বি.এ-এম.এ ডিগ্রি কাঁধে বাঁশ কাটছে লোধা-শবর শিক্ষিত যুবরা, মূল বিক্রি করেই দিনযাপন তাঁদের

বি.এ-এম.এ ডিগ্রি কাঁধে বাঁশ কাটছে লোধা-শবর শিক্ষিত যুবরা, মূল বিক্রি করেই দিনযাপন তাঁদের

কলকাতা:  একটা সময় ছিল যখন সামাজিক জনজীবন থেকে অনেকটাই পিছিয়ে ছিল লোধা-শবর জনজাতির মানুষগুলো৷ নদীর তীরবর্তী এলাকায় ছিল তাঁদের বাস৷ গাছের পাতা, শাকপাতা, গুগলি, নদীর মাছ খেয়ে দিন কাটত তাঁদের৷ তবে এখন পরিস্থিতি অনেকটাই পাল্টেছে৷ তাঁদের জীবনধারায় বদল এসেছে৷ যত দিন যাচ্ছে তত যত উন্নত হচ্ছে লোধা-শবররা। তৃণমূল জমানায় তাঁরা অনেকটাই সমাজের মূলস্রোতে ফিরেছে৷ তাঁদের মাথা গোঁজার ঘর হয়েছে, জীবন-জীবিকা, খাদ্যাভ্যাসে বদল এসেছে। স্কুল, কলেজ এমনকী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডিও পার করছে লোধা-শবর জনজাতির ছেলেমেয়েরা। কিন্তু ওইটুকুই! 

আরও পড়ুন- SSC দুর্নীতি মামলায় আর্থিক লেনদেনের তদন্তে ED? নজরে বহু প্রভাবশালী

লোধা-শহররা উচ্চ শিক্ষিত হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু মেলেনি সরকারি চাকরি৷ ফলে সংসার চালাতে আজও বাঁশ কাটছে তাঁরা৷ গাছের মূল বিক্রি করে চলছে সংসার। আর এই পরিস্থিতির মধ্যে পড়ে পরবর্তী প্রজন্মকে পড়াশোনায় উৎসাহ জোগানোর আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন লোধা-শবর সম্প্রদায়ের শিক্ষিত বেকার যুবকেরা। তবে তাঁদের আশ্বস্ত করেছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ সেই আশ্বাসেই বৃহস্পতিবার লোধা-শবর সম্প্রদায়ের শিক্ষিত যুবরা জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারের সঙ্গে দেখা করতে যান।

পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশিয়াড়ি ব্লকে গেলে দেখা মিলবে অনেক শিক্ষিত শবরের৷ বছর ৩২-এর হাবু প্রামাণিক, বছর ৪১-এর অনিল কোটাল দু’জনেরই স্নাতকোত্তর ডিগ্রি রয়েছে৷ কিন্তু কেউই সরকারি চাকরি পাননি। ঠিক তেমনই এম.এ পাশ করেও চাকরি পাননি ডেবরার বাপন নায়েক৷ দাঁতন, নারায়ণগড়, শালবনীতেও ঘরে ঘরে শিক্ষিত বেকার লোধা যুবকরা। অর্থাভাবে পেটের দায়ে ফিরতে হচ্ছে পূর্বপুরুষদের পেশায়। কখনও বাঁশ কেটে, কখনও দূরে বাজারে গাছের মূল বিক্রি করে চলছে পেট। এই পরিস্থিতির মধ্যে নতুন প্রজন্মকে কী ভাবে পড়াশোনার জন্য উৎসাহ দেবেন তাঁরা? হাবু প্রামাণিক বলেন, “কী বার্তা দেব?  এত পড়াশোনা শিখে নিজেরাই চাকরি জোটাতে পারিনি৷’’ তাহলে প্রথা ভেঙে উচ্চশিক্ষা করে কী লাভ? প্রশ্ন উঠেছে শিক্ষিত লোধা-শবরদের মধ্যে৷ 

তবে এই বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রীর কানে পৌঁছেছে৷ সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রীর প্রশাসনিক বৈঠকে লোধা-শবর কল্যাণ সমিতির সম্পাদক বলাই নায়েক জানান, জেলায় ২৯ জন উচ্চশিক্ষিত ছেলে মেয়ে রয়েছে৷ তাঁদের কেউ স্নাতক স্তরে পড়াশোনা করছেন,  কেউ স্নাতক পাশ করে গিয়েছেন। স্নাতোকত্তরও রয়েছে৷ তাঁদের জন্য যদি চাকরির ব্যবস্থা করা হয়। বিষয়টি জানতে পেরেই জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারকে এই বিষয়ে খোঁজখবর করার নির্দেশ দেন তিনি৷ পাশাপাশি লোধা-শবর সম্প্রদায়ের সকলের জন্য স্বাস্থ্য সাথী কার্ডের ব্যবস্থা করা, বিনামূল্যে কোচিং সেন্টার খোলা সহ একাধিক প্রকল্পের ঘোষণা করেছেন তিনি। সেইসঙ্গে কেন্দুপাতা তোলার পারিশ্রমিকও বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে৷