নয়াদিল্লি: একই রেল৷ পরিস্থিতিও এক৷ কিন্তু, বাংলাকে বঞ্চিত রেখে মুম্বইয়ে চালু হয়েছে লোকাল ট্রেন পরিষেবা৷ বাংলায় পরিষেবা কবে চালু হবে, তা নিয়ে ধোঁয়াশা খাকলেও করোনা আবহে মুম্বইয়ে সাধারণ যাত্রীদের নিয়ে ছুটছে লোকাল৷ মুম্বইয়ে পরিষেবা স্বাভাবিক হলেও বাংলায় এখনও লোকাল ট্রেন চালুর বিষয়ে নিরুত্তর রেল ও রাজ্য সরকার৷ পুজোর আগে লোকাল ট্রেন চলাচল না করলে জনজীবনে তার বিরাট প্রভাব পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে৷ দিকে দিকে বাড়ছে সাধারণ যাত্রীদের বিদ্রোহ৷ সোনারপুর থেকে বিদ্রোহ ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে৷ আজ সেই বিক্ষোভ ছড়িয়েছে চুঁচুড়ায়৷ যদিও, আজ মুম্বইয়ের বেশ কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে ব্যাহত হচ্ছে লোকাল ট্রেন পরিষেবা৷ চলতি মাসের শুরু থেকেই নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে সাধারণ যাত্রীদের জন্য পরিষেবা চালু করা হয়েছে৷
করোনা আবহে সেই মার্চ থেকে বন্ধ লোকাল ট্রেন পরিষেবা৷ করোনা-কালে ধাপে ধাপে সবকিছু চালু হয়ে গেলেও লোকাল ট্রেনে এখনও রয়েছে লকডাউনের গেরো৷ একদিকে করোনা আহবে প্রভাবিত জীবন, লকডাউনে ক্ষতিগ্রস্ত জীবিকা৷ তবুও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলছে জীবিকা বাঁচানোর লড়াই৷ করোনাকালে আগ্নিমূল্য বাজার, তার উপর দ্বিগুন বাস ভাড়া৷ আগে গন্তব্যে পৌঁছতে যত টাকা খরচ করতে হত সাধারণ যাত্রীদের, আজ সেই পথ যেতে লেগে খবর পড়েছে দ্বিগুন৷ সব মিলিয়ে নেজেহাল আম জনতা৷ আর এই পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে পুজো৷ ফলে, পুজোর আগে লোকাল ট্রেন না চললে পরিস্থিতি যা আরও ভয়ঙ্ককর হয়ে উঠতে পারে, তা বেমালুন জানে রাজ্য ও রেল কর্তৃপক্ষ৷ সাধারণ জনতা সমস্যায় পড়লেও এখনও নিরুত্তর প্রশাসন৷ আর তাতেই বাড়ছে জনতার ক্ষোভ৷ কেননা, বহু মানুষের অন্নসংস্থানের প্রধান মাধ্যম লোকাল ট্রেন৷ সেটাই যদি দীর্ঘ দিন ধরে বন্ধ থাকে, তাহলে কীভাবে চলবে সাধারণের জীবন? সাধারণ যাত্রীদের ক্ষোভ-বিক্ষোভের যথেষ্ট কারণ আছে৷ কিন্তু, তাতে কি? লোকাল ট্রেনের পরিষেবা নিয়ে ‘বিড়ালের গলায় ঘণ্টা’য় আর বাঁধা হয়ে উঠছে না রাজ্য ও রেলের সমন্বয়ের কারণে৷
করোনা মহামারী আবহে রেল কর্মী ও জরুরি কাজে যুক্তদের জন্য ইতিমধ্যেই স্পেশাল ট্রেনের ব্যবস্থা করেছে রেল কর্তৃপক্ষ৷ কিন্তু সেই স্পেশাল ট্রেনে ওঠার দাবি জানিয়ে চুঁচুড়া স্টেশনে এবার বিক্ষোভ দেখালেন স্থানীয় যাত্রীরা৷ রেল লাইনে লোহার রড, গাছের ডাল ফেলে রেল অবরোধ করলেন ক্ষুব্ধ যাত্রীদের একাংশ৷ গতকাল হুগলীর পান্ডুয়া-সহ বিভিন্ন স্টেশনে হয়েছে বিক্ষোভ৷ আজ নতুন করে চুঁচুড়ায় রেল অপরাধের ঘটনায় অতিসক্রিয় হয়ে উঠেছে রেলপুলিশ৷ অন্যদিকে একই দাবি জানিয়ে সোনারপুরে সাধারণ যাত্রীদের একাংশ ইতিমধ্যেই লোকাল ট্রেন ভাঙচুরের চালিয়েছেন৷ সোনারপুর লোকাল ভাঙচুরের পর থেকেই রাজ্যের প্রতিটি লোকাল ট্রেনে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে রেল কর্তৃপক্ষ৷ অবাঞ্চিত যাত্রীদের নামিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে৷ তবে, সাধারণ যাত্রীরা কবে থেকে পরিষেবা পাবেন, তা নিয়ে এখনও কোনও মন্তব্য করতে নারাজ রেল কর্তৃপক্ষ৷ এই নিয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া দেয়নি রাজ্য সরকার৷
গত মার্চ মাসের শেষ সপ্তাহে করোনার কারণে লকডাউনের প্রথম দিন থেকেই বন্ধ রয়েছে কলকাতা শহর ও শহরতলির লোকাল ট্রেন পরিষেবা৷ লকডাইনের পর আনলক-৫ শুরু হলেও এখনও শহর ও শহরতলির লাইফলাইন পুরোপুরি বন্ধ৷ আর তাতেই পুজোর আগে চরম সমস্যায় পড়তে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে৷ গোটা বিষয়টি নিয়ে ঠিক যেমন রেলমন্ত্রক কোনওরকম উদ্যোগ নিচ্ছে না, ঠিক তেমনই কোনও ভূমিকা নিচ্ছে না রাজ্য সরকার৷ যদিও রেলমন্ত্রকের শীর্ষ আধিকারিকেরা জানাচ্ছে, রেল চলাচলের বিষয়টি পুরোপুরি রেল-রাজ্য বৈঠকের উপরই নির্ভর করছে৷ কিন্তু, মুম্বইয়ে পরিষেবা আরও জোরদার হলেও বাংলায় এখনও পরিষেবা চালু করাই গেল না কেন? লোকাল ট্রেন চালু করার বিষয়ে কেন রাজ্য ও রেলের মধ্যে এখনও কোনও বৈঠক হল না? কেন কোনও উদ্যোগ দিচ্ছে না রেল ও রাজ্য সরকার৷ সাধারণ জনতার রুজিরুটির প্রধান মাধ্যমকে কেন্দ্র করেও সংঘাতের রাজনীতি? প্রশ্ন উঠছেই৷