ভোটের অঙ্ক বেঁধে দেবে উন্নয়ন বনাম গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব! তুঙ্গে চর্চা

ভোটের অঙ্ক বেঁধে দেবে উন্নয়ন বনাম গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব! তুঙ্গে চর্চা

জলপাইগুড়ি: বাংলার মাটিতে এখন ভোটের প্রচারে কোমর বেঁধে নেমে পড়েছে প্রতিটি রাজনৈতিক শিবির। দক্ষিণবঙ্গে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের সম্ভাবনার মাঝে সব শিবিরকেই এখন ভাবাচ্ছে উত্তরের জেলাগুলির ভোট-চিত্র। তবে চা ও কৃষিক্ষেত্রে উন্নয়নের নজিরকে হাতিয়ার করে এবার এককালের বামদুর্গ জলপাইগুড়ি জেলায় বাজিমাত করতে উদ্যত রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। আর তৃণমূলের প্রচারে এবার হাতে রয়েছে ওই জেলায় সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল স্থাপন, কলকাতা হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চ চালু, মেডিক্যাল কলেজ স্থাপন, জলপাইগুড়ি শহরে জল প্রকল্প সহ রাস্তা, সেতু নির্মাণের মতো কিছু গরম ইস্যু। এসবের পাশাপাশি জলপাইগুড়ি জেলায় দলের অন্দরে গোষ্ঠীদ্বন্দ ভাবাচ্ছে শাসক দলকে, আবার এই গোষ্ঠীদ্বন্দ ইস্যুতেই শাসক দলকে বিঁধে নিজেদের মাটি শক্ত করতে উদ্যত বিরোধী শিবিরগুলি।

জলপাইগুড়ি জেলার মাল, নাগরাকাটা, ধূপগুড়ি ও রাজগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্র মূলত চা বাগান অধ্যুষিত এলাকা, যেখানে রয়েছেন প্রচুর আদিবাসী ও রাজবংশী শ্রমিক। এই শ্রমিকদের ভোট যেকোনো নির্বাচনেই একটা বড় ফ্যাক্টর হয়ে উঠতে পারে বলেই তাদের শান্ত রাখতে রাজ্য সরকার ইতিমধ্যে ‘সুন্দরী’ প্রকল্পে তাদের নতুন বাড়ি বানিয়ে দিয়েছে বেশ কিছু। তাছাড়া ওই এলাকায় নেপালিভাষী ভোটারদের ভোট নিজেদের শিবিরে টানার জন্য ওই এলাকায় বিমল গুরুংকে বিশেষ দায়িত্ব দিয়েছে তৃণমূল।

গত বিধানসভা নির্বাচনে জলপাইগুড়ি জেলার ৭ টি বিধানসভা আসনের মধ্যে ৬ টিতেই জয়ী হয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেস এবং একটি আসন জিতেছিল কংগ্রেস। কিন্তু গত লোকসভা নির্বাচনে ওই জেলায় বিজেপির ব্যাপক উত্থান শাসক দলের কপালে ফেলেছে চিন্তার ভাঁজ। আর নিজেদের এই গতিকে বজায় রাখতে জলপাইগুড়ি জেলায় নিজেদের সাংগঠনিক কাঠামো সাজিয়েছে গেরুয়া শিবিরও। এদিকে করোনাকালে এলাকায় তৃণমূল বিধায়কদের অনুপস্থিতি সেখানের মানুষের মনে ক্ষোভের সঞ্চার করেছে অনেকটাই। পাশাপাশি, জলপাইগুড়ি পুরসভার চেয়ারম্যান মোহন বসুকে পদ থেকে সরিয়ে সেখানে পাপিয়া পালকে প্রশাসক হিসাবে বসানোর পর জেলা সভাপতি কিষান কল্যাণী ও মোহন বসুর মধ্যে দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে আসে, যে কারণে অস্বস্তিতে পড়েছে শাসক দল। অতএব প্রচুর উন্নয়ন সত্ত্বেও শাসক দলের সাফল্য পাওয়ার পিছনে এখন তাদের দলের অন্দরে ‘গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব’ই সবথেকে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে বলে মনে করছে বিশেষজ্ঞ মহল।

তবে ডুয়ার্সের এই জেলায় এখনও নিজেদের টিকিয়ে রেখেছে বাম-শিবির, তাছাড়া কংগ্রেসের একটি আসন থাকার জন্য তাদেরও মাটি রয়েছে এই জেলায় কিছু। এদিকে গেরুয়া শিবিরের বিশেষ প্রস্তুতির মাঝে রাজ্যের শাসক দল কি মুখ থুবড়ে পড়বে, নাকি রাজ্য সরকারের ‘স্বাস্থ্যসাথী’, ‘দুয়ারে সরকার’, ‘পাড়ায় সমাধানে’র মতো প্রকল্প করবে বাজিমাত? এই প্রসঙ্গে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মত: জলপাইগুড়ি জেলার কিছু আসনে লড়াই হবে ‘ত্রিমুখী’।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *