কলকাতা: শুক্রবার রাত থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি অডিয়ো রেকর্ডিং ভাইরাল হয়ে গিয়েছে৷ একটি বাংলা নিউজ চ্যানেলের সাংবাদিকের সঙ্গে একটি ভারী পুরুষ কন্ঠের ফোনালাপের সেই রেকর্ডিং ঘিরেই সরগরম রাজ্য৷ ওই পুরুষ কন্ঠ অবিকল কবীর সুমনের৷ ওই অডিয়োটিতে সংশ্লিষ্ট সাংবাদিককে গালিগালাজ করতে শোনা যায় তাঁকে৷ এর পর থেকেই সমাজের বিভিন্ন স্তর থেকে প্রতিক্রিয়া আসতে শুরু করেছে৷ শুধু নামজাদা প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিরাই নয়, সমালোচনায় সরব হয়েছে সাধারণ মানুষ৷ তীব্র সমালোচনা করেছেন কবি শ্রীজাত বন্দ্যোপাধ্যায় ও তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ৷
আরও পড়ুন- বক্সী সাক্ষাতে অভিনেতা জয়, ঘাসফুলে যোগদান সময়ের অপেক্ষা
ফেসবুকে এই ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় শ্রীজাত লিখেছেন, ‘বাকি দুনিয়ায় শিল্পীদের জন্য কিছু ছাড় থাকলেও, তাঁদের শত অন্যায়কে শিল্পের দোহাই দিয়ে অদেখা করার অলিখিত চুক্তি নেই। পশ্চিমে তো প্রশ্নই ওঠে না। সোজা ঘাড় ধরে কাঠগড়ায় তুলে দেবে, বাকি কথা তারপর। সে তুমি যত বড় শিল্পস্রষ্টাই হও, নিয়ম তোমার জন্যেও একই।’ তিনি আরও লিখেছেন, ‘ধারাবাহিক পরিকল্পিত অসভ্যতার প্রত্যেকটির পরে বুক বাজিয়ে বলতে পারেন, বেশ করেছি। কেননা তিনি জানেন, আমরা দুর্বল। আমরা কেউ একজনও ঘুরে দাঁড়িয়ে বলব না, মোটেই বেশ করেননি, অন্যায় করেছেন। ক্ষমা চান। কাউকে অপমান করবার অধিকার আপনাকে শিল্প দেয়নি।’ এ পর্যন্ত কবীর সুমনের নাম উল্লেখ না করলেও লেখার পরতে পরতে তাঁর দিকেই ইঙ্গিত করেছেন শ্রীজাত। তাঁর কথায়, ‘কেউ যদি আমার বিরোধীও হন, তাঁর প্রস্তাবে আমি যদি অসম্মতও হই, তবে তা প্রত্যাখ্যানেরও দস্তুর আছে। এমনকী অপ্রাসঙ্গিক থাকতে থাকতে হতাশ হয়ে হেডলাইন হয়ে ওঠার তীব্র খিদে থেকেও তাঁকে অসম্মান করার, অসাংবিধানিক ভাষায় গরগরে আক্রমণ করার অধিকার আমার নেই।’
লেখার শেষ ছত্রে শ্রীজাত লেখেন, ‘‘মনে আছে, কবীর সুমন নিজের একখানা গানে লিখেছিলেন, বিরোধীকে বলতে দাও, বিরোধীকে বলতে দাও, তোমার ভুলের ফর্দ দিক। বাঙালি বোধহয় শুনেও এসব গানের অর্থ উপলব্ধি করতে পারেনি। পারলে আজ তার এই হাঁড়ির হাল হতো না। আরেকটি গানের প্রথম লাইন মনে পড়ে যাচ্ছে, এর উত্তর হিসেবে। তুমি গান গাইলে, বিশেষ কিছুই হলো না, যা ছিল আগের মতো রয়ে গেল। বিস্ময়কর ভাবে, এ-গানও সুমনেরই রচনা। কী মিষ্টি সমাপতন, না?’’
এ প্রসঙ্গে কুণাল ঘোষ বলেন, যে অডিওটি ঘুরছে, সেটি যদি কবীর সুমনেরই হয়, তাহলে তা অতি আপত্তিকর এবং তীব্র প্রতিবাদযোগ্য৷ এর জন্য ক্ষমা চাওয়া উচিত৷ না চাইলে ব্যবস্থা হওয়া উচিত৷ জনপ্রিয় গায়ক বা প্রতিভাধর বুদ্ধিজীবী হলেই এসব বলা যাবে, এটা হতে পারে না৷
এদিকে কবীর সুমনের প্রতিক্রিয়া, যা করেছেন প্রয়োজনে আবারও করবেন৷ তিনি লেখেন, ‘ফোনে, হোয়াটস্যাপে স্বাভাবিক ভাবেই আমি আক্রান্ত। এটাই হওয়ার কথা। আরও হবে। আমার যায়-আসে না। যা করেছি তা, দরকার হলেই, আবার করব।’ সুমন সংশ্লিষ্ট সাংবাদিককে তাঁর কথাগুলো ব্রডকাস্ট করার কথাও বলেছিলেন৷ তাঁর অভিযোগ ছিল, ওই চ্যানেল বর্ষীয়ান সঙ্গীতশিল্পী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়কে মেরে ফেলেছে৷ সুমন সহ আরও কিছু বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব সাংবাদিক বৈঠক করে একই অভিযোগ করেছিল৷ ঘটনাচক্রে এর পরের দিনেই সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন৷
সুমন স্বীকার করে নিয়েছেন, ওই কন্ঠস্বর তাঁরই৷ কিন্তু সেখানে ফোনালাপের প্রসঙ্গ উল্লেখ করা হয়নি৷ পোস্টটি পাবলিকও করা হয়নি৷ শুধু দেখেছেন তাঁর ফেসবুক বন্ধুরাই৷ সেখানে সুমন লিখেছেন, ‘আব্রাহাম লিঙ্কন বলেছিলেন, কিছুর পক্ষে যুক্তি দিতে যেও না। তোমার বন্ধুদের তা দরকার পড়বে না। তোমার শত্রুরা তা বিশ্বাস করবে না। সাংবাদিক, সংবাদমাধ্যম, শিল্পীর কোনও আলাদা স্বাধীনতা থাকতে পারে বলে মনে করি না। যে কোনও মানুষের যে অধিকার, তাদের অধিকার ততটাই।’’ তিনি আরও লেখেন, ‘‘একটি বিশেষ চ্যানেল ও তার সাংবাদিকরা দিনের পর দিন যা করে যাচ্ছে, তার জবাব দিয়েছি উপযুক্ত ভাষায়। সুরসম্রাজ্ঞীর অপমানের বিরুদ্ধে যে সাংবাদিক বৈঠক হয়েছিল সেখানে কোন চ্যানেলের কোন সাংবাদিক কী করেছে, বলেছে আমি ভুলিনি।’’
তিনি এও লিখেছেন, ‘‘সারা দুনিয়ায় সংবাদমাধ্যম ও সাংবাদিকরা তাদের ইচ্ছেমতো পথে চলে। যে কোনও উপায় নেয়। যার হাতে চ্যানেল-কাগজ কিছু নেই, সে-ও তার ইচ্ছেমতো উপায় নেবে। এ বিষয়ে যাঁদের আগ্রহ, জার্মান কাহিনিকার হাইনরিশ্ ব্যোলের লেখা The Lost Honour of Katharina Blum উপন্যাসটি পড়ুন। বইটি পড়া দরকার। এক প্রাক্তন সাংবাদিক ও নিয়মিত পাঠক হিসেবে বলছি।’ এদিকে অকথ্য ভাষার জন্য এফআইআর করা হবে বলে জানিয়েছেন কাউন্সিলার সজল ঘোষ৷