কলকাতা: দল হেরে গিয়েছে। শুধু হারেনি, বাংলা বিধানসভার থেকে কার্যত নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে। ১৯৪৭ সালের পর এই প্রথম বাম-কংগ্রেসহীন বাংলার বিধানসভার গঠন হতে চলেছে। কংগ্রেস ও সদ্য গঠিত হওয়া আইএসএফ-এর সঙ্গে হাত মিলিয়ে সংযুক্ত মোর্চা গঠন করেও রাজ্যের মানুষের মনে জায়গা করে নিতে পারেননি বামপন্থীরা। এই নিয়েই এবার একের পর এক বিস্ফোরক দাবি করলেন দমদম উত্তর কেন্দ্রের সিপিআইএম প্রার্থী তন্ময় ভট্টাচার্য। বললেন, “গোটা দলের ব্যবস্থাপনা একেবারে উলঙ্গ হয়ে গিয়েছে। এর দায় কে নেবে?”
একুশের নির্বাচনে বিজেপিকে ধরাশায়ী করে বিপুল আসন নিয়ে তৃতীয়বারের জন্য সরকার গঠন করতে চলেছে তৃণমূল কংগ্রেস। কিন্তু এবারের নির্বাচনে এই প্রথম বাংলা বিধানসভা থেকে কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল সিপিআইএম ও কংগ্রেস। এই বিষয়ে দলের অভ্যন্তরীণ ফাঁকফোকর নিয়ে ক্ষুব্দ সিপিআইএম নেতা তন্ময় ভট্টাচার্য একগুচ্ছ বিস্ফোরক দাবি করলেন। বললেন, “সম্ভবত গত লোকসভার নির্বাচন থেকেও দুই শতাংশ কম ভোট পেয়েছে সিপিআইএম। এত বড় একটা বিপর্যয়ের দায় কেউ নেবেন না এটা উচিত হবে না। যারা উপর থেকে নির্দেশ দেন তাদেরকেই এই বিপর্যয়ের দায় নিতে হবে।” তিনি আরও জানিয়েছেন, “করোনা পরিস্থিতিতে এই ভোট, লকডাউনে নাজেহাল মানুষের বিজেপি বিরোধী ভোট। মানুষ তৃণমূল কংগ্রেসকেই বিজেপি বিরোধী শক্তি হিসেবে মনে করেছে। গত কয়েক মাস ধরে সংবাদমাধ্যমগুলোতে বিজেপির সাম্প্রদায়িকতা প্রচার হয়েছে আর তৃণমূলের দানের রাজনীতির প্রচার হয়েছে। এই দুটোই সফলভাবে তৃণমূলের পক্ষে গিয়েছে।”
সিপিআইএমেরই একদল নেতাদের বিরুদ্ধে দাবি করে তন্ময় ভট্টাচার্য জানালেন, “কেউ কেউ অহংকার করে বক্তৃতা দেন, ‘আমরা ভোটের রাজনীতি করি না, আমি রাস্তায় থাকি’। যারা ভোটের রাজনীতি করেন মানুষ তাদেরই বেছে নিয়েছেন। আর যারা রাস্তায় থাকতে পছন্দ করেন মানুষ তাদের হাতে ফুঁটো বাটি ধরিয়ে দিয়েছে। আমাদের দলের অনেক ‘শৃংখলাবদ্ধ’ নেতারা হয়তো বলতে পারেন দলের কর্মী হিসেবে এগুলো দলের অন্দরেই আলোচনা করা উচিত। প্রকাশ্যে নয়। যেখানে গোটা ব্যবস্থাপনাই উলঙ্গ হয়ে গেছে সেখানে কিসের ভিতর আর কিসের বাইরে?”
তার আরও দাবি, “বামপন্থী প্রার্থীরা কোনোরকম অজুহাত দেবেন না। এই নির্বাচনে রাজ্যের সাধারণ মানুষ বিপুলভাবে বামপন্থীদের প্রত্যাখ্যান করেছে। কোনও বামপ্রার্থীর গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে আলোচনা করে নিজেদের খিল্লি করবেন না। সেটা যুক্তিহীন হবে। মানুষ বামপন্থীদের থেকে ন্যূনতম বিরোধীদলের মর্যাদাটুকুও কেড়ে নিয়েছে। বামপন্থীদের মানুষ একেবারেই যোগ্য বলে মনে করেনি। আমরা মানুষকে বোঝাতে পারিনি, এ সব কথা আমার মতে ছেঁদো গল্প। আমাদের বামপন্থী নেতাদের মধ্যে আদৌও মানুষকে বোঝার ক্ষমতা কিছু মাত্র অবশিষ্ট আছে কিনা সেটা নিয়েই প্রশ্ন জাগতে পারে। জোট, সংগঠন সবটা নিয়েই নতুনভাবে ভাবতে হবে। সংযুক্ত মোর্চার ব্রিগেড সমাবেশে আসা মানুষ ও তাদের পরিবারের লোকজনও আমাদের ভোট দিয়েছেন কি না তার বুধ ভিত্তিক বিশ্লেষণ প্রয়োজন। আদ্দিকালের ভাবনা ছেড়ে আরও বেশি সংস্কার আনতে হবে দলে।”