Aajbikel

কোটি কোটির সম্পত্তি! নিয়োগ দুর্নীতিতে ধৃত এই নেতাদের পুঁজি দেখলে চোখ কপালে উঠবে

 | 
পার্থ মানিক সুবীরেশ

কলকাতা: নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ঝড় উঠেছে রাজ্যে৷ শিক্ষায় দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছেন একের পর এক তৃণমূল নেতা ও তৃণমূল ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিরা৷ পাহাড় প্রমাণ দুর্নীতির সঙ্গে নাম জড়িয়েছে এসএসসি’র প্রাক্তন উপদেষ্টাদেরও৷ তবে শুরুটা হলেছিল হেভিওয়েট পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে দিয়ে। গত বছর জুলাই মাসে নাকতলার বাড়ি থেকে গ্রেফতার হন তিনি৷ তাঁর ঘনিষ্ঠ বান্ধবী অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার হয় নোটের পাহাড়৷ এর পর এক এক করে ইডি-সিবিআই-এর জালে ধরা পড়েন শান্তিপ্রসাদ সিনহা, মানিক ভট্টাচার্য, সুবীরেশ ভট্টাচার্য, কল্যাণয়ম গঙ্গোপাধ্যায়, প্রদীপ সিং, প্রসন্ন রায়, চন্দন মণ্ডল, কুন্তল ঘোষ, শান্তনু ভট্টাচার্যের মতো নেতারা৷ তদন্তে মিলেছে তাঁদের কোটি কোটি টাকার সম্পত্তির হদিশ৷ জানেন এই দুর্নীতির কারবারিরা কে কত টাকার সম্পত্তির মালিক?

 

 

 

আরও পড়ুন- ব্রেকিং: গ্রেফতারির এতদিন পর পদক্ষেপ, তৃণমূল থেকে বহিষ্কৃত কুন্তল এবং শান্তনু

পার্থ চট্টোপাধ্যায়- বিধানসভা ভোটের সময় নির্বাচন কমিশনের কাছে পার্থ চট্টোপাধ্যায় যে হলফনামা দাখিল করেছিলেন, তাতে তাঁর মোট সম্পত্তির পরিমাণ প্রায় ১ কোটি ১৫ লক্ষ ৯৪ হাজার ৮৬৩ টাকা। হাতে নগদ ছিল মাত্র ১ লক্ষ ৪৮ হাজার টাকা। তাঁর অস্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ ৯১ লক্ষ টাকার কাছাকাছি।  ২০১১ সালে তৃণমূল যখন ক্ষমতায় আসে, তখন পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সম্পত্তি ছিল মাত্র ৬৯ লক্ষ টাকা।

 

 


তবে জানা যাচ্ছে, একাধিক ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা বিনিয়োগ, জীবন বীমা, প্রভিডেন্ট ফান্ড সবকিছু মিলিয়ে পার্থর মোট টাকার পরিমাণ ৯০ লক্ষ ৯৪ হাজার ৮৬৩.৮৪ টাকা। শুধু প্রভিডেন্ট ফান্ড এবং মিউচুয়াল ফান্ডেই রয়েছে ৫০ লক্ষ ৮৪ হাজার ৮৩৫ টাকা। তাঁর নাকতলার বাড়িটির মূল্য আনুমানিক ২৫ লক্ষ টাকা৷ 

 

 

এছাড়াও পশ্চিম মেদিনীপুরের পিংলা ব্লকের ক্ষিরিন্দা মৌজায় ১৫ বিঘা জমির ওপর বিশাল একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুল রয়েছে পর্থের৷ ওই স্কুলের নাম বিসিএম ইন্টারন্যাশনাল৷ এই স্কুল নাকি পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের প্রয়াত স্ত্রী বাবলি চট্টোপাধ্যায়ের স্মৃতিতে তৈরি। এখানই শেষ নয়, কলকাতায় অন্তত ১০টি ফ্ল্যাট রয়েছে প্রাক্তন মন্ত্রীর। পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে ইডি যে চার্জশিট দিয়েছে, তাতে বলা হয়েছে, সবমিলিয়ে পার্থ এবং অর্পিতার ১০৩ কোটি টাকার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত হয়েছে।


মানিক ভট্টাচার্য- নিয়োগ দুর্নীতিতে অভিযুক্ত তৃণমূল বিধায়ক তথা প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি মানিক ভট্টাচার্যের সম্পত্তিও আকাশ ছোঁয়া৷ মানিক ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের বিভিন্ন ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে থাকা ৭ কোটি ৯৩ লক্ষ টাকার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেছে ইডি। ইডির জানিয়েছে, মানিক এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের ৬১টি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের ব্যাঙ্ক ব্যালান্স এবং মিউচুয়াল ফান্ড মিলিয়ে এই সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। এই ৬১টি অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে কোন কোন খাতে আর্থিক লেনদেন হয়েছে, সেদিকে নজর রয়েছে ইডি-র।


২০২১-এর বিধানসভা ভোটের আগে নির্বাচন কমিশনের হলফনামায় মানিক জানিয়েছিলেন, যাদবপুরে তাঁর দুটি অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে। রয়েছে ব্যাঙ্কে কিছু জমানো টাকা। অ্যাপার্টমেন্ট ছাড়া তাঁর সম্পত্তির মূল্য ২ কোটি টাকার কিছু বেশি। আর দুই অ্যাপার্টমেন্টের মূল্য প্রায় ৬৬ লক্ষ টাকা। তাঁর বিরুদ্ধে নেই কোনও অপরাধের মামলা।


সুবীরেশ ভট্টাচার্য- নিযোগ দুর্নীতিতে ধৃত আরও এক রাঘব বোয়াল হলেন এসএসসির প্রাক্তন চেয়ারম্যান সুবীরেশ ভট্টাচার্য৷ তাঁর আর্থিক লেনদেন, নিয়োগ দুর্নীতির অপর মামলায় সক্রিয় ইডি! তাঁর কাছেও কয়েক কোটি টাকার রয়েছে বলে ইডি-র অনুমান৷ খতিয়ে দেখা হচ্ছে তাঁর ব্যাঙ্কের নথি৷


প্রসন্ন রায়- এসএসসি দুর্নীতির তদন্তে নেমে উঠে আসে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ভাগ্নি-জামাই প্রসন্নকুমার রায়ের নাম৷ তাঁকে গ্রেফতার করে সিবিআই৷ পার্থর দাক্ষিণ্যে তাঁর সম্পত্তির তালিকাও বেশ দীর্ঘ৷ প্রসন্ন ‘চাকরি বিক্রি’ চক্রের ‘মিডলম্যান’ হিসেবে কাজ করত বলে দাবি সিবিআই-এর৷ নিউটাউনের একাধিক বিলাসবহুল হোটেল, রিসর্টের মালিক পার্থর ভাগ্নি-জামাই। এছাড়াও রাজ্যের বেশ কয়েকটি টুরিস্ট স্পটে প্রসন্নকুমার রায়ের হোটেল, রিসর্ট, গেস্ট হাউস রয়েছে৷ দিঘা, সুন্দরবন, ডুয়ার্সে হোটেল, রিসর্ট রয়েছে তাঁর। উত্তরবঙ্গে চা ব্যবসার সঙ্গেও যুক্ত রয়েছেন তিনি৷ 


রাজ্যের গণ্ডি পেরিয়ে বাইরেও তাঁর ব্যবসার প্রসার ঘটেছে৷ উত্তরাখণ্ড, পুরী, হিমাচল প্রদেশে হোটেল, রিসর্ট রয়েছে প্রসন্নের৷ বিদেশেও নাকি বিপুল সম্পত্তি রয়েছে তাঁর৷ তিনি দুবাইয়ে হোটেল ব্যবসা খুলেছেন বলেও দাবি সিবিআই-এর৷

প্রদীপ সিং- এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতির লিঙ্কম্যান প্রদীপ সিং-কে গ্রেফতার করে সিবিআই৷ প্রদীপ ছিলেন প্রসন্নর সাগরেদ৷ তাঁর হাত ঘুরেও বহু টাকা পৌঁছেছে প্রসন্নর হাতে৷ তার পর তা পৌঁছে যেত পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কাছে৷


চন্দন মণ্ডল- চন্দন মণ্ডলকে জেরা করে ১৬ কোটি টাকা লেনদেনের হদিশ পেয়েছে সিবিআই। অযোগ্য চাকরি প্রার্থীদের চাকরি বিক্রি করে এই টাকা তুলেছিলেন চন্দন। সূত্রের খবর, নামে বেনামে কোটি টাকার মালিক এই 'সৎ রঞ্জন'৷ 

কুন্তল ঘোষ- শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় হালেই গ্রেফতার হয়েছেন হুগলির যুব তৃণমূল নেতা কুন্তল ঘোষ৷ গোপাল দলপতির দাবি,  চাকরি প্রার্থীদের কাছ থেকে টাকা আদায় করে তিনি কুন্তলের কাছে পৌঁছে দিতেন৷ সেই টাকার পরিমাণ ১০০ কোটিও ছুঁয়ে যেতে পারে। 

শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়- রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন নিগম থেকে  বেতন বাবদ তাঁর বার্ষিক আয় ৬ লক্ষ টাকা। অথচ এই তৃণমূল নেতাই কোটি-কোটি টাকার সম্পত্তির মালিক বলে কোর্টে দাবি করেছে ইডি।  আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিহীন সম্পত্তির কথা আদালতে তুলে ধরতে হোটেল, রিসর্ট-সহ অন্তত কুড়িটি সম্পত্তির কথা উল্লেখ করেছে কেন্দ্রীয় সংস্থা৷ 

এছাড়াও, শান্তিপ্রসাদ সিনহা, কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়, অশোক সাহাদের সম্পত্তিও চোখে পড়ার মতো৷ 


 

Around The Web

Trending News

You May like