লোকাল ট্রেন আদৌ চালু করা সম্ভব? জবাব রেলবোর্ডের, নিরুত্তর রাজ্য!

লোকাল ট্রেন আদৌ চালু করা সম্ভব? জবাব রেলবোর্ডের, নিরুত্তর রাজ্য!

নয়াদিল্লি: একই রেল৷ পরিস্থিতিও এক৷ কিন্তু, বাংলাকে বঞ্চিত রেখে মুম্বইয়ে চালু হয়েছে লোকাল ট্রেন পরিষেবা৷ বাংলায় পরিষেবা কবে চালু হবে, তা নিয়ে ধোঁয়াশা থাকলেও করোনা আবহে মুম্বইয়ে সাধারণ যাত্রীদের নিয়ে ছুটছে লোকাল৷ মুম্বইয়ে পরিষেবা স্বাভাবিক হলেও বাংলায় এখনও লোকাল ট্রেন চালুর বিষয়ে নিরুত্তর রাজ্য সরকার৷ বাংলায় নতুন করে রেল পরিষেবা চালু করার ইচ্ছে প্রকাশ করে দ্বিতীয় দফায় রাজ্যকে চিঠি পাঠিয়েছে পূর্ব রেল৷ পুজোর আগে লোকাল ট্রেন চলাচলের দাবি জানিয়ে ইতিমধ্যেই সরব হয়েছেন বঙ্গ বিজেপির ২ সাংসদ৷ দ্রুত এবিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি পাঠিয়েছে বাম-কংগ্রেস৷ কিন্তু, রাজ্যের তরফে এখনও কোনও প্রতিক্রিয়া না আসায় গড়াচ্ছে না লোকাল ট্রেনের চাকা৷ লোকাল ট্রেন চালু না হওয়ায় সোনারপুর, হাওড়া, হুগলী-সহ জেলায় জেলায় ছড়িয়েছে পড়েছে বিক্ষোভ৷ দিকে দিকে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়লেও বাংলায় লোকাল ট্রেন চালুর বিষয়ে নয়া অবস্থান জানান রেলবোর্ড৷

টানা প্রায় ৭ মাস বন্ধ লোকাল ট্রেন পরিষেবা৷ বাড়ছে ক্ষোভ৷ রেল যাত্রীদের বড় অংশের মুখে এখন একটাই প্রশ্ন, কবে চলবে লোকাল ট্রেন? এবার উৎসবের আগে সেই প্রশ্নে জাবাব দিল রেলবোর্ডে এক কর্তা৷ সংবাদমাধ্যমে তিনি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, এখনই লোকাল ট্রেন চালু করার সম্ভব নয়৷ অর্থাৎ  বাঙালির প্রাণে উৎসব এবার কাটবে লোকালবিহীন৷

রেল বোর্ডের চেয়ারম্যান ভি কে যাদব বাংলার একটি দৈনিক সংবাদপত্রে জানিয়েছেন, রাজ্যে কবে থেকে লোকাল ট্রেন চলবে, তা এখনই বলা যাচ্ছে না৷ কারণ লোকাল চালানোর আগে বেশ কিছু বিধিনিষেধ মাথায় রাখতে হবে৷ অযথা ভিড় নিয়ন্ত্রণ চ্যালেঞ্জের৷ গোটা পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছে রেলবোর্ড৷  করোনা আবহে রেল চালুর এক্ষেত্রে কেন্দ্র ও রাজ্য সমন্বয় অত্যন্ত জরুরি বলেও মত রেল বোর্ডের চেয়ারম্যানের৷ ফলে, ট্রেন চালু করার আগে রেল ও রাজ্য যৌথ নির্দেশিকা প্রয়োজন বলেও জানিয়েছেন তিনি৷

করোনা ঠেকাতে দেশজোড়া লকডাউন শুরু হয়েছিল মার্চের শেষ সপ্তাহে৷ তখন থেকেই বন্ধ বাংলার লোকাল ট্রেন পরিষেবা৷ প্রায় সাত মাস বন্ধ থাকার পরও লোকাল চালুর বিষয়ে রেলের তরফে দু’বার চিঠি দেওয়া হলেও তার জবাব কিংবা আলোচনায় বসার রাজ্যের হয়ে ওঠেনি৷ ফলে, লোকাল চালু করার বিষয়ে সরকারি স্তরে সমন্বয়ের অভিবাবে দৈনিক নাজেহাল হতে চলেছে আমজনতাকে৷ কেননা, লকডাউনের পরবর্তী আনলকে স্কুল-কলেজ ও লোকাল ট্রেন ছাড়া সমস্ত কিছু চালু হয়ে গিয়েছে৷ সংসদ থেকে সিমেনাহল, উৎসবে ছাড়, রাজনৈতিক মিটিং-মিছিল, হাটবাজার সবই সচল৷ যত আপত্তি কি লোকাল ট্রেনে? প্রশ্ন সাধারণ যাত্রীদের৷

ইতিমধ্যেই রাজ্যের বেশ কিছু জায়গায় লোকাল চালুর দাবিতে যাত্রীবিক্ষোভ হয়েছে৷ যাত্রী বিক্ষোভের আঁচ পেয়ে রেল বোর্ডের চেয়ারম্যান কার্যত বুঝিয়ে দিয়েছেন, ভিড় নিয়ন্ত্রণ এখন সব থেকে বড় চালেঞ্জ৷ ভিড় নিয়ন্ত্রণে সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া না গেলে শহরতলিতে লোকাল চালুর সঙ্কেত নাও পাওয়া যেতে পারে৷ যদিও, গোটা পরিস্থিতি পর্যালোচনায় গত ১৩ অক্টোবর রাজ্যকে চিঠি পাঠিয়েছেন পূর্ব রেলের অ্যাডিশনাল জেনারেল ম্যানেজার অনিত দুলাত৷ কিন্তু, এখনও কোনও প্রতিক্রিয়া দেয়নি রাজ্য সরকার, খবর সূত্রের৷

করোনা আবহে সেই মার্চ থেকে বন্ধ লোকাল ট্রেন পরিষেবা৷  করোনা-কালে ধাপে ধাপে সবকিছু চালু হয়ে গেলেও লোকাল ট্রেনে এখনও রয়েছে লকডাউনের গেরো৷ একদিকে করোনা আহবে প্রভাবিত জীবন, লকডাউনে ক্ষতিগ্রস্ত জীবিকা৷ তবুও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলছে জীবিকা বাঁচানোর লড়াই৷ করোনাকালে আগ্নিমূল্য বাজার, তার উপর দ্বিগুন বাস ভাড়া৷ আগে গন্তব্যে পৌঁছতে যত টাকা খরচ করতে হত সাধারণ যাত্রীদের, আজ সেই পথ যেতে লেগে খবর পড়েছে দ্বিগুন৷ সব মিলিয়ে নেজেহাল আম জনতা৷ আর এই পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে পুজো৷ ফলে, পুজোর আগে লোকাল ট্রেন না চললে পরিস্থিতি যা আরও ভয়ঙ্ককর হয়ে উঠতে পারে, তা বেমালুন জানে রাজ্য ও রেল কর্তৃপক্ষ৷ সাধারণ জনতা সমস্যায় পড়লেও এখনও নিরুত্তর প্রশাসন৷ আর তাতেই বাড়ছে জনতার ক্ষোভ৷ কেননা, বহু মানুষের অন্নসংস্থানের প্রধান মাধ্যম লোকাল ট্রেন৷ সেটাই যদি দীর্ঘ দিন ধরে বন্ধ থাকে, তাহলে কীভাবে চলবে সাধারণের জীবন? সাধারণ যাত্রীদের ক্ষোভ-বিক্ষোভের যথেষ্ট কারণ আছে৷ কিন্তু, তাতে কি? লোকাল ট্রেনের পরিষেবা নিয়ে ‘বিড়ালের গলায় ঘণ্টা’য় আর বাঁধা হয়ে উঠছে না রাজ্য ও রেলের সমন্বয়ের কারণে৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *