কলকাতা: পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমকে বিস্ফোরক চিঠি লিখে ইতিমধ্যেই রাজ্য রাজনীতি সরগরম করে ফেলেছেন আসানসোলের পৌর প্রশাসক এবং বিধায়ক জিতেন্দ্র তিওয়ারি। চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেছেন, কেন্দ্রের স্মার্ট সিটি প্রকল্পের ২০০০ কোটি টাকা আসানসোল পায়নি শুধুমাত্র রাজনৈতিক কারণে। ফলে উন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছে। ইতিমধ্যে এই চিঠির প্রেক্ষিতে চরম অস্বস্তিতে পড়েছে রাজ্যে তৃণমূল কংগ্রেস সরকার। তবে এই চিঠি দিয়ে শুধুমাত্র তৃণমূলকে অস্বস্তিতে ফেলেননি জিতেন্দ্র, বড় সুবিধে করে দিয়েছেন বিজেপিকেও! কারণ যে দুটি শব্দের ব্যবহার তিনি করেছেন, সেটাই বিজেপির চরম ফায়দা করে দেবে বলে অনুমান রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের। সেই দুটি শব্দ হল: রাজনৈতিক কারণ।
রাজ্যে এসে হোক কিংবা বাইরের রাজ্য থেকে বাংলাকে আক্রমণ করে হোক, বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব থেকে শুরু করে বাংলার গেরুয়া নেতারা প্রত্যেকে দাবি করেন, রাজ্যের তৃণমূল সরকার কেন্দ্রের একাধিক প্রকল্প রাজ্যে চালাতে দেয় না। সেক্ষেত্রে তারা রাজনৈতিক কারণকেই সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দেন। এবার আসানসোলের বিধায়ক জিতেন্দ্র তিওয়ারি চিঠিতে উল্লেখিত রাজনৈতিক কারণ শব্দ দুটি মারাত্মক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। কারণ চিঠির কথা এবং বিজেপি নেতৃত্বের কথায় মিল পাওয়া যাচ্ছে। এক্ষেত্রে বিজেপি আরো জোর দিয়ে দাবি করতে পারে যে তৃণমূলের নেতারাই জানেন যে কেন কেন্দ্রীয় একাধিক প্রকল্প বাংলায় চলে না। এতদিন ধরে যে দাবি তারা করে আসছিলেন সেই দাবিতে এখন যেন তারা সীলমোহর দিতে পারেন।
কেন্দ্রের একাধিক প্রকল্পের মধ্যে স্মার্ট সিটি প্রকল্প যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্প, কিষান সম্মান যোজনা। এইরকম একাধিক প্রকল্প বাংলায় চালু হয়নি কারণ সেখানে রাজ্যের নিজস্ব প্রকল্প রয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে। এই প্রেক্ষিতে তৃণমূলের তরফে অভিযোগ, একাধিক এমন প্রকল্পে রাজ্য সরকারের থেকে বেশি টাকা বরাদ্দ করা হয় কেন্দ্রের তুলনায়, কিন্তু কেন্দ্র দাবি করে তাদের প্রাধান্য দিতে হবে বেশি। এখানেই বিরোধ বাঁধে। তাই রাজনৈতিক কারণেই যে এই সমস্ত প্রকল্প বাংলায় চালু হয়না তার একটা বড় প্রমাণ বিজেপি নেতারা দিয়ে দিচ্ছেন। এখন জিতেন্দ্র তিওয়ারি এই চিঠি তাদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং তাৎপর্যপূর্ণ। বলা যায়, আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের দোরগোড়ায় এটাই বিজেপির কাছে অন্যতম বড় হাতিয়ার হয়ে যাবে।
উল্লেখ্য, জিতেন্দ্র তিওয়ারির অভিযোগ, কেন্দ্রের মোদী সরকারের স্মার্ট সিটি প্রকল্পের ২০০০ কোটি টাকা দেয়নি রাজ্য, ফলে ব্যাহত হয়েছে এলাকার উন্নয়ন৷ পুরমন্ত্রীকে বিস্ফোরক চিঠির পর রানিগঞ্জের দু’টি কলেজের গভর্নিং বডির সভপতির পদ থেকেও ইস্তফা দিয়েছেন তৃণমূলের এই দাপুটে নেতা৷ চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেছেন, কেন্দ্রীয় সরকারের স্মার্ট সিটি প্রকল্পের জন্য নির্বাচিত হয়েছিল আসানসোল। সেই অর্থে কঠিন বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ সহ একাধিক কাজ করার কথা ছিল। যদিও রাজনৈতিক কারণে সেই টাকা আসানসোলকে নিতে দেয়নি রাজ্য সরকার। কেন্দ্রের অর্থের বিকল্প হিসাবে রাজ্য সরকারের তরফে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা থাকলেও সেই প্রতিশ্রুতি পালন করা হয়নি।