কলকাতা: বিধানসভা নির্বাচনে বাংলায় খারাপ ফল করেছে বিজেপি। তারপর থেকে একাধিক ইস্যুতে রাজ্যের শাসক দলকে আক্রমণ করেছে তারা এবং শাসক শিবির পাল্টা আক্রমণ করে দাবি করেছে যে নির্বাচনের ফল হজম করতে না পেরে এসব করছে গেরুয়া শিবির। ভোট পরবর্তী হিংসা ইস্যু তো ছিলই তার মধ্যে, উত্তরবঙ্গ ভাগের দাবি তুলে রীতিমতো বিতর্কের আগুনে ঘি ঢালেন বিজেপি সাংসদ জন বার্লা। ব্যাপক উত্তেজনা সৃষ্টি হয় এবং এর কারণ একাধিক বিজেপি নেতা এবং বিধায়ক তাঁর দাবি সমর্থন করেন। যদিও রাজ্য বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব স্পষ্ট জানায় যে এই মন্তব্য তারা সমর্থন করে না। খোদ রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক থামানোর চেষ্টা করেন। যদিও এখন কেন্দ্রীয় সরকারের নতুন মন্ত্রীদের মধ্যে স্থান পেয়েছেন এই বঙ্গভঙ্গের ‘হোতা’ জন বার্লাই। তাহলে কি পরোক্ষভাবে কিছু ইঙ্গিত দিতে চাইল বিজেপি?
গতকাল কেন্দ্রীয় সরকারের মন্ত্রিসভা সম্প্রসারিত হয়েছে এবং অনেক নতুন মুখ জায়গা পেয়েছে। আবার অনেকের জায়গা বদল হয়েছে, একই সঙ্গে অনেকে মন্ত্রিত্ব হারিয়েছেন। বাংলার দুই জন প্রতিমন্ত্রী দেবশ্রী চৌধুরী এবং বাবুল সুপ্রিয় পদ হারিয়েছেন কিন্তু চারজন বাংলার সাংসদ কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় জায়গা করে নিয়েছেন। প্রত্যেকেই হয়েছেন প্রতিমন্ত্রী। এই চারজন নতুন মন্ত্রীর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ভাবে রয়েছেন আলিপুরদুয়ারের সেই সাংসদ জন বার্লা, যিনি কয়েক সপ্তাহ আগে উত্তরবঙ্গ ভাগের দাবি তুলেছিলেন। তাঁর বক্তব্য ছিল, উত্তরবঙ্গের উন্নয়নের জন্যই তাদের আলাদা রাজ্য ঘোষণা করতে হবে। কারণ এর আগের সরকারের মতো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারও উত্তরবঙ্গের মানুষের উন্নয়ন করেনি। সেখানকার মানুষের চাকরি এবং প্রগতির স্বার্থেই উত্তরবঙ্গকে আলাদা রাজ্য করা উচিত বলে দাবি তোলেন তিনি। অবশ্যই এরপরে রাজ্য তথা দেশজুড়ে হই হই শুরু হয়ে যায়। বিজেপির রাজ্য নেতৃত্ব ব্যাপারটিকে গুরুত্ব না দিতে চাইলেও এখন সেই বঙ্গভঙ্গ চাওয়া সাংসদকে মন্ত্রী করে অন্য প্রশ্ন এবং বিতর্ক দুটোই তুলে দিল বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব। তৃণমূল কংগ্রেস ইতিমধ্যেই অভিযোগ করতে শুরু করেছে যে, এই সিদ্ধান্ত নিয়ে আসলে বঙ্গভঙ্গের পরিকল্পনা করছে বিজেপি। তাদের সাফ দাবি, এর আগেও পাহাড়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার মধুর দিয়েছিল বিজেপি আর এখন এই ধরনের একজন সাংসদকে মন্ত্রী করে একই রকম উস্কানি দিতে চাইছে তারা। প্রসঙ্গত, আলিপুরদুয়ারের সাংসদ জন বার্লাকে সংখ্যালঘু উন্নয়ন মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী করা হয়েছে।
আরও পড়ুন- সাত বছরেও মিলল না পূর্ণমন্ত্রী, নিশীথ-শান্তনুদের ‘অচল পয়সা’ বলে খোঁচা কুণালের
বিষয়টি নিয়ে অবশ্যই বিতর্ক শুরু হয়ে গিয়েছে। কারণ তৃণমূল কংগ্রেস মনে করছে যে এই সিদ্ধান্ত নিয়ে আদতে বাংলা ভাগ করতে চাইছে বিজেপি, একই সঙ্গে বাংলার মানুষের মধ্যে উশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে চাইছে তারা। তাদের আরও বক্তব্য, বাংলায় বিশ্রীভাবে পরাজিত হওয়ার পর এখন বিভাজনের রাজনীতি করছে বিজেপি। কিন্তু তাদের এই পরিকল্পনা কোনো ভাবেই সফল হতে দেবেন না তারা। উল্লেখ্য, বিজেপির অন্য এক সাংসদ সৌমিত্র খাঁও আলাদা জঙ্গলমহল রাজ্য দাবি করেছিলেন। তাঁর মন্তব্যের প্রেক্ষিতেও যথেষ্ট অস্বস্তিতে পড়ে রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব এবং তাঁর মন্তব্যকেও ব্যক্তিগত মন্তব্য হিসাবে দেখানো হয়। পরে অবশ্য দিল্লি তলব করে সৌমিত্রকে ভর্ৎসনা করা হয় বলেও অনুমান করা হয়েছে। তবে যেভাবে সম্প্রতি বিজেপি শিবির থেকে বঙ্গভঙ্গের দাবি তোলা হয়েছে তা অবশ্যই রাজ্যের তথা দেশের রাজনৈতিক মহলকে উত্তেজক করে তুলেছে।