‘সাংবিধানিক পরিকাঠামো ভেঙে পড়েছে, রাজ্যপাল কেন ঘোষণা করছেন না?’ সন্দেশখালির ঘটনায় ক্ষুব্ধ বিচারপতি

‘সাংবিধানিক পরিকাঠামো ভেঙে পড়েছে, রাজ্যপাল কেন ঘোষণা করছেন না?’ সন্দেশখালির ঘটনায় ক্ষুব্ধ বিচারপতি

কলকাতা:  উত্তর চব্বিশ পরগনার সন্দেশখালিতে তৃণমূল নেতার বাড়িতে হানা দিয়ে আক্রান্ত ইডি। শুক্রবার সকালে রেশন দুর্নীতি মামলার তদন্তে শেখ শাহজাহানের বাড়িতে তল্লাশি অভিযানে গিয়ে স্থানীয়দের একাংশের রোষের মুখে পড়তে হয় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী অফিসারদের। ইডি এবং কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের ঘিরে ধরে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন শাহজাহানের অনুগামীরা৷ তাঁদের লক্ষ্য করে ইট-পটকেল ছুড়তে শুরু করেন৷ মাথা ফেটে যায় এক আধিকারিকের। জখম হয়েছেন আরও দু’জন৷ ভাঙচুর চালানো হয় তাঁদের গাড়িতে৷ আক্রান্ত সংবাদ মাধ্যম৷ এই ঘটনায়  কড়া পর্যবেক্ষণ রাখলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। এদিন এজলাসে বসেই সন্দেশখালির ঘটনার প্রসঙ্গ তোলেন বিচারপতি। তিনি বলেন, ‘রাজ্যপাল কেন ঘোষণা করছেন না যে এ রাজ্যে সাংবিধানিক পরিকাঠামো ভেঙে পড়েছে?’  তাঁর কথায়, ‘‘তদন্তকারীরা যেভাবে মারধর খেয়েছেন তাঁদের যে ভাবে মারা হয়েছে, তাতে পরিষ্কার যে পশ্চিমবঙ্গে সাংবিধানিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। আমি বুঝতে পারছি না, রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস কেন তা ঘোষণা করছেন না?

আদালতের নির্দেশে রেশন দুর্নীতির তদন্তে নেমেছে কেন্দ্রীয় সংস্থা৷ শুধু রেশন দুর্নীতি নয়, শিক্ষক ও পুর নিয়োগ দুর্নীতি নিয়েও কেন্দ্রের তিন এজেন্সি- ইডি, সিবিআই এবং আয়কর বিভাগ একযোগে তদন্ত চালাচ্ছে। কিন্তু এভাবে কোনও দিন সাধরণের হাতে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা ঘটেনি৷ উল্লেখ্য বিষয় হল, তাঁদের সঙ্গে আধা সামরিক বাহিনীর সশস্ত্র জওয়ানরা থাকার পরেও তদন্তকারী অফিসারদের ঘিরে ধরে মারা হয়েছে। এই পরিস্থিতি নিশ্চিত ভাবেই উদ্বেগজনক এবং তা আদালতকেও চিন্তায় ফেলে দিয়েছে৷ 

শুক্রবার সকালে নিয়োগ দুর্নীতি মামলার শুনানি চলছিল বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে৷ সেই সময় আইনজীবী সুদীপ্ত দাশগুপ্ত সন্দেশখালির ঘটনা বিচারপতিকে জানান৷ যা শোনার পর কড়া পর্যবেক্ষণ জানান তিনি। সন্দেশখালির ঘটনায় আক্রান্ত ইডির তদন্তকারী অফিসারদের শারীরিক অবস্থা সম্পর্কেও খোঁজখবর নেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়।

এর পরেই বিচারপতি জানতে চান, “ওই এলাকার প্রশাসন কী করছিল? ঘটনার পর পুলিশ ওখানে গিয়েছিল নাকি যায়নি?” ওই এলাকা কোন লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে পড়ে, সে বিষয়েও আইনজীবীদের কাছে জানতে চান বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়।

 

যদিও এই ঘটনায় ইডি-রই প্ররোচনা দেখছে তৃণমূল৷ দলের মুখপাত্র তথা রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষের কথায়, “সন্দেশখালিতে যা ঘটেছে তা উদ্বেগজনক। এমনটা না হলেই ভাল হত। কিন্তু বুঝতে হবে কেন এমনটা হয়েছে। রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে কেন্দ্রীয় এজেন্সি বেছে বেছে রোজ তৃণমূল নেতাদের বাড়ি পৌঁছে যাচ্ছে। সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছে সংবাদমাধ্যমের একাংশকে। তার পর সেখানে গিয়ে প্ররোচনা দিচ্ছে।” কুণালের অভিযোগ, ‘‘কেন্দ্রীয় এজেন্সির এহেন রাজনৈতিক হানাদারির ঘটনায় সঙ্গে সংবাদমাধ্যমের একাংশেরও যোগসাজশ রয়েছে। উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে তৃণমূলের বিরুদ্ধে কুৎসা করা হচ্ছে। এটা তারাই প্রতিক্রিয়া। সাধারণ মানুষ তাদের অসন্তোষ প্রকাশ করছে।” 

বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের মন্তব্যে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বিশ্বজিৎ দেব৷ তিনি বলেন, ‘‘বিচারপতির আসনে বসে অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় যে ভাবে পশ্চিমবাংলায় রাষ্ট্রপতি শাসনের দাবি জানিয়েছেন, তাতে আমি মনে করি বিচারপতির আসনে বসে উনি সংবিধানকে অপমান করছেন৷ সংবিধানের মূল পরিকাঠামোর উপর আঘাত হানছেন৷’’ 

বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের মন্তব্যের পর প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসও৷ সন্দেশখালির ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন রাজ্যপাল৷ তিনি বলেন, ‘‘বাংলায় অপশাসন চলতে দেওয়া যাবে না। সরকারের দায়িত্ব গণতান্ত্রিক কাঠামোয় বর্বরতা ও নৈরাজ্যেকে কঠোর হাতে দমন করা। সরকার তার দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে সংবিধান নিজের পথে চলবে।’’ সরকারের উদ্দেশে তাঁর বার্তা, “সরকারের দায় এই ধরনের হিংসা বন্ধ করা৷ সরকারকে বাস্তব পরিস্থিতির দিকে নজর দিতে হবে। না হলে ফল ভোগ করার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।”

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *