কলকাতা: ঘূর্ণিঝড় ফণীর আতঙ্কে কাঁপছে পশ্চিমবঙ্গ সহ ৩ রাজ্য। তীব্র ঝড় ও প্রবল বৃষ্টির কথা মাথায় রেখে ওড়িশা, অন্ধ্রপ্রদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের উপকূলবর্তী এলাকায় বিশেষ সতর্কতা জারি হয়েছে৷ বাতিল করা হয়েছে দক্ষিণ-পূর্ব রেলের বেশ কিছু দুরপাল্লার ট্রেনও। কয়েকটি ট্রেনের রুটও বদল করেছে রেল৷ বন্ধ হচ্ছে উড়ান পরিষেবা৷ শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টা থেকে শনিবার রাত পর্যন্ত বন্ধ থাকছে কলকাতা বিমানবন্দর৷ ভূবনেশ্বরে আজ রাত ১২টা থেকে কাল রাত ১২ পর্যন্ত সমস্ত উড়ান পরিষেবা বন্ধ রাখা হচ্ছে৷ সুযোগ বুঝে বেড়ে গিয়েছে বিমানের ভাড়া৷ ৫ থেকে ১০ হাজার টাকার টিকিট ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা দাম উঠতে শুরু করেছে৷
আবহাওয়া দপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী ওড়িশার ১৯ জেলা সহ অন্ধ্র ও পশ্চিমবঙ্গের উপকূলবর্তী বেশ কয়েকটি জেলায় আঘাত হানতে পারে ঘূর্ণিঝড় ফণী। বুধবার মধ্যরাতে পুরী থেকে ৫০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছিল ফণী৷ সেটি ক্রমে উত্তর দিকে অগ্রসর হচ্ছে। ইতিমধ্যেই পর্যটকদের পুরী ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে ওড়িশা সরকার।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই রয়েছে মেঘাচ্ছন্ন আকাশ। সমুদ্রও ফুঁসতে শুরু করেছে । ওয়াচ টাওয়ার থেকে উপকূলে কড়া নজরদারি চালাচ্ছে পুলিস প্রশাসন। ফণীর সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে দীঘা, শঙ্করপুর, তাজপুর, মন্দারমণিতে জারি হয়েছে চূড়ান্ত সতর্কতা। সকাল থেকেই চলছে মাইকিং। পর্যটকদের সমুদ্রে নামার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। দীঘা থেকে ৬৫০কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে ফণী। বেশিরভাগ পর্যটকই বুধবার সন্ধ্যায় ফিরে গিয়েছেন। বৃহস্পতিবার সকালের ট্রেনেও ফিরছেন বেশ কিছু। শঙ্করপুর, তাজপুর, মন্দারমণি এখন প্রায় পর্যটক শূন্য। উপকূলে রেসকিউ সেন্টার প্রস্তুত করা হয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গ ও ওড়িশা উপকূলে মত্স্যজীবীদের সমুদ্রে যাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। হুগলি বন্দরে সিগন্যাল নম্বর টু দেখাতে বলা হয়েছে। সাগরে সিগন্যাল নম্বর ফাইভ দেখাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আবহাওয়া দফতরের দেওয়া সতর্কবার্তায় সমুদ্র পর্যটনের স্থানগুলি থেকে ২ থেকে ৪ মে-র মধ্যে দূরে থাকার কথা বলা হয়েছে। আজ থেকেই দক্ষিণবঙ্গে বইতে পারে ঝড়ো হাওয়া। ৩-৪ মে অতি ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনাও রয়েছে বলে জানাচ্ছে হাওয়া অফিস। তবে ফণীর প্রভাবে আজ থেকেই রাজ্যে বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে।
ওড়িশায় আছড়ে পড়ার পর গতি হারালেও ঘূর্ণিঝড়ের অভিমুখ হতে পারে পশ্চিমবঙ্গ। সে ক্ষেত্রে রাজ্যের উপকূল এলাকায় কিছুটা ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ বিষয়ে কড়া নজর রেখেছে রাজ্য প্রশাসন। মুখ্যমন্ত্রী নিজে গোটা বিষয়টির ওপর কড়া নজর রাখছেন বলে নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে।
অন্যদিকে, বিপর্যয়ের আশঙ্কায় ১০৩টি ট্রেন বাতিল করেছে রেল। বাতিল হয়েছে এরাজ্য থেকে ছাড়া ৩২টি ট্রেন। বাতিল ট্রেনের মধ্যে রয়েছে করমণ্ডল এক্সপ্রেস, পাটনা-এরনাকুলাম এক্সপ্রেস, নয়া দিল্লি-ভুবনেশ্বর রাজধানী একপ্রেস, হাওড়া-হায়দরাবাদ ইস্ট কোস্ট এক্সপ্রেস, ভুবনেশ্বর-রামেশ্বরম এক্সপ্রেস। রেলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বাতিল ট্রেনের টিকিটের পুরো টাকা ফেরত দেওয়া হবে যাত্রীদের। তবে তার জন্য আবেদন করতে হবে যাত্রার তিনদিন আগে।