বেড়িয়ে সেরেছেন ভোটের প্রচার, তেমনই নিজস্ব স্টাইলে মোকাবিলা করেছেন নরেন্দ্র মোদি-অমিত শাহদের ‘ভাইপো’ আক্রমণের। সেই সাফল্যের কৃতিত্ব তিনি পাচ্ছেনও।
রাজনৈতিক মহল একবাক্যে স্বীকার করছে, জোড়াফুলের জয়জয়কারে অন্যতম ‘ম্যান অফ দ্য ম্যাচ’ নিঃসন্দেহে অভিষেক। তাঁর আলাদা উপস্থিতি টের পাওয়া গেল তৃতীয়বারের জন্য মুখ্যমন্ত্রী পদে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানেও। করোনা পরিস্থিতির কারণে রাজভবনে হওয়া সংক্ষিপ্ত-অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানে প্রথম সারি আলো করে তো বসলেনই, মুখ্যমন্ত্রীর শপথপর্ব শেষে অতিথি-অভ্যাগতদের সঙ্গে আলাপচারিতায় অভিষেকের জন্য একটু বেশিই সময় ব্যয় করলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়, জড়িয়ে ধরলেন তাঁর হাতও।
তৃতীয়বার মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে অনিবার্য ভাবেই এদিন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে ডায়মন্ড হারবারের সাংসদের এই গুরুত্ব পাওয়া অবশ্যই রাজনৈতিক বিচারে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। এর পাঁচ বছর আগে যদিও তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠেছিল অভিষেকের অনুপস্থিতি। ২০১৬ সালে বাম-কংগ্রেসের জোটকে পর্যুদস্ত করে যেদিন দ্বিতীয়বারের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে রেড রোডে জমকালো অনুষ্ঠানে শপথ নিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, সেদিনের সেই অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন না অভিষেক। তাঁর সেই অনুপস্থিতিতে জলঘোলা হয়েছিল যথেষ্টই। দানা বেঁধেছিল অনেক জল্পনা। শুধুই অভিষেকের গরহাজির থাকাই নয়, সেদিন কলকাতা শহর, বিশেষত রেড রোডের আশপাশ মুড়ে গিয়েছিল তাঁর ছবি সম্বলিত ‘ম্যাচ উইনার’ পোস্টারে। শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানের আগের দিন অভিষেকের হেঁয়ালিভরা টুইট আর তার পরের দিনের এই ছবি, স্বভাবতই জন্ম দিয়েছিল নতুন বিতর্কের।
পরবর্তী পাঁচ বছরে যেমন গঙ্গা দিয়ে অনেক জল গড়িয়েছে, তেমনই রাজনীতিক হিসেবেও অনেক পরিণত হয়ে উঠেছেন ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ। এবারের নির্বাচনে সেই ছাপও তিনি রেখেছেন যথেষ্ট নিপুণতার সঙ্গে৷ রাজভবনে এদিনের শপথ অনুষ্ঠানে বর্ষীয়ান রাজনীতিকদের মাঝেও তাঁর বাড়তি গুরুত্বপ্রাপ্তি সম্ভবত সেই কৃতিত্বেরই স্বীকৃতি৷ মুখ্যমন্ত্রীকে শপথবাক্য পাঠ করানোর পর মঞ্চ থেকে নেমে এসে অতিথিদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করার পর্বে সাংসদ অভিষেকের সঙ্গে বেশ কয়েক মিনিট কথা বলেন রাজ্যপাল৷ জড়িয়ে ধরেন তাঁর হাত৷ সৌজন্য বিনিময়ের পাশাপাশি দু’জনকেই দেখা যায় হাসিমুখে পরস্পরের সঙ্গে কথা বলতে৷ এদিনের অনুষ্ঠানের আর একটি তাৎপর্যপূর্ণ ছবি হল, মমতা ও অভিষেকের পর তৃণমূলের জয়ে যাঁর সবচেয়ে বেশি অবদান বলে মনে করা হচ্ছে, সেই প্রশান্ত কিশোরের শপথ অনুষ্ঠানে সামনের সারিতেই উপস্থিত থাকা এবং তাঁর সঙ্গে আলাপচারিতাতেও রাজ্যপালের বাড়তি কিছুটা সময় বরাদ্দ করা৷