ধূপগুড়ি উপনির্বাচনে শোচনীয় হারের পর বাংলা থেকে মুছে যাবে বাম-কংগ্রেস?

ধূপগুড়ি উপনির্বাচনে শোচনীয় হারের পর বাংলা থেকে মুছে যাবে বাম-কংগ্রেস?

কলকাতা: জেতা আসন ধরে রাখতে পারল না বিজেপি। কার্যত ফটোফিনিশে বিজেপির জেতা ধূপগুড়ি আসন ছিনিয়ে নিল তৃণমূল। উপনির্বাচনে সাধারণত শাসকদলই জয়লাভ করে। কিন্তু যেহেতু ধূপগুড়ি বিজেপির শক্ত ঘাঁটি বলে পরিচিত, তাই রাজনৈতিক মহলের যথেষ্ট কৌতূহল ছিল এই উপনির্বাচন নিয়ে। শেষ পর্যন্ত দেখা গেল হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়েছে তৃণমূল এবং বিজেপির মধ্যে। সেখানে শেষ হাসি হেসেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল। এই উপনির্বাচনে মূল লড়াই তৃণমূল এবং বিজেপির মধ্যেই যে হবে, সেটা সকলেই জানতেন।

কিন্তু বাম-কংগ্রেস জোট কতটা প্রাসঙ্গিক থাকতে পারে সেটা নিয়েও রাজনীতির কারবারিদের যথেষ্ট আগ্রহ ছিল। দেখা গেল যথারীতি আগের মতোই এই উপনির্বাচনে সামান্যতম ছাপ ফেলতে পারেনি সিপিএম। কংগ্রেস সমর্থিত বাম প্রার্থী। ঈশ্বরচন্দ্র রায় পেয়েছেন মাত্র সাড়ে ছয় শতাংশ ভোট। গত বিধানসভার তুলনায় সামান্য বেড়েছে তাদের ভোট। স্বাভাবিকভাবেই বাম প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হওয়ায় নতুন করে প্রশ্ন উঠে গিয়েছে পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেস-সিপিএমের ভবিষ্যৎ নিয়ে। তবে কি পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক মানচিত্রে সিপিএমের আরও মুছে যাওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হল? লোকসভা নির্বাচনের আগে সিপিএম কী আরও কোণঠাসা হয়ে গেল? তারা যে ৩৪ বছর পশ্চিমবঙ্গে সরকার চালিয়েছে সেটা এখন যেন বিশ্বাস করা যায় না।

তাই লোকসভার আগে বামেরা কতটা ঘুরে দাঁড়াতে পারবে তা নিয়ে বড়সড় প্রশ্ন চিহ্ন আরও একবার তুলে দিল ধূপগুড়ি উপনির্বাচনের ফলাফল। যদিও রাজনীতির কারবারিরা মনে করছেন এই উপনির্বাচনের ফলাফল দেখে এখনই সেটা ধরে নেওয়া ঠিক হবে না। কারণ উপনির্বাচনের ফলাফল বেশির ভাগ ক্ষেত্রে শাসকদলের পক্ষে যায়। ভবানীপুর, খড়দা, বালিগঞ্জ, শান্তিপুর, দিনহাটা থেকে ধুপগুড়ি, সব জায়গায় ছবিটা একই রকম হয়েছে। উল্টে দেখা গিয়েছে শান্তিপুরে সিপিএম একা লড়ে তাদের ভোট শতাংশ একুশের নির্বাচনের তুলনায় বাড়িয়ে নিয়েছে। বালিগঞ্জেও সিপিএম একা লড়ে কিছুটা হলেও প্রাসঙ্গিক থেকেছিল। এমনকী বালিগঞ্জ বিধানসভার অধীনে থাকা সংখ্যালঘু অধ্যুষিত দুটি ওয়ার্ডে তৃণমূলকে পিছনে ফেলে দিয়েছিল সিপিএম। তাই ধূপগুড়িতে সিপিএমের শোচনীয় পরাজয় হয়েছে মানে এখনই ধরে নেওয়া ঠিক হবে না যে আগামী দিনে তারা আর মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে না, এমনটাই মনে করছে রাজনৈতিক মহলের একাংশ। তবে এটা স্বীকার করতেই হবে সাংগঠনিক শক্তি বাড়াতে না পারলে ভোটবাক্স সিপিএমকে বারবার হতাশই করবে।

এই পরিস্থিতিতে লোকসভা নির্বাচনের আগে কীভাবে বাংলায় ঘুরে দাঁড়ানো যাবে তা নিয়ে ভাবনাচিন্তা করতে হবে আলিমুদ্দিনকে। রাজ্য নেতৃত্ব মনে করেন উপায় একটাই, সেটা হল আরও বেশি করে জনসংযোগে নজর দেওয়া। বুথে বুথে সংগঠনকে আরও শক্তিশালী করা। বিভিন্ন ইস্যুতে রাস্তায় নেমে বামেদের আন্দোলন সবার নজর কাড়ছে। প্রত্যেকটি কর্মসূচিতে যথেষ্ট লোকসমাগম হচ্ছে। কিন্তু সেই জনসমর্থনকে ভোটবাক্সে টেনে আনা যাচ্ছে না কেন, তা নিয়ে ভাবতে হবে আলিমুদ্দিনকে।

এর মধ্যেও সিপিএমকে সামান্য হলেও স্বস্তি দিতে পারে একটি বিষয়। তা হল ধূপগুড়িতে নতুন করে বামেদের ভোটব্যাঙ্কে আর ধস নামেনি। উল্টে গত বিধানসভার তুলনায় এক শতাংশের কাছাকাছি তাদের ভোটবৃদ্ধি হয়েছে। অর্থাৎ নতুন করে আর রক্তক্ষরণ হয়নি। যদিও যে ভোট তারা পেয়েছে তাতে যে বাংলায় প্রাসঙ্গিক থাকা যাবে না সেটা সকলেই বোঝেন। তাই এই পরাজয় থেকে শিক্ষা নিয়ে লোকসভার আগে সিপিএম ঘুরে দাঁড়াতে পারে কিনা এখন সেটাই দেখার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *