কলকাতা: উচ্চমাধ্যমিকে দারুণ সফল পঞ্চকন্যা৷ সকলেই লেটার-সহ প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ৷ আর পাঁচ মেয়ের সাফল্যে দারুণ উচ্ছ্বসিত ২০ কন্যার জননী কান্তা দিদিমণি৷ উচ্চমাধ্যমিকে যখন সকলে ঝুড়ি ঝুড়ি নম্বর নিয়ে পাশ করছে, তখন এই ফল হয়তো অনেকের কাছেই আহামরি নয়৷ কিন্তু এই ফল ওদের জীবনে অন্যমাত্রা যোগ করেছে৷
আরও পড়ুন- কলকাতা সহ দক্ষিণবঙ্গে কবে ঢুকবে বর্ষা? সুখবর শোনাল হাওয়া অফিস
এক সময় অন্ধকারে তলিয়ে যেতে বসেছিল ওদের জীবন৷ সেই অন্ধকার থেকে ওদের হাত ধরে টেনে তুলেছিলেন এই কান্তা দিদিমণি৷ তাঁর সহযোগিতায়, অনুপ্রেরণায় আলোর জগতে ফেরার গল্পকে সত্যি করেছে ওরা৷ দমদম স্টেশন চত্বরে ঘুরে বেড়ানো ভবঘুরে মেয়েদের পনেরো বছর বুকে আগলে শিক্ষার পাঠ দিয়েছেন এই স্কুলশিক্ষিকা। ভবঘুরে জীবন থেকে কান্তা চক্রবর্তীর পাঠশালায় বেড়ে ওঠা সেই পাঁচ কন্যা হল পায়েল রায়, গীতা রায়, রিনা দাস, প্রিয়া কুমারী এবং প্রিয়াঙ্কা সরকার।
পায়েল এবং প্রিয়া বাণিজ্য বিভাগের ছাত্রী। বাকি তিন জন কলা বিভাগের। রিনা, প্রিয়াঙ্কা আর গীতা ডাফ হাইস্কুল থেকে পড়াশোনা করেছেন৷ প্রিয়া কেএলএস স্কুল এবং পায়েল দমদমের কুমার আশুতোষ ইনস্টিটিউশন (মেন) থেকে এ বছর উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেছে। প্রতিটি বিষয়েই নব্বইয়ের ঘরে নম্বর পাওয়া প্রিয়ার স্বপ্ন চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট হওয়া। চলতি মাসের ১৫ তারিখেই রয়েছে রেজিস্ট্রেশন। স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে এটাই প্রিয়ার প্রথম ধাপ৷ পায়েলের স্বপ্ন, আগামী দিনে সে ব্যাঙ্কে চাকরি করবে। আর রিনা, গীতা আর প্রিয়াঙ্কা পড়বেন ভুগোল নিয়ে৷ তাঁরা তিন জনেই ভূগোলে আশির উপরে নম্বর পেয়েছে৷ স্নাতক পাশ করার পর করবেন চাকরি৷ এখন থেকে সেই প্রস্তুতিও শুরু করে দিয়েছেন। তবে পরীক্ষার এই সাফল্য উদযাপন হবে না, তা আবার হয় নাকি? দিদিমণির কাছে ওদের আবদার, ‘বিরিয়ানি খাব’।
মাধ্যমিকে কান্তা দিদিমণির এই পাঁচ কন্যাই দ্বিতীয় বিভাগে মাধ্যমিকে পাশ করে৷ রেজাল্ট দেখে স্বভাবতই মন ভেঙেছিল তাদের৷ অপেক্ষা ছিল কিছু করে দেখানোর৷ দু’বছরের অপেক্ষার পর সাফল্য প্রাপ্তি৷ দিদিমণির পরিশ্রমের মূল্য দিতে পেরেছে ওরা৷ কান্তা দিদিমণির কথায়, “আমি ওদের উপরে কখনও চাপ দিইনি। তবে ওদের খাওয়া-দাওয়া, পড়তে যাওয়া, ঘুমানো এ সব বিষয়ের উপর নজর রাখতাম। পড়াশোনাটা ওরা নিজেদের আগ্রহেই করেছে। আমাকে পড়ার কথা বলতেও হত না।” তিনি জানান, ওরা পাঁচ জনই সমবয়সি৷ তাই ওদের বন্ধুত্বও গভীর। এক জন পড়া না বুঝলে অন্য জন বুঝিয়ে দিত। এক জন পিছিয়ে গেলে অন্য জন হাত ধরে টেনে তুলত৷
” style=”border: 0px; overflow: hidden”” title=”YouTube video player” width=”560″>