কলকাতা: খাস কলকাতা ও সল্টলেক ছাড়াও আরও বেশ কয়েকটি বড় শহর, এমনকী প্রতিবেশী রাজ্যেরও বেশ কিছু ঘনবসতিপূর্ণ শহরের কয়েক কোটি মানুষের জীবন এই মুহূর্তে প্রায় সুতোয় ঝুলছে। শিয়রে দাঁড়িয়ে ভয়ঙ্কর ভূমিকম্প। খড়গপুর আই আই টি-র সাম্প্রতিক এক গবেষণায় উঠে এসেছে এমনই এক ভয়বহ তথ্য। গবেষকদের হুঁশিয়ারি, ভূমিকম্পের তিনটি উত্সস্থলের ঘেরাটোপে রয়েছে এই বিস্তীর্ণ অঞ্চল। যে কোনও সময়ে মাটি কেঁপে উঠতে পারে। রিখটার স্কেলে ৯ মাত্রা পর্যন্ত তীব্রতার ভূমিকম্প হতে পারে! এবং সেক্ষেত্রে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল, জাদুঘর, বিড়লা তারামণ্ডল ও কলকাতার বহু আকাশচুম্বী আবাসন ধূলিসাৎ হয়ে যেতে পারে! তছনছ হয়ে যাবে আসানসোল, শিলিগুড়ি ধানবাদ, পাটনা।
সম্প্রতি এই আশঙ্কার কথা শুনিয়েছেন, খড়গপুর আইআইটি-র জিওলজি ও জিওফিজিক্সের প্রধান, তথা বিশিষ্ট ভূ-পদার্থবিজ্ঞানী অধ্যাপক শংকর কুমার নাথ। তাঁর ব্যাখ্যা, পশ্চিমবঙ্গের অবস্থান ভূমিকম্পের অন্যতম উৎস্থলের বঙ্গোপসাগরের একেবারেই কাছে। সাড়ে তিনশো কিলোমিটারের আশেপাশে। উত্তর-পূর্ব ভারতের ভূকম্পের উৎস থেকেও মাত্র সাড়ে ছ-শো কিলোমিটার। এমনকী, তীব্র ভূমিকম্পের আতুঁড়ঘর হিমালয়েরও খুব কাছেই অবস্থান পশ্চিমবঙ্গের। তাই, যদি কোনও একটি উৎস থেকেও ভূমিকম্প হয়, তাহলে পশ্চিমবঙ্গে তার কম-বেশি প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বস্তুত ৬.৮ রিখটার থেকে ৯.২ মাত্রার কাঁপুনি পশ্চিমবঙ্গবাসীর শিয়রে দাঁড়িয়ে রয়েছে বলে আশঙ্কা করেছেন শংকর নাথ। বিশেষজ্ঞদের হিসেবে, এই মাত্রায় ভূমিকম্প হলে কলকাতা-সহ রাজ্যের বেশ কটি শহর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়বে। টাকার অঙ্কে যা প্রায় তেইশ হাজার কোটি! শংকরবাবুর বক্তব্য, সময়মতো প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিলে ও সতর্কতা অবলম্বন করলে ভূমিকম্প এড়ানো না গেলেও ক্ষয়ক্ষতি অনেকটা কমানো যেতে পারে। সে জন্য সর্বাগ্রে জরুরি সচেতনতা। শংকর নাথের পরামর্শ, সমস্ত বাড়ি বানানো দরকার এমন প্রযুক্তিতে, যা ভূমিকম্পের আঘাত সইতে সক্ষম। একতলা হোক বা একশোতলা, সব বাড়ি সিসমিক রেট্রোফট মাইক্রোজোনিং কোডের মাধ্যমে তৈরি করতে হবে।