কলকাতা: করোনা পরিস্থিতির জেরে লকডাউন আর ঘূর্ণিঝড় আম্পানের তাণ্ডবে দিশেহারা বাংলার সুন্দরবন৷ বেঁচে থাকার লড়াই চালাতে বেড়েছে প্রাকৃতিক সম্পদের উপর নির্ভরশীলতা৷ আর এই লড়াই চালাতে গিয়েই বেঁধেছে বাঘের সঙ্গে সঙ্ঘাত৷ চলতি বছর বাঘের আক্রমণে সুন্দরবনে নিহত মানুষের সংখ্যা সেদিকেই ইঙ্গিত করে৷
অনেকে অবশ্য এই তথ্য মানতে নারাজ৷ তবে কেউ কেউ বলছেন এই অঞ্চলের উপর যখনই কোনও বিপর্যয় নেমে এসেছে, তখনই এহেন ঘটনা লক্ষ্য করা গিয়েছে৷ সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী চলতি বছর গত চার মাসে ম্যানগ্রোভ অঞ্চলে বাঘের আক্রমণে ১৫ জন মৎস্যজীবীর মৃত্যু হয়েছে৷ যা ২০১৯ সালের চেয়ে ২ জন বেশি৷ খাতায় কলমে এই তথ্য দেওয়া হলেও, বাস্তবে এই সংখ্যা অনেকটাই বেশি বলে স্থানীয় মানুষের দাবি৷
আরও পড়ুন- প্রাক-প্রাথমিকের বর্ণবিদ্বেষী পাঠ, হাইকোর্টের জয় পেলেন সেই শিক্ষিকা
কয়েক সপ্তাহ আগের ঘটনা৷ দুই সঙ্গীকে নিয়ে পিরাখার জঙ্গলে গিয়েছিলেন বালি দ্বীপের বাসিন্দা বছর চল্লিশের হরিপদ মণ্ডল৷ সেখানে বাঘের মুখে পড়েন তিনি৷ বাঘের আক্রমণে মৃত্যু হয় তাঁর৷ আনলক ওয়ান শুরু হওয়ার পর ভিন রাজ্য থেকে সুন্দরবনে ফিরেছিলেন কর্মহীন হরিপদবাবু৷ গত ২০ মে দক্ষিণবঙ্গে আছড়ে পড়ে অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় আম্পান৷ তাৎপর্যপূর্ণভাবে, এর পরেই ঘটেছে চলতি বছরের অর্ধেকেরও বেশি ঘটনা৷ দিন কয়েক আগে ঝিলা জঙ্গলে একইভাবে বাঘের হাতে প্রাণ হারিয়েছেন এক পরিযায়ী শ্রমিক৷ লকডাউনে কাজ হারানোর পর কিছুদিন আগেই গ্রামে ফিরেছিলেন তিনি৷
আরও পড়ুন- পিছিয়ে গেল ভোটার কার্ড সংশোধনের কাজ, আবার শুরু কবে?
করোনা প্যান্ডেমিক এবং ক্রমবর্ধমান বিরূপ পরিস্থিতির মধ্যে স্থানীয় এনজিও সোসাইটি ফর হেরিটিজ অ্যান্ড ইকোলজিক্যাল রিসার্চেস (SHER) ম্যানগ্রোভ এলাকায় ১০০ জন লাইসেন্সপ্রাপ্ত মৎস্যজীবীকে চিহ্নিত করে তাঁদের হাতে তুলে পোর্টেবল এএলপিজি সিলিন্ডার তুলে দেয়৷ SHER-এর সদস্য জয়দীপ কুণ্ডু বলেন, ‘‘বোট সহ বন দফতরে যে সকল মৎস্যজীবীর নাম রেজিস্টার রয়েছে, তাঁদের চিহ্নিত করা হয়েছে৷ এই মৎস্যজীবীরা যখন মাছ ধরতে যান, তখন জঙ্গলেই রান্না করতে হয় তাঁদের৷ মাটির উনুনে রান্না করার জন্য তাঁদের জঙ্গলের ভিতর থেকে কাঠ সংগ্রহ করতে যেতে হয়৷ জঙ্গলের ভিতরে কাঠ সংগ্রহ করতে গিয়ে বারবার বাঘের মুখোমুখি হতে হয় তাঁদের৷ জঙ্গলে প্রবেশ করলে মৃত্যু এক প্রকার নিশ্চিত৷ সেকারণেই তাঁদের জন্য সিলিন্ডারের বন্দোবস্ত করা হয়েছে৷’’