কলকাতা: রাজ্যে তখন বাম আমল৷ তার মাঝেই পুরনিগমে ক্ষমতায় এসেছিল তৃণমূল কংগ্রেস৷ মেয়র হন সুব্রত মুখোপাধ্যায়৷ কিন্তু রাজনীতির স্রোতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে ক্রমশ দূরত্ব বাড়তে থাকে সুব্রতর৷ পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌছয় যে মুখ দেখাদেখি বন্ধ হয়ে যায়৷ বন্ধ হয় মমতার বাড়িতে তাঁর যাওয়া আসা৷ এক সময় কথাও বন্ধ হয়৷ সেই সময় সুব্রত বলেছিলেন, ‘আমি যদি কলকাতার মেয়র হতে না পারি, তাহলে অন্য কেউ হতে পারবেন না৷’ পরে সেই অঙ্ক মিলিয়েও দিয়েছিলেন তিনি৷
আরও পড়ুন- রাজ্যের কনিষ্ঠ মন্ত্রী হয়ে উত্থান, এসেছে পরাজয়ও, সুব্রত প্রয়াণে এক সুবর্ণ অধ্যায়ের অবসান
২০০৫ সাল৷ পুর ভোটে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রার্থী হন শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়৷ অন্যদিকে, নিজে পৃথক মঞ্চ গড়ে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বেঁধে লড়াইয়ে নামেন সুব্রত৷ প্রচারে নেমে মমতা বলেছিলেন, ‘‘‘শোভনদেবের হেরে যাওয়া মানে আমার পরাজয়৷ এই অঞ্চলের শুভবুদ্ধিসম্পন্ন নাগরিকদের কাছে আমার অনুরোধ, বিশ্বাসঘাতককে ভোট দেবেন না। মীরজাফরকে ভোট দেবেন না।’’ পালটা সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের হুঙ্কার, ‘‘যিনি কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূল কংগ্রেস গড়লেন, তিনি হলেন সিরাজউদৌল্লা। আর আমি হয়ে গেলাম মীরজাফর!’ সুব্রতর বিরুদ্ধে প্রচারে কোনও কোনও খামতি রাখেননি মমতা৷ কিন্তু ততক্ষণে কলকাতার অন্যতম সেরা মেয়র হিসেবে উঠে এসেছেন সুব্রত৷ ওই লড়াইয়ে শেষপর্যন্ত সুব্রতই জয়ী হন৷ ‘পরাজিত’ হন মমতা৷
পুর ভোটে ফলাফলের দিন গণনা তখন চলছে৷ শোভনদেব বুঝে যান, তিনি হারতে চলেছেন। তাই গণনা শেষের আগেই চলে গিয়েছিলেন তিনি। শোভনদেবের পরাজয়ের সঙ্গে বকলমে সেদিন হার হয়েছিল মমতার। সেই মমতাই বৃহস্পতিবার সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের প্রয়াণে বলেন, ‘জীবনে অনেক দুর্যোগ এসেছে। কিন্তু সুব্রতদার মৃত্যুটা আমার কাছে ভীষণ বড় দুর্যোগ। সুব্রতদা ছিলেন পার্টি অন্ত প্রাণ৷ তাঁর মতো এত হাসিখুশি মানুষ, এত কর্মঠ মানুষ আর হবে কিনা, সন্দেহ৷ গোয়া থেকে ফিরেও হাসপাতালে গিয়েছি। আমার সঙ্গে কথা বলল, হাসল৷ কাল ছুটি পাওয়ার কথা ছিল তাঁর৷ তারমধ্যে এত বড় হার্ট অ্যাটাক হয়ে গেল।’