শিলিগুড়ি: ২১-এর নির্বাচনের আগে মূলত সংগঠনকে জোড়দার করতেই উত্তরবঙ্গ সফরে এলেন বিজেপি’র সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা৷ সোমবার শিলিগুড়িতে সামাজিক সমুহ বৈঠক থেকে আরও একবার রাজ্য থেকে তৃণমূল সরকারকে উৎখাত করার ডাক দিলেন তিনি৷ তুলোধোনা করলেন তৃণমূল সরকারকে৷
আরও পড়ুন- বিলি হবে ত্রাণ! পরিযায়ী ‘উমা’র কষ্ট তুলে ধরবে বেহালার পুজো মণ্ডপ
এদিন নাড্ডা বলেন, দিওয়ালি ও ছট পর্যন্ত দেশের মানুষের জন্য বিনা মূল্যে রেশনের ব্যবস্থা করেছে নরেন্দ্র মোদী সরকার৷ ১০ কোটি কৃষকের জন্য প্রধানমন্ত্রী কিষাণ সম্মান নিধি পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে৷ এর মধ্যে ৮ কোটি ৬০ লক্ষ মানুষ ইতিমধ্যেই এই সুবিধা পেয়ে গিয়েছেন৷ কিন্তু বাংলায় এই প্রকল্প লাগু হতে দেয়নি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার৷ বাংলার ৭৬ লক্ষ কৃষককে এই প্রকল্প থেকে বঞ্চিত রাখা হয়েছে৷ সেই সঙ্গে তাঁর প্রতিশ্রুতি, বাংলায় বিজেপি সরকার এলে এক মাসের মধ্যেই এ রাজ্যে কৃষক সম্মান নিধি চালু করা হবে৷
তিনি আরও বলেন, কেন্দ্রীয় সরকারের আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পকেও এ রাজ্যে ঢুকতে দেওয়া হয়নি৷ দেশের ৫৫ কোটি মানুষের কাছে আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্প পৌঁছে দেওয়া হয়েছে৷ কোনও জাত-পাতের ভিত্তিতে নয়, কাজের ভিত্তিতে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির মানুষকে প্রতি বছর চিকিৎসার জন্য ৫ লক্ষ টাকা দেওয়ার বন্দোবস্ত করেছে কেন্দ্রীয় সরকার৷ কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্য পশ্চিমবঙ্গের মানুষ এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত৷ নাড্ডা বলেন, ‘‘আয়ুষ্মান প্রকল্পের কথা তুললেই মমতাজি বলেন হবে না৷ কী হবে না? হবে৷ এপ্রিল মাসে সব হবে৷ প্রথমে আপনি পদ্মে ভোট দেবেন৷ তার পর আমরা আয়ুষ্মান ভারত আনব৷’’
আরও পড়ুন- হাইকোর্টের নির্দেশে দর্শকশূন্য মণ্ডপ, কী বললেন রাজনৈতিক নেতারা?
তিনি আরও বলেন, আগে ১৮ হাজার গ্রামে বিদ্যুৎ ছিল না৷ এর মধ্যে এক হাজার গ্রাম ছিল পশ্চিম বাংলার৷ কেন্দ্রে বিজেপি সরকার আসার পর ২২ কোটি মানুষের ঘরে আলো পৌঁছে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী৷ এই জমানায় প্রতিটি আধিকারিককে কাজ করতে হয়েছে৷ প্রত্যেক ক্যাবিনেট বৈঠকে মোদীজি বারবার গ্রামগুলির উন্নয়নের খবর নিয়েছেন৷ তিনি বলেন, এক সময় বিদ্যুৎ সংযোগ নিতে গেলে অফিসারদের তোয়াজ করতে হত৷ কিন্তু মোদী জমানায় অফিসাররা নিজে গিয়ে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়৷ ফর্ম পূরণের পাঁচ দিনের মধ্যে বিদ্যুৎ পৌঁছনো হয়৷
এছাড়াও তিনি বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে ২০ কোটি মহিলার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে তিন মাসে ৫০০ টাকা করে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে৷ আত্মনির্ভর ভারত প্রকল্পে ১ লক্ষ কোটি টাকা শুধুমাত্র ফার্মার প্রোডিউসার্স অর্গানাইজেশন তৈরি করার জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে৷ এই সংস্থা কৃষকের উন্নতি সাধনের জন্য নিজেদের গ্রামে যে বিকাশমূলক কাজ করাতে চায়, তা এই টাকা থেকে খরচ করা হবে৷ কোল্ড স্টোরেজ থেকে জেনারেল স্টোরেজ সব কিছুই তৈরি করা হবে৷ সেই সঙ্গে তাঁর আর্জি, আপনাদের লোকালের জন্য ভোকাল হতে হবে৷ ওয়ার্ল্ড ব্যান্ডিং করানোর দায়িত্ব সরকারের৷ পশ্চিমবাংলার স্থানীয় দ্রব্যের তালিকা তৈরি করে একটা রোড ম্যাপ তৈরি করার নির্দেশও দেন দলীয় সাংসদদের৷ সেই সকল পণ্যকে আত্মনির্ভর ভারত প্রকল্পের অধীনে ওয়ার্ল্ড ব্র্যান্ডিং করা হবে বলেও জানান নাড্ডা৷
তিনি জানান, শ্রমিক আইনে পরিবর্তন আনা হয়েছে৷ এর ফলে সুক্ষিত হবে রাজ্যের চা শ্রমিকরাও৷ সিএএ বিলও পাশ হয়ে গিয়েছে৷ গোর্খা জনজাতিকে স্বীকৃতি দেওয়া হবে৷ ক্ষমতায় এলে যদুবংশীদের সমস্যাও দূর করা হবে৷ বিভিন্ন উপজাতিদের দাবি পূরণ করা হবে৷ মেডিসিন হাব গড়ে তোলা হবে৷ বিজয়া দশমীর উত্তরবঙ্গে রেল নিয়ে যাবতীয় সমস্যার সামাধানও করা হবে৷
আরও পড়ুন – BIG BREAKING: পুজোর মণ্ডপে নো-এন্ট্রি, হবে দর্শকশূন্য, রায় ঘোষণা হাইকোর্টের
তৃণমূল সরকারকে একহাত নিয়ে নাড্ডা বলেন, রাজ্যে কোনও সংগঠনকে টাকা দেওয়া হচ্ছে৷ কাউকে বলা হচ্ছে নির্দিষ্টি দাবি থেকে সরে আসতে, আবার কাউকে বলা হচ্ছে দাবি তুলে নিতে৷ যারা চার বছর কোনও কাজ না করে পঞ্চম বছরে লোভনীয় প্রতিশ্রুতি দেয়, এটা তাদেরই কাজ৷ আর এই কাজ করে একমাত্র তৃণমূল৷ বিজেপি যা বলে তা করে দেখায়৷ বিজেপি সামজকে জুড়ে রাখে, আর তৃণমূল সমাজকে ভাঙে৷ ভোট ব্যাঙ্ক রাজনীতি করে তৃণমূল৷ এতদিন হিন্দুদের প্রতি অনেক অবিচার করেছে৷ এখন ভুল বুঝে সকলকে জোড়ার চেষ্টা শুরু করেছেন মুখ্যমন্ত্রী৷