কালনা: সোমবার থেকেই চতুর্থ দফার লকডাউন। তবে বেশ কিছু শিথিলতা লক্ষ্য করা গেছে তৃতীয় দফার লকডাউন থেকেই। তবে পরিবহনের ব্যবস্থা না থাকায় অনেকেই নিজের কর্মক্ষেত্রে পৌঁছতে পারেননি। কিন্তু পূর্ব বর্ধমানের কালনা শহরের সঞ্জয় পালের কাহিনি একটু অন্যরকম। নিজের দোকান খোলার জন্য রোজ নদী সাঁতরেই যাতায়াত করেন তিনি। জিজ্ঞেস করলে বলেন, পরিবারের জন্য দোকান তাঁকে খুলতেই হবে। অন্য কোনও উপায় নেই।
কালনার পাঁচজন সদস্যের পরিবারের একমাত্র রোজগেরে সঞ্জয়। তাঁর নিজের সোনার দোকান রয়েছে নদিয়া জেলার শান্তিপুরে। লকডাউন একটু শিথিল হতেই নিজের ব্যবসা পুনরায় চালু করবেন বলে ঠিক করেছিলেন তিনি। লকডাউন জারি হয়েছে মার্চের শেষের দিকে। প্রাথমিক অবস্থায় নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ছাড়া অন্য কোনও দোকান খোলা যাবে না, এমনটাই নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। সূত্রের খবর, তাই সেই থেকেই দোকান বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছিলেন সঞ্জয়বাবু। কিন্তু ধীরে ধীরে ফুরিয়ে আসে জমানো টাকাও।
এরই মধ্যে চতুর্থ দফার লকডাউনে তিনি জানতে পারেন যে, তাঁর দোকান তিনি খুলতে পারবেন। শিথিল করা হয়েছে নিয়ম। কালনা থেকে শান্তি পুরে যাওয়ার জন্য তাঁকে রোজ ভাগীরথী নদী পেরোতে হয়। অন্যসময় খেয়া থাকলেও লকডাউনের জন্য যাত্রী পরিবহন বন্ধ রাখা হয়েছে, সেই কথা খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন তিনি। যাও বা চলে, শুধুমাত্র নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস পরিবহনের জন্যই। এই অবস্থায় প্রথমে ভেবেছিলেন কলা গাছের ভেলায় করে নদী পেরোবেন। কিন্তু ঝুঁকিপূর্ণ মনে হল।
পরে সাঁতার কাটার টিউব জোগাড় করলেন। আলাদা জামাকাপড় আর দোকানের চাবি একটা প্লাস্টিক ব্যাগে নিয়ে সাঁতরেই রওনা দিয়েছিলেন দোকানে। এভাবেই রোজ ভাগীরথী নদী পেরিয়ে নিজের দোকানে যান সঞ্জয় পাল। তিনি বলেন, 'তৃতীয় দফার লকডাউন থেকেই রোজ সকাল ১০টায় বাড়ি থেকে বের হই শান্তিপুরের উদ্দেশ্যে। সাঁতরে যাই। তারপর ঘরে ফিরি সন্ধেবেলা।' তিনি জানেন, এই ধরনের কাজ কতটা ঝুঁকিপূর্ণ, কিন্তু পরিবারের মুখের দিকে তাকিয়ে অন্য কোনও উপায় পান না কালনা সঞ্জয়।
নজর থাকুক AajBikel.com-এর পাতায়…