কলকাতা: বিশ্ব জুড়ে করোনা অতিমারীর ভ্রুকুটি কাটিয়ে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে পরিস্থিতি। সেই সঙ্গে একাধিক নতুন সম্ভাবনায় ভরে উঠছে চারপাশ। ২০২০-র আর্থিক সংকটে যাঁরা কাজ হারিয়েছিলেন, আবার নতুন করে স্বপ্ন দেখছেন তাঁরাই। সেই নতুন আশার গল্প বলে সরস মেলা।
সম্প্রতি কলকাতার নিউটাউন মেলা প্রাঙ্গণে শেষ হয়েছে ১৬ তম সরস মেলা। করোনা মোকাবিলায় সারা দেশে ঘোষিত লকডাউনের পরে এটাই ছিল রাজ্যে আয়োজিত প্রথম সর্বভারতীয় পর্যায়ের মেলা। এই সরস মেলার প্রাঙ্গণ থেকে যে আর্থিক পরিসংখ্যান উঠে এসেছে তা নিঃসন্দেহে অতিমারী আবহে বয়ে আনে স্বস্তির হাওয়া। জানা গেছে, এবারের সরস মেলায় পসার সাজিয়ে বসেছিলেন গ্রামগঞ্জের প্রায় ১৪০০ মহিলা ও পুরুষ কারিগর। নিজেদের হাতে তৈরি হ্যান্ডিক্রাফ্ট ও হ্যান্ডলুমের শৌখিন দ্রব্য তাঁরা ছড়িয়ে দিতে চেয়েছিলেন শহুরে নাগরিকদের মাঝে। আর সূত্রের খবর অনুযায়ী তাতে প্রায় ৫ কোটি ৭ লক্ষ টাকার কাছাকাছি ব্যবসা হয়েছে এবারের ১৬ তম সরস মেলায়।
করোনা আবহে সরস মেলার এই সাফল্য নিঃসন্দেহে তাৎপর্যপূর্ণ। গত ২৩ ডিসেম্বর থেকে নিউটাউন মেলা প্রাঙ্গণে শুরু হয়েছিল রাজ্য পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন বিভাগ আয়োজিত সরস মেলা। জানুয়ারি মাসের ৩ তারিখ পর্যন্ত মেলা চলেছে একনাগাড়ে। গত ৬ মাস ধরে খালি হাতে বসে থাকা গ্রামীণ স্বনির্ভর গোষ্ঠী গুলিকে সাহায্যের জন্য সরস মেলার আয়োজন ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রাজ্য পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন বিভাগের এক আধিকারিকের কথায়, “অতিমারী আবহে মেলার আয়োজন করাটাই আমাদের কাছে চ্যালেঞ্জ ছিল। এবারের সরস মেলায় মোট ২৭০টি স্টল দেওয়া হয়েছে। ৫ লাখের বেশি মানুষ মেলায় এসেছেন।” এছাড়াও মেলা প্রাঙ্গণে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং ক্যুইজ শোয়ের আয়োজন করা হয়েছিল যাতে বিপুল সংখ্যক মানুষ অংশ নিয়েছেন বলে দাবি গ্রামোন্নয়ন বিভাগের।
দীর্ঘ সময় পর এত বড় একটা মেলার আয়োজন হয়েছে বলে ভিন রাজ্যের শিল্পী, কারিগররাও মেলায় স্টল দিতে বিশেষ আগ্রহী হয়েছিলেন। প্রায় ১২ টি রাজ্য থেকে কলকাতার সরস মেলায় হাজির হয়েছিলেন কারিগররা। তাঁদেরই এক জনের কথায়, “আমাদের জন্য বছরটা খুবই ভয়ানক ছিল। চারিদিকে মেলা বা ওয়ার্কশপ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। আমরা অনেকেই পেট চালানোর জন্য চা, সবজি বিক্রি করতে শুরু করেছিলাম।” করোনার প্রতিষেধক টিকার আশ্বাসের মাঝে বছরের শুরুতে সরস মেলার এই সাফল্য নিঃসন্দেহে বয়ে আনে খুশির বার্তা।