কলকাতা: বিগত কয়েক মাস ধরে পাণ্ডবেশ্বর তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়ক জিতেন্দ্র তিওয়ারিকে নিয়ে কম নাটক হয়নি। হঠাৎ তৃণমূল কংগ্রেস তথা রাজ্যের পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ তুলে সংবাদ শিরোনামে চলে আসেন তিনি। পরবর্তী ক্ষেত্রে পদ ত্যাগ করে বিজেপিতে যোগদানের চেষ্টা করেন। শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে দেখা করে বৈঠক থেকে শুরু করে, তৃণমূল কংগ্রেস বিরোধী একাধিক মন্তব্য, গেরুয়া শিবিরের নাম লিখানোর জন্য অনেক চেষ্টা করার পরেও সেই সময় সুযোগ পাননি তিনি। কারণ অবশ্যই বিজেপির কিছু নেতার অসম্মতি। যাদের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য নাম সাংসদ বাবুল সুপ্রিয়। বাবুলের সঙ্গে জিতেন্দ্রর সম্পর্ক কেমন তা আলাদা করে বলার দরকার পড়ে না। তবে আজ বিজেপি যে প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেছে, সেখানে জ্বলজ্বল করছে পাণ্ডবেশ্বরের বিজেপি প্রার্থীর নাম। জিতেন্দ্র তিওয়ারি। বিজেপিকে কি অস্বস্তিতে পড়তে হবে না?
তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে বিজেপিতে যাওয়ার পদক্ষেপ নিয়েছিলেন জিতেন্দ্র কিন্তু সাফল্য পাননি প্রথমে। মূলত বাবুল সুপ্রিয় এবং অগ্নিমিত্রা পলের বিরোধিতার জেরে বিজেপির জিতেন্দ্রকে নিজেদের দলে শামিল করতে চায়নি। পরবর্তী ক্ষেত্রে জিতেন্দ্র তিওয়ারি বহু চেষ্টা করেছেন তৃণমূল কংগ্রেসের ফিরে আসতে। এমনকি প্রত্যক্ষভাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম নিয়ে তিনি দাবি করেছেন, তৃণমূল কংগ্রেস সুপ্রিমোর ভরসা রাখবেন তিনি। এর মাঝে একাধিকবার ইঙ্গিতপূর্ণ ফেসবুক পোস্ট দিয়েছেন জিতেন্দ্র তিওয়ারি যা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে সব শেষে তৃণমূল কংগ্রেস জিতেন্দ্রকে আবারো একটা সুযোগ দিয়েছিল এবং তাঁকে জাতীয় মুখপাত্র করেছিল। তবে সকলকে অবাক করে দিয়ে কার্যত এক সপ্তাহের মধ্যে দল বদল করে ফেলেন জিতেন্দ্র তিওয়ারি। বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের উপস্থিতিতে বিজেপি শিবিরে নাম লেখান তিনি। আর তখন থেকেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করে, তাহলে বিজেপির যে সমস্ত নেতারা এতদিন অসম্মতি জানাচ্ছিলেন, তাদের এখন কী বক্তব্য। এতদিন ধরে তৃণমূল কংগ্রেসের যাদের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছে বিজেপি, একে একে তারাই তাদের দলে নাম লেখাচ্ছে এবং বিজেপি তাদের একেবারে সামনের সারিতে জায়গা দিচ্ছে। তাহলে কি বিজেপির ভাবমূর্তি আদতে নষ্ট হচ্ছে না? প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
আরও পড়ুন- ‘মমতা ব্যানার্জি মানুষের এনার্জি, পালিয়ে যায় না’, বার্তা দিলেন ‘দিদি’
তৃণমূল কংগ্রেসে থাকাকালীন আসানসোলে জিতেন্দ্র তিওয়ারি বিরুদ্ধে একাধিক বার আক্রমণ করেছেন সাংসদ বাবুল সুপ্রিয়। দুজনের সম্পর্ক এবং আসানসোলে বিজেপি-তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকদের সার্বিক অবস্থা কী তা সকলেই জানেন। এই অবস্থায় এতদিন ধরে বিজেপির কর্মী-সমর্থকেরা যার বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলল, এখন সেই জিতেন্দ্র তিওয়ারি দলবদল করে বিজেপিরই প্রার্থী! তাহলে কি বিক্ষোভ এবং আন্দোলন যথাযথ নয়? ইতিমধ্যেই বিজেপির হেস্টিংসের অফিসের সামনে প্রার্থী তালিকা নিয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে একাধিক কর্মী এবং সমর্থনক ব্যাপক বিক্ষোভ করেছেন। সেই অবস্থা নিয়ন্ত্রণে আনতে কার্যত নাজেহাল বিজেপি শিবির। ড্যামেজ কন্ট্রোল করতে একাধিক সাংসদকে প্রার্থী করতে হয়েছে তাদের। এখন কি আবার নতুন করে ঝামেলা শুরু হবে, সেটা জানার অপেক্ষায় অধিকাংশ।