কলকাতা: রাজ্যে নভেল করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তি অব্যাহত। রাজ্য সরকার করোনা আক্রান্তের যে পরিসংখ্যান দিচ্ছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের পরিসংখ্যানের সঙ্গে তা না মেলায় আগেই বিভিন্ন মহলে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে। এবার শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের পরিচালিত কলকাতা পুরসভার দেওয়া পরিসংখ্যানে রাজ্যে করোনায় মৃতের সংখ্যা নবান্নের দেওয়া হিসাবের দ্বিগুণ হওয়ায় বিতর্ক আরও তুঙ্গে উঠেছে। রাজ্য সরকার করোনায় আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা নিয়ে প্রকৃত তথ্য গোপন করতে চাইছে বলে আবারও সরব হয়েছেন বিরোধীরা। পরিস্থিতি সামাল দিতে মাঠে নেমে রাজ্যের মুখ্যসচিব৷ কলকাতা পুরসভার দেওয়া তথ্য তো খারিজ করেছেন বটেই, একই সঙ্গে কলকাতা পুরসভার এক্তিয়ার নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন।
প্রশাসনিক সূত্রের খবর, শহরের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারী হাসপাতালে মৃত করোনা আক্রান্তদের একটি তালিকা প্রকাশ করে কলকাতা পুরসভা। তাদের ঠিকানা এবং শেষকৃত্য সংক্রান্ত তথ্য সমেত ওই তালিকা প্রকাশ করা হয়। সেই তালিকা অনুযায়ী নীলরতন সরকার ,আরজিকর মেডিকেল কলেজ, এম আর বাঙ্গুর, আমরি হাসপাতাল, পিয়ারলেস হাসপাতাল এবং বেলঘড়িয়ার জেনিথ হাসপাতাল মিলিয়ে এখনো পর্যন্ত রাজ্যে মোট দশজন করোনা আক্রান্তের মৃত্যু হয়েছে। তারা দমদম, উল্টোডাঙ্গা,শিবপুর,নিউ গড়িয়া, বেলঘড়িয়া, মহেশতলা, বৈদ্যবাটি ঠাকুরপুকুর এবং কলকাতার কাশীপুরের বাসিন্দা। তাদের শেষকৃত্য সম্বন্ধেও বিস্তারিত তথ্য দেওয়া হয়েছে কলকাতা পুরসভার তালিকায়। তালিকা অনুযায়ী ২৩ মার্চ থেকে ৬ এপ্রিলের মধ্যে নিমতলা শ্মশান, ধাপার সত্কার স্থল এবং বাগমারি কবরস্থানে তাদের শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে। কলকাতা পুরসভার ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষ জানিয়েছেন, কলকাতার বাসিন্দা যেসব করণা আক্রান্তের শহরের হাসপাতালগুলোতে মৃত্যু হয়েছে পুরসভা তাদের ডেথ সার্টিফিকেট দিচ্ছে। অন্যদিকে শহরের বিভিন্ন হাসপাতালে মারা যাওয়া করোনা আক্রান্ত অন্য এলাকার বাসিন্দাদের শেষকৃত্যের শংসাপত্র দিচ্ছে কলকাতা পুরসভা ।
মুখ্য সচিব রাজীব সিনহা অবশ্য শুক্রবার দাবি করেন, কলকাতা পুরসভার করোনা আক্রান্তদের ডেড সার্টিফিকেট দেওয়ার কোন অধিকার নেই। মৃতের সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তি কোনো অবকাশ নেই বলেও তিনি দাবি করেছেন। নবান্নে এদিন সাংবাদিকদের মুখ্য সচিব জানান, ‘রাজ্যে কোন করোনা আক্রান্তের মৃত্যু হলে তার বিস্তারিত তথ্য সরকার গঠিত অডিট কমিটির কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তারাই খতিয়ে দেখছেন ওই আক্রান্তের মৃত্যু করোনা ভাইরাস সংক্রমণের কারণে হয়েছে না অন্য কোন কারণে। তারা নিশ্চিত করার পরেই মৃতের সংখ্যা প্রকাশ করা হচ্ছে। এ নিয়ে বিভ্রান্তির কোন অবকাশ নেই। কলকাতা পুরসভা বা অন্যকোন পুরসভার ডেট সার্টিফিকেট দেওয়ার এক্তিয়ার নেই।’ সেই কমিটির দেওয়া তথ্য অনুযায়ীই রাজ্যে করণা আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা শুক্রবার পর্যন্ত পাঁচজনই রয়েছে বলে মুখ্য সচিব জানিয়েছেন।
অন্যদিকে শুক্রবার দুপুর বারোটা পর্যন্ত বিগত ২৪ ঘন্টায় রাজ্যে আরো ১২ জন নভেল করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।এই সময় আরও তিনজন সংক্রমিত ব্যক্তির সুস্থ হয়ে যাওয়ায় তাদের হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন মুখ্য সচিব রাজীব সিনহা।তিনি বলেন ইতিমধ্যেই সুস্থ এবং মৃতদের বাদ দিয়ে বর্তমানে ৮৯ জন করোনা আক্রান্ত রাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। করোনা মোকাবিলার পরিকাঠামো উন্নয়ন প্রসঙ্গে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ মুখ্যসচিব তুলে ধরেন। তিনি বলেন গতকাল থেকে আজ পর্যন্ত আরো দুই হাজারের বেশি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। ৮ হাজারের বেশি পিপি ই, ১০ হাজারের বেশি এন৯৫ মাস্ক এবং অন্যান্য নানা সরঞ্জাম সরবরাহ করা হয়েছে।নতুন কুড়িটি কোয়ারেন্টাইন সেন্টার খোলা হয়েছে। বর্তমানে রাজ্যে ৪ হাজার ৮৩০ জন মানুষ সরকারি কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে এবং ৪৪ হাজারের বেশি মানুষ নিজের বাড়িতে কোয়ারেন্টাইন আছেন বলে মুখ্য সচিব জানান। অন্যদিকে করোনা মোকাবিলায় রাজ্য সরকারের গঠিত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের টাস্কফোর্সের সদস্য অভিজিৎ চৌধুরী জানান রাজ্যে করোনা সংক্রমনের হার কিছুটা কমছে বলে ইঙ্গিত মিলছে।লকডাউন এবং সর্তকতা বিধি মেনে চললে অল্পদিনের মধ্যে সুফল মিলবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। তবে এখনও কিছু সংখ্যক মানুষ লকডাউন কে উপেক্ষা করার যে প্রবণতা দেখাচ্ছেন তাতে অবিলম্বে লাগাম টানার তিনি আবেদন জানিয়েছেন।