আব্বাস সিদ্দিকীর সঙ্গে বাম-কংগ্রেসের জোটে মূল বাধা কোথায় ?

আব্বাস সিদ্দিকীর সঙ্গে বাম-কংগ্রেসের জোটে মূল বাধা কোথায় ?

কলকাতা: আসাদুদ্দিন ওয়াইসির সঙ্গ ছাড়ুন, নয়ত কোনও জোট নয়। ফুরফুরা শরীফের আব্বাসউদ্দীন সিদ্দিকীকে সাফ জানিয়ে দিয়েছে বাম-কংগ্রেস। প্রসঙ্গত, বাংলায় এসে আব্বাস সিদ্দিকীর সঙ্গে জোট করে ভোটে লড়তে চাইছিলেন AIMIM। ওয়াইসি এই মর্মে আব্বাসের সঙ্গে দেখাও করে যান। জোর আলোচনা হতে থাকে – আব্বাসের ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট এবং AIMIM একসঙ্গে বাম-কংগ্রেস জোটে যোগ দেবে। আপাতত, সে গুড়ে বালি।

সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য তৃণমূল যথেষ্ট কাজ না করায় এবং পরিবর্তে এটি একটি ভোট ব্যাংক হিসাবে ব্যবহার করার অভিযোগ তুলেছেন, সিদ্দিকী। ২১ জানুয়ারিতে ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট (আইএসএফ) চালু করেছিলেন এবং কংগ্রেস এবং বাম দলগুলিকে তার মিত্র ও অংশীদার হওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন। “মুসলিম, আদিবাসী এবং পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়ের স্বার্থ” রক্ষা করা – ছিল মূল বক্তব্য।

ওয়াইসির বঙ্গে ভোটে লড়াই নিয়ে প্রচুর আলোচনা হচ্ছে। তৃণমূল কংগ্রেস মনে করে তাদের সংখ্যালঘু ভোট ব্যাংকে হাত দিয়ে বিজেপিকে সুবিধা করে দিতে এসেছেন ওয়াইসি। ঠিক যেমন বিহার নির্বাচনে বাম-কংগ্রেস-ওয়াইসি রাষ্ট্রীয় জনতা দলের স্বপ্ন চুরমার করে দেয়। কিন্তু বিজেপি সরকার বানায়। পশ্চিমবঙ্গেও সেরকম কিছু হতে পারে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের মন্ত্রী এবং জমিয়তে উলামায়ে হিন্দদের রাজ্য শাখার সভাপতি সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরীও ঘোষণা করেছেন যে ওআইসির বাংলায় কোনও স্থান নেই। জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ তাদের ভোট ব্যাংকে হাত পড়ার আশঙ্কা করতেই পারে। যেমন তৃণমূল বাংলায় মুসলিম ভোটের ১০০ শতাংশ হস্তগত করতে চায়। সেই ভোট ভাগ হতে দিতে তাদের বিপদ বাড়বে।

কিন্তু, ফুরফুরা শরীফের আব্বাস সিদ্দিকী মনে করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এমন বাংলায় সংখ্যালঘুদের উন্নয়ন হয়নি। আব্বাসের জনপ্রিয়তা রয়েছে। তিনি মনে করেন, তৃণমূলের আমলে সংখ্যালঘুদের সঙ্গে সংখ্যাগুরুদের দুরত্ব বেড়েছে। কারণ নীতি। সেই কারণেই তিনি বাম-কংগ্রেসের সঙ্গে আসতে চেয়েছে। সিপিএম রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র নিজেই বলেছেন, আব্বাসের কথায় সাম্প্রদায়িকতা নেই। কিন্তু AIMIM এর সঙ্গে আব্বাসের জোটের প্রশ্নেই মূল আপত্তি।

এই পরিস্থিতিতে ৪৪টি আসন চায় আব্বাসের ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট। কিন্তু কংগ্রেস বা সিপিএম কেউ তা ছাড়তে রাজি নয়। বিধানসভায় বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান বিষয়টি নিয়ে সোনিয়া গান্ধীকে চিঠি লিখেছেন। সংবাদে প্রকাশ সিপিএম পলিটব্যুরো নেতা মহম্মদ সেলিম আব্বাসকে জানিয়েছেন AIMIM এর সঙ্গে জোট হলে ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট বাম কংগ্রেস জোটে থাকবে না। সংবাদে প্রকাশ আব্বাস পাল্টা বলেছেন, বাম-কংগ্রেসকে সাহায্য করতে চেয়েছিলাম। ওরা নিল না। কিছু করার নেই। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা অনুমান করছেন সংখ্যালঘু ভোট ১২০টি বিধানসভায় ফ্যাক্টর হতে পারে।

২০১১ সালের আদমশুমারির সময় বাংলার মুসলিম জনসংখ্যা ২৭.০১% ছিল এবং এখন প্রায় ৩০% বেড়ে গিয়েছে মনে করা হচ্ছে। মুসলিম জনসংখ্যার উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বেশি এমন জেলাগুলির মধ্যে মুর্শিদাবাদ (৬৬.২৮%), মালদা (৫১.২৭%), উত্তর দিনাজপুর (৪৯.৯২%), দক্ষিণ ২৪ পরগনা (৩৫.৫৭%), এবং বীরভূম (৩৭.০৬%) জেলা রয়েছে। পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমান জেলা, উত্তর চব্বিশ পরগনা এবং নদিয়াতেও প্রচুর মুসলিম ভোটার রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

sixteen − 15 =