নিজস্ব প্রতিনিধি, বাগদা: ঠিক যেন উলোটপুরানোর ডাক। তৃণমূল থেকে একাধিক নেতার দলত্যাগ করে পদ্মবাগানে প্রবেশ নিয়েই এখন সরগরম বঙ্গ রাজনীতি। তারমধ্যেই বনগাঁর বিজেপি সাংসদ তথা ঠাকুরবাড়ির সন্তান শান্তনু ঠাকুরকে বিজেপি ছেড়ে তৃণমূল কংগ্রেসে ফিরে আসার আহ্বান জানালেন রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী তথা উত্তর ২৪ পরগনা জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। ৯ ডিসেম্বর উত্তর ২৪ পরগনার গোপালনগরে সভা করবেন তৃণমূল কংগ্রেস সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়। তার আগে বৃহস্পতিবার বাগদার হেলেঞ্চায় প্রস্তুতি সভায় যোগদান করেন খাদ্যমন্ত্রী। সেখানেই সাংবাদিক সম্মেলনে শান্তনু ঠাকুরকে বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে ফিরে আসার আহ্বান জানান তিনি।
এদিন জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, “আমি শান্তনুকে আহ্বান জানাব, আমাদের প্লাটফর্মে আসুক, আমাদের প্লাটফর্মে এসে কাজ করুক শান্তনু, তাঁকে আহ্বান জানাচ্ছি। মতুয়াদের জন্য আমরা কাজ করতে চাই। ও যদি মতুয়াদের জন্য কাজ করতে চায় তাহলে দুটো হাত একসঙ্গে মেলাতে আমাদের কোনও ক্ষতি নেই। কিন্তু আমাদের প্লাটফর্মে আসতে হবে। বিজেপির প্লাটফর্মে কাজ করা যাবে না। “তিনি বলেন, “বিজেপি কাজ করবে না। বিজেপি হল ধান্দাবাজের দল, মিথ্যাবাদের দল, বিজেপি প্রবঞ্চনা,বিজেপির লোকেরা প্রতিশ্রুতি দেবে, কিন্তু একটা কাজও করবে না। ” ঠাকুরবাড়ির নেতাকে দলে যোগদানের আহ্বান জানালেও, এই নিয়ে তাঁর সঙ্গে বা দলের মধ্যে কোনও আলোচনা হয়েছে কিনা স্পষ্ট করেননি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। তবে এদিন বিজেপির বিরুদ্ধে তোপ দেগে মতুয়াদের প্রতি বঞ্চনা করা হয়েছে বলে অভিযোগ তোলেন তিনি। তাঁর কথায়, “মতুয়া ভাইয়েরা কেউ দলের বাইরে যাননি। মতুয়ার লোকেরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সবথেকে বেশি ভালবাসেন। সবচেয়ে বেশি শ্রদ্ধা করেন। ” তিনি বলেন, “শান্তনু ঠাকুরের সুরে সুর মিলিয়ে বলব, শান্তনু ঠাকুরকে সাংসদ করার পর, মতুয়া সম্প্রদায়কে প্রবঞ্চনা করেছে বিজেপি। যা কথা বলে গিয়েছিলেন, তার একাংশও করতে পারেননি।”
এদিনের প্রস্তুতি সভামঞ্চ থেকে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, দলীয় নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেন যেন পুরানো নেতাকর্মীদের নিয়ে কাজ করা হয় এবং তাঁদের সক্রিয়ভাবে দলে ফেরানো হয়। বসে থাকা বা দীর্ঘদিন সেভাবে সামনের সারিতে না থাকা নেতারা কেন নিষ্ক্রিয় হয়ে বসে রয়েছেন তা জানার চেষ্টা করেন তিনি। একইসঙ্গে জেলায় স্টিয়ারিং কমিটি গঠনের মাধ্যমে দলের পুরানো ও নতুন নেতা-কর্মীদের ভারসাম্য রেখে কাজ করার নির্দেশ দেন জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। তিনি বলেন, “সারা বাংলায় তৃণমূল কংগ্রেস একসঙ্গে চলবে, একটি পরিবার,যাঁরা পুরোনো ছিলেন, তাঁদের অগ্রাধিকার হবে, যারা তৃণমূল প্রতিষ্ঠা করেছিল, তার আগে যখন আমরা কংগ্রেস বা যুব কংগ্রেস করতাম, তাদের সবাইকে অগ্রাধিকার আগে দেওয়া হবে, তার পরে যারা এসেছে, তাদের স্বাগতম। তারা নিয়ে এসে একটা পরিবার একসঙ্গে কাজ করবে। “
এদিন বাগদায় একটি তৃণমূল কংগ্রেসের কার্যালয় তৈরি করা হয়। এবং মাসে একদিন করে তিনি নিজে বসবেন বলে জানান জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বাগদার উন্নয়ন নিয়ে আলোচনা করা হবে বলে জানান তিনি। রাজ্যে নিজেদের সংগঠন বাড়়িয়েছে বিজেপি। ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যের ৪২ আসনের মধ্যে ১৮টিতে পদ্মফুল ফুটেছে। এবারের বিধানসভা নির্বাচনে মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় সরকারকে ক্ষমতাচ্যূত করতে মরিয়া গেরুয়া ব্রিগেড। ফলে বনগাঁ, বাগদার মতো এলাকায় মতুয়া বোট যে গুরুত্বপূর্ণ, তা বিলক্ষণ বুঝতে পারছেন তৃণমূল নেতারা। অন্যদিকে, দলের পুরানো নেতাকর্মীদের মান-অভিমানও অন্যতম ফ্যাক্টর। রাজনৈতিক মহলের মতে, ভোটের আগে সেইজন্যই ক্ষতে মলম লাগাতে উদ্যোগী ঘাসফুল শীর্ষ নেতৃত্ব।