পুরুলিয়া: এ যেন রুপোলি পর্দার কোনও চরিত্র৷ যিনি কিনা পুলিশের খাকি উর্দি গায়ে কঠোর হাতে অপরাধ দমন করে চলেছেন৷ অদম্য সাহস আর কর্তব্যে অবিচল থেকে ফিরিয়ে এনেছেন এলাকার শান্তি শৃঙ্খলা৷ না, সেলুলয়েডের কোনও চরিত্র নয়৷ তিনি পুরুলিয়া জেলায় প্রথম মহিলা ওসি পারমিতা সমাদ্দার।
আরও পড়ুন- মুক্তিসূর্য থেকে পোস্টার বয়? বিরোধীদের চক্রান্ত নাকি দলের অন্তর্দ্বন্দ্বে ছিঁড়ল শুভেন্দুর ছবি
পুরুলিয়ার পুঞ্চা থানার বাগদা, লৌলাড়া, বড়গ্রাম মোড় থেকে শালডিহার রাস্তা দিয়ে কখনও বুলেট তো কখনও পুলিশের ভ্যানে করে চলে তাঁর এরিয়া ডমিনেশন৷ চোখে সানগ্লাস পরে ধুলো উড়িয়ে রাস্তা দিয়ে যখন ছুটে চলে তাঁর বুলেট, তখন অনকেই বলে ওঠেন এ যেন ‘লেডি সিঙ্ঘম’৷ অনেকে আবার তাঁকে ‘বড়দি’ বলে ডাকতেই স্বচ্ছন্দ্য৷ এলাকার এমন কোনও মানুষ নেই, যে তাঁকে চেনেন না৷ মানুষের অভাব-অভিযোগ মেটাতে পুলিশ অ্যাসিস্ট্যান্ট বুথে পৌঁছে যান পুঞ্চা থানার ওসি৷ গার্হস্থ্য হিংসা থেকে নারী নির্যাতন কিংবা রাজনৈতিক তরজা, সবটাই সামলাতে হয় তাঁকে৷ পুরুলিয়ার জেলা পুলিশ সুপার এস সেলভামুরুগনের কথায়, ‘‘পুলিশের কাজে মহিলা বা পুরুষের কোনও ভেদাভেদ হয় না। পারমিতা ভাল কাজ করছেন। যিনি ভালো কাজ করেন, আমরা তাঁকেই দায়িত্ব দিই৷’’
প্রসঙ্গত, ১৯৫৬ সালে বিহার থেকে বাংলায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পর পুরুলিয়া জেলায় এই প্রথম কোনও থানার ওসি পদে দায়িত্ব সামলাচ্ছেন এক জন মহিলা। একজন মহিলা হয়ে তিনি সর্বদা মহিলাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন৷ কী ভাবে এলাকার মহিলাদের আত্মনির্ভর করতে হবে, কী ভাবে তাঁদের সমস্যা মেটানো যায়, সে দিকে অবশ্যই বাড়তি নজর রয়েছে তাঁর। তাঁদের নিরাপত্তা নিয়েও তিনি সদা সতর্ক৷ মাঝে মধ্যেই বিভিন্ন জায়গায় পৌঁছে গিয়ে মেয়েদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি৷ মোবাইল ও থানার কন্ট্রোলরুমের ফোন নম্বরও নিজের হাতে বিলি করেন৷ যাতে কোনও বিপদ হলেই তাঁরা যোগাযোগ করতে পারেন৷ তবে গত জুন মাসে পুঞ্চা থানার ওসি হিসাবে দায়িত্ব নেওয়ার পর সবার আগে ‘ফালিবাজ’দের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়েছিল পারমিতাকে৷
আরও পড়ুন- দু’মুঠো খাবার পেল পথশিশুরা, আজ বিকেল-থিয়েটার ফোরামের একটি উদ্যোগ
পুরুলিয়ার এই এলাকায় রাতের ঘন অন্ধকারে রাস্তার উপর ধারাল ‘ফালি’ অর্থাৎ ধারাল লোহার ফলা পুঁতে রেখে গাড়ির চাকা ফাঁসিয়ে লুটপাট করার ঘটনা আকছাড়৷ তবে বেশ কয়েক বছর এই উপদ্রব প্রায় বন্ধ গয়ে গিয়েছিল। কিন্তু মাস খানেক আগে ফের পুঞ্চা থানা এলাকায় সক্রিয় হয়ে ওঠে ‘ফালিবাজেরা’৷ অনেকেই ভাবছিলেন, ওসি’র চেয়ার কোনও মহিলা অফিসার দায়িত্ব নিয়েছেন, এই খবর পেয়েই হয়তো ফের শুরু হয় ‘ফালিবাজ’দের বাড়বাড়ন্ত৷ কিন্তু এই চ্যালেঞ্জ কড়া হাতেই সামলান পারমিতা৷ দুষ্কৃতীদের খবর পেতে একাধিক সোর্সকে কাজে লাগান তিনি৷ তদন্তে উঠে আসা নানা সূত্র ধরে গ্রেফতার করেন বেশ কয়েকজন অভিযুক্তকে। তারপর থেকে এই এলাকায় প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছে ‘ফালিবাজ’দের উপদ্রব৷
তবে পারমিতা জানালেন, পুরুলিয়ার এই অঞ্চলে আরও বেশ কিছু সমস্যা রয়েছে৷ এখনও এখানে ডাইনি নিয়ে কুসংস্কার রয়েছে। বাল্য বিবাহ প্রথাও সম্পূর্ণ বন্ধ হয়নি৷ এই সকল সমস্যার সমাধানও করতে হবে৷ পারমিতার বাবা প্রবীরকুমার সমাদ্দার ছিলেন প্রাক্তন সেনা অফিসার৷ বাবাই তাঁর জীবনের অনুপ্রেরণা৷ বাবাকে দেখেই তৈরি হয়েছে তাঁর দেশ সেবার ইচ্ছে৷ ছোট থেকেই পুলিশ হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন পারমিতা৷