পরিকল্পনা মতো লোকাল ট্রেন চললেই কি নিয়মনীতি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে?

পরিকল্পনা মতো লোকাল ট্রেন চললেই কি নিয়মনীতি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে?

 

তপন মল্লিক চৌধুরী : একে একে খুলে গিয়েছে সমস্ত অফিস কাছাড়ি, দোকান, বাজার। চলছে বাস, ট্যাক্সি, লঞ্চ, অটো। বিশেষ ট্রেন ছাড়া চলছে না শুধু লোকাল ট্রেন। মেট্রো পরিষেবা চালু থাকলেও অ্যাপ অধিকাংশ মানুষ সঠিকভাবে ব্যবহার না করতে পারায় সেও নাগালের বাইরে। সব কিছুই যেখানে খোলা৷ সেখানে তো আর মানুষ ঘরে বসে থাকতে পারে না। তাকে বেরতেই হবে। তাই মানুষকে বেরতেই হচ্ছে।

কিন্তু পেটের টানে বাইরে বেরিয়ে মানুষকে নাজেহাল হতে হচ্ছে গণপরিবহন অব্যবস্থার জন্য। মাঝে মধ্যেই বাড়ছে সংক্রমণ ও মৃত্যু। এই অবস্থায় লোকাল ট্রেন চালু হলে বিপদ যে পরদের মতো হুহু করে উপরের দিকে চড়বে সে তো জানা কথা। কিন্তু মানুষকে অফিস কাছাড়ি যেতে হবে, পেট চালাতে হবে, অথচ যাতায়াত ব্যবস্থাই যদি অর্ধেকের বেশি বন্ধ রাখা হয় তাহলে নাস্তানাবুদ হওয়া ছাড়া গত্যন্তর থাকে না।

প্রতিদিন হাওড়া, শিয়ালদহ ও খড়গপুর পথে প্রায় ৩০ লক্ষ যাত্রী যাতায়াত করেন।এদের মধ্যে বেশিরভাহটাই আসা যাওয়া করেন রুটি রুজির কারণে।রুটি ভাত ওয়ার্ক ফ্রম হোম দিয়ে হয় না। কারণ বেশিরভাগেরাই সাধারণ কর্মচারী। ট্রেন চলছে না মানে এদের ঘরে হাঁড়িও চড়ছে না। কিন্তু লোকাল ট্রেন চলতে শুরু করলে এত যাত্রী আর সীমিত ট্রেন দিয়ে সতর্কতা কিভাবে কতটা পালন করা যাবে সেটা একটা বড় প্রশ্ন। যা কেউই এড়িয়ে যেতে পারেন না। অন্যদিকে ছোট ছোট প্রাইভেট ফার্মের সাধারণ কর্মী,ছোটখাট ব্যবসায়ী, দোকান কর্মচারীরা তো পুরোপুরি লোকাল ট্রেনের উপরেই নির্ভরশীল। তাঁদের কি হবে?

অবশেষে নবান্ন ও রেলকর্তাদের বৈঠক এবং আলোচনা পর্বের শেষে লোকাল ট্রেন চালানোর সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণেরও বেশি বেড়ে গেল। যেখানে রেলকর্তারা বলেছিলেন, প্রাথমিকভাবে ১০-১৫% ট্রেন দিয়ে পরিষেবা শুরু করে পরবর্তীতে বাড়িয়ে ২৫% করা হবে। কিন্তু পরে নবান্নের বৈঠকে প্রশাসনিক শীর্ষ কর্তা ও রেলকর্তারা বললেন শুরুতেই সকাল ও সন্ধ্যায় ৩০-৪০% ট্রেন চালাতেই হবে। কারণ ১০-১৫% ট্রেন চালিয়ে ভিড় এড়ানো যাবে না। যাত্রী হুড়োহুড়ি বাড়বে। তাতে স্বাস্থ্যবিধি শিকেয় উঠবে। ঠিক হয়েছে সকাল ও সন্ধ্যায় প্রায় ৪০% ট্রেন চলবে।

এমনিতে শিয়ালদা শাখায় চলত ৯১৫টি ও হাওড়া শাখায় চলত ৪০৭টি ট্রেন। কোথায় কেমন যাত্রীদের ভিড় হচ্ছে, তা বুঝে ট্রেন চালানো হবে। এছাড়া স্টেশনে যাত্রীদের ঢোকা-বেরনোর পথ থেকেযাত্রী সংখ্যার হিসেব রাখা এবং সতর্কতার বিষয়ে আরও কিছু সিধ্যান্ত নেওয়ার কথা বলা হয়েছে।তবে ট্রেনে অর্ধেক যাত্রীর বসে যাওয়া, স্টেশনে দূরত্ব-বিধি মেনে চলা, জীবাণুনাশ করা, প্রত্যেকের থার্মাল স্ক্রিনিংকরার কথা বলেছে রেল ও রাজ্য সরকার। এটাও ঠিক হয়েছে টিকিট ছাড়া কাউকে প্ল্যাটফর্মে ঢুকতে দেওয়া হবে না। এখন হকারদেরও ঢুকতে দেওয়া হবে না।

তা স্বত্বেও প্রশ্ন, অল্প যাত্রী নিয়ে সংখ্যায় অল্প ট্রেন চালালে ভিড় বা অব্যবস্থা ঠেকানো যাবে তো? অনেকেই বলছেন সেটা সম্ভবহবে না। তাদের বক্তব্য এতে হিতে বিপরীত হবারই সম্ভবনা বেশি। হকার বা এমন অনেকেই আছেন যাঁদের জীবিকা রেলের ওপরেই নির্ভর করে, তাঁরা মারা পড়েছেন, আরও মরবেন। কিন্তু কম ট্রেন চালিয়ে কোনও কিছুই নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। করোনা ও লকডাউনের জন্য লোকাল ট্রেন না চলায় সব চেয়ে বেশি বিপদে পড়েছেন রোজের খেটে খাওয়া মানুষ। কারণ ট্রেন না চলায় তাঁরা কাজ হারিয়েছেন, রোজগার বলতে কিছুই নেই।

শুরু থেকেই প্রায় সমস্ত প্রস্তাবেই বলা হয়েছিল সামঞ্জস্য রেখে লোকাল ট্রেন চালানো হোক। কিন্তু সেই সামঞ্জস্যট ঠিক কি? কত সংখ্যক ট্রেন চালালে সেই সামঞ্জস্যতা থাকে? কত সংখ্যক ট্রেন চালালে যাত্রী হুড়োহুড়ি হবে না? এটা কেউ কি দায়িত্ব নিয়ে বলতে পারেন? এই প্রশ্নগুলি কিন্তু এসেই পড়ছে। এল কর্তারা বলেছেন, একটি ট্রেনে ১২০০ যাত্রী বসে যেতে পারে, ৬০০-র বেশি যাত্রীকে কিছুতেই উঠতে দেওয়া যাবেনা। অর্থাৎ যাত্রীদের দাঁড়াতে দেওয়া যাবে না। স্টেশনে ঢোকা বা বেরনোর সময়েই যাত্রী নিয়ন্ত্রণ করা হবে। এরপরও প[রশ্ন থেকে যায় কতদিন? রেল পুলিশের ওপর এসব নিয়ম নীতি পালনের দায়িত্ব দিয়েছে, তাদের ওপরই রেল নির্ভরশীল। আশঙ্কা এখানেই। রেল চলতে শুরু করলে মানুষ রুটি রুজির জন্য আরও বেশি উৎসাহে বাইরে বেরবে, আর সেই সংখ্যাটা এতটাই বেশি যা নিয়ন্ত্রণে রাখাটা সহজ নয়। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

6 − 2 =