কলকাতা: ঠিকই দেখছেন। ববি হাকিম বা সপার্ষদরা পিছনে। ই-স্কুটির চালকের সিটে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ব্যালেন্স রাখতে পারছেন না। টলোমলো করে গোত্তা খাচ্ছে ই-স্কুটি। তবু তিনি অনড়। তবু তিনি জেদি। যে অনড় মনোভাবে কড়া শাসনে চালান রাজ্য, যে মনোভাবে বিরোধীদের এককাট্টা লড়াইকে প্রতিহত করে এগিয়ে যাওয়ার ডাক দেন, সেই হার না মানা মনোভাবে তিনি ই-স্কুটির হ্যান্ডেল হাতে।
নবান্ন থেকে দ্বিতীয় হুগলি সেতুর রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে পড়েছেন পথ চলতি মানুষ। যাঁকে নড়বড়ে করতে পারেনি প্রবল প্রতিপক্ষ, তিনিই কি না একটা সামান্য ই-স্কুটিকে বাগে আনতে পারবেন না? তাও কি হয়। অতএব, ঠিকঠাক ব্যালেন্স না পেলেও স্কুটি চালালেন তিনি। আর কালীঘাট থেকে নবান্ন আসার যময় যাঁর স্কুটির পিছনে চেপে এদিন এসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী, সেই ফিরহাদ হাকিম সাহায্য করলেন ই-স্কুটি চালানোর এ বি সিডি শেখাতে। রাস্তার ধারে জড়ো হয়ে যাওয়া জনতা অবশ্য ততক্ষণে অন্য মেজাজে। কেউ ভাবছেন, সাইকেল চালানোর পাঠ নেওয়া থাকলে, ই-স্কুটি হ্যান্ডেল করা ইজি হত। কেউ আবার স্যালুট করছেন, তাঁর শেখার ইচ্ছাকে। অনেকে আবার নিজেদের মধ্যে কাটলেন টিপ্পনিও। ‘এভাবেই টলোমলো তৃণমূলকে ঠিক সামলে নেবেন নেত্রী।’ তবে পারিষদদের তো বটেই, গলদঘর্ম অবস্থা হয়েছিল নিরাপত্তারক্ষাদের।
স্কুটির ব্যালেন্স যতবার টাল খেয়েছে, তাঁরা ছুটে দিয়ে গাড়ির স্টেপনি ধরে সামলেছেন। মুখ্যমন্ত্রী তখন যেন একেবারে বাধ্য ছাত্রী। শিক্ষানবিশ। পরিস্থিতিতে পড়ে ছাত্র রাজনীতি থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিত্ব, মুখ্যমন্ত্রীর গুরুদায়িত্বর কাজও শিখেছেন যত্নভরে। তিনিই তো বলেন, মানুষের জীবনে শেখার শেষ নেই, শিখতে চান আজীবনকাল। সেটা যে শুধু বক্তৃতাতে বলেন না, বৃহস্পতিবার নবান্ন থেকে বেরিয়ে দেখিয়েও দিলেন।
মুখ্যমন্ত্রী স্কুটি শিখছেন। খানিকক্ষণ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল দ্বিতীয় হুগলি সেতুর যান চলাচল। সে কথা খেয়াল আসতেই তিনি স্কুটি থেকে নেমে ফের চালকের আসন ছেড়ে দেন ফিরহাদ হাকিমকে। ততক্ষণে মুখ্যমন্ত্রীর স্কুটি চালানো শেখার ছবি ভাইরাল। ফের রবীন্দ্রসদনের কাছে পৌঁছে ফিরহাদ হাকিমকে ফের চালকের আসন থেকে নামিয়ে স্কুটির হ্যান্ডেল ধরেন মমতা। এবার যেন অনেকটা সড়গড়। একা নিজে কিছুটা চালানও। বন্ধ করে দেওয়া হয় রাস্তা। যানজটে বিপাকে পড়লেও রাস্তায় বেরনো মানুষ কিন্তু বিরক্ত হননি। কারণ, মুখ্যমন্ত্রীর নানা কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি স্কুটি চালানোর এই দৃশ্য দেখার সুযোগ তো আর বারবার আসবে না। বুধবার রাতেই যখন ঠিক হয়েছিল ব্যাটারি চালিত স্কুটিতে চড়ে মুখ্যমন্ত্রী নবান্নে যাবেন, এক বন্ধু স্কুটিটি দিয়ে যান ফিরহাদ হাকিমকে। আর রাতেই স্কুটির পিছনে স্ত্রীকে বসিয়ে ট্রায়ালের কাজও সেরে রেখেন মন্ত্রী ফিরহাদ। বৃহস্পতিবার দফতরে যাওয়ার তাড়া থাকায় ফিরহাদের স্কুটির পিছনে বসেই নবান্নে পৌঁছন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু তিনি যে সবসময় লিডিং ফ্রম দ্য ফ্রন্টে বিশ্বাসী। তাই কাজ সেরে বাড়ি ফেরার পথে তিনি বসলেন চালকের সিটে। যেভাবে সামনে থেকে দীর্ঘ লড়াই করে ২০১১ সালে বসেছিলেন বাংলার মসনদে।