বোলপুর: দিন কয়েক ধরে বয়ে চলা প্রবল শৈত্যপ্রবাহ এদিনও উপস্থিত ছিল সমান শক্তি নিয়েই। ঠান্ডা হাড়কাঁপানী। তা সত্বেও মঙ্গলবার কুয়াশার চাদরে মোড়া মকর সংক্রান্তির ভোরে এবারও অজয়ের পাড় ভরল থিকথিকে ভীড়ে। অসংখ্য মানুষ শামিল হলেন অজয় নদে পুণ্য স্নানে। বেলা গড়াতেই আরও মানুষ ভীড় জমাবেন কবি জয়দেবের স্মৃতি বিজরিত বীরভূমের কেন্দুবিল্ব গ্রামে জয়দেব মেলার সূচনা লগ্নে বলে আশা সকলের।
প্রচলিত রয়েছে, বীরভূম ও বর্ধমান জেলার মাঝবরাবর বয়ে যাওয়া অজয় নদের ধারে কেন্দুবিল্ব গ্রামে জন্ম লক্ষ্ণন সেনের সভাকবি জয়দেবের। গীতগোবিন্দের রচয়িতা জয়দেব যিনি পরিচিত সংস্কৃত সাহিত্যের শেষ বড় মৌলিক কবিরূপে। কথিত আছে, মকর সংক্রান্তিতে গঙ্গায় স্নান করতে কবি প্রতিবছর যেতেন কাটোয়ায়। একবার অসুস্থ হয়ে পড়ায় কাটোয়া যাওয়া সম্ভব না হওয়ায় তিনি মুষড়ে পড়েন। রাতে স্বপ্ন দেখেন তাঁর জন্য গঙ্গা উজান বেয়ে এসে মিলেছেন অজয়ে। মনে করা হয়, সেই থেকেই অজয় নদে মকর স্নান ও মেলার সূচনা। মকর সংক্রান্তিতে অজয়ের ঘাটে স্নান করলে গঙ্গাস্নানের পূণ্য অর্জন হয় বলে বিশ্বাস। তার জেরেই রাজ্যে ও দেশের নানা প্রান্ত থেকে পূণ্যস্নানের জন্য এ দিন আসেন মানুষ।
শুধু মকরস্নান ও রাধাবিনোদ মন্দিরে পুজো দেওয়া এবং মেলায় ঘোরা নয়, জয়দেব কেঁদুলির মেলায় উপরি পাওনা, বিনা খরচে আখড়ায় থাকা-খাওয়া, কীর্তন ও বাউলের সুরে মজে থাকা। এত সংখ্যক মানুষের সমাগমে কোনও অনভিপ্রেত ঘটনা যাতে না ঘটে, মেলা যাতে সুষ্টু ভাবে সম্পন্ন হয় তারজন্য সতর্কতা নিয়েছে প্রশাসন। প্রশাসনিক সূত্রে খবর, আগে মেলার প্রবেশপথের দুই ধারে মেলা বসত। বছর দুয়েক ধরে মেলা পুরোপুরি সরে গিয়েছে অজয়ের চরে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, প্রচুর অস্থায়ী শৌচাগার ও ডাস্টবিন রাখা হয়েছে মেলা প্রাঙ্গণে। রয়েছে পানীয় জলের ব্যবস্থা। প্রচুর পুলিশকর্মী, পুলিশ বুথ, সিসিটিভি ক্যামেরা, দুর্যোগ মোকাবিলা দল, গাইড ম্যাপ মিলিয়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থাও ঢেলে সাজানো হয়েছে।