নিজে গিয়েও রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে পারলেন না খোদ মদন! তাহলে বাকিদের কি হবে?

নিজে গিয়েও রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে পারলেন না খোদ মদন! তাহলে বাকিদের কি হবে?

নিজস্ব প্রতিনিধি: রাজ্যের শ্রেষ্ঠ সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসা পরিষেবা নিয়ে সরব হলেন শাসকদলেরই এক হেভিওয়েট বিধায়ক! যে ঘটনা ঘিরে শোরগোল পড়ে গিয়েছে রাজ্যজুড়ে। তৃণমূল বিধায়ক তথা রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী মদন মিত্র সরব হয়েছেন রাজ্যের সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল এসএসকেএম-এর বিরুদ্ধে। সরকারি ক্ষেত্রে এই হাসপাতালের চিকিৎসাকেই শ্রেষ্ঠ ধরা হয়। কিন্তু মদনের অভিযোগ, দালাল রাজ চলছে এসএসকেএম-এ। টাকা না দিলে বেড পাওয়া যায় না। এভাবেই এখানকার চিকিৎসা পরিষেবা নিয়ে সোচ্চার হয়েছেন তিনি। শুধু তাই নয়, এটা বামফ্রন্ট সরকারের অমল হলে তিনি এক মিনিটের মধ্যে রোগী ভর্তি করিয়ে দিতেন পারতেন বলেও দাবি করেছেন মদন। যেভাবে শাসক দলের এই বিধায়ক রাজ্যের সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসা পরিষেবা নিয়ে এমন বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন, তাতে বেজায় অস্বস্তিতে পড়েছে রাজ্য সরকার। তড়িঘড়ি শনিবার সকালেই এসএসকেএম কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করেছেন। সেখানে মদনের অভিযোগ উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

কেন হঠাৎ এমন কথা বললেন মদন? এসএসকেএম হাসপাতালে ল্যাব টেকনিশিয়ান পদে কর্মরত শুভদীপ পাল শুক্রবার বাইক দুর্ঘটনায় আহত হন। এরপর তাঁকে এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি করতে নিয়ে যান খোদ মদন মিত্র। কিন্তু মদনের অভিযোগ সেখানে নিয়ে যাওয়ার পর প্রায় ছয় ঘণ্টা ধরে অ্যাম্বুলেন্সেই শুভদীপকে রেখে দিতে হয়। একটা সময় হাসপাতালের এবং পুলিশের সঙ্গে বসসায় জড়িয়ে পড়েন মদন। বিষয়টি নিয়ে স্বাস্থ্যসচিব এবং রাজ্যের স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যকে জানিয়েও লাভ হয়নি বলে জানিয়েছেন মদন। এরপরই তিনি এসএসকেএম হাসপাতাল বয়কটের দাবি করেন। ক্ষুব্ধ মদন বলেন,”ল্যাব টেকনিশিয়ানের যদি এই অবস্থা হয় তবে সাধারণ মানুষের কি হবে?” এরপরই তিনি বিস্ফোরক অভিযোগ করে বলেন এই হাসপাতালে দালাল রাজ চলছে। তাই টাকা না দিলে রোগী ভর্তি করা যাবে না। কামারহাটির তৃণমূল বিধায়ক বলেন,” টাকার খেলা চলছে। টাকা দিলে তবেই স্বাস্থ্য পরিষেবা পাওয়া যায়। ট্রমা কেয়ার তৈরি হয়েছে জনগণের জন্য। কোনও দাদা, বাবা বা অন্য কারও জন্য নয়। চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য আমাকে বলেন, আমায় তো বলছ, কিন্তু কাউকে তো পাবো না। পাবো না মানে! ট্রমা কেয়ার তো এটা। চব্বিশ ঘন্টা পরিষেবা দেওয়ার কথা। ডিরেক্টর এবং এমও (মেডিক্যাল অফিসার) কেউ ফোন ধরেন না। স্বাস্থ্যমন্ত্রীও জানান কাউকে ধরা যাবে না, রাত হয়ে গিয়েছে। আমি মদন মিত্র। এটা সিপিএমের আমল হলে এক মিনিট লাগত ভর্তি করতে৷”

মদন আজ যে অভিযোগ করছেন তা নিয়মিত শোনা যায় বিভিন্ন হাসপাতালে গেলেই। শাসকদলের বিধায়ক নিজে রোগী নিয়ে গেলেও তাঁর চিকিৎসা হয়নি বলে অভিযোগ। তাই সাধারণ গরিব মানুষের প্রশ্ন, তাঁদের তাহলে কি হবে? বিভিন্ন হাসপাতালে গেলেই দেখা যায় শ’য়ে শ’য়ে মানুষ চারদিকে বসে রয়েছেন। একটা বেডের জন্য চলে হাহাকার। এছাড়া চিকিৎসকরা বিভিন্ন পরীক্ষা করতে দিলে সেগুলি সরকারি খরচে করতে গেলে অনেক দেরিতে তারিখ পাওয়া যায় বলে অভিযোগ। এর পাশাপাশি হাসপাতালগুলির ‘রেফার রোগ’ তো রয়েছেই। ক্রিটিকাল রোগীদের ফেরানো চলবে না, এই নির্দেশ বহুবার দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু সে কথা বহু ক্ষেত্রে মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ। তাই মদন মিত্র যে প্রশ্নগুলি তুলেছেন তার যথেষ্ট  সারবত্তা আছে বলে রোগীদের বড় অংশ মনে করছেন। এখন একটাই প্রশ্ন, এই সমস্যার সমাধান হবে কীভাবে? তাই মদন মিত্র যে সমস্ত অভিযোগ তুলেছেন তা রাজ্যের স্বাস্থ্যক্ষেত্রকে যথেষ্ট নাড়া দিয়ে গেল বলেই ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

2 × 4 =