কম খরচে ভেন্টিলেটর বানিয়ে চমক দিলেন যাদবপুরের দুই পড়ুয়া

কম খরচে ভেন্টিলেটর বানিয়ে চমক দিলেন যাদবপুরের দুই পড়ুয়া

কলকাতা: করোনা পরিস্থিতি সামাল দিতে দিশেহারা গোটা বিশ্ব৷ এরই মাঝে করোনা মোকাবিলায় কম দামের ভেন্টিলেটর বানিয়ে তাক লাগালেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই পড়ুয়া। সেই সঙ্গে আরও একবার সেরার শিরোপা ছিনিয়ে বিশ্বমঞ্চে প্রশংসিত যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়৷

সম্প্রতি ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ায় আয়োজিত এক আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেক্ট্রনিকস অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশনস ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের তৃতীয় বর্ষের দুই পড়ুয়া অন্বেষা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অচল নিলহানি৷ প্রতিযোগিতায় তাঁদের তৈরি ভেন্টিলেটরের মডেল গৃহীত হয় এবং এই বিভাগে জয়ী হন তাঁরা৷ তাঁদের সাফল্যে উচ্ছ্বসিত গোটা বিশ্ববিদ্যালয়৷ শুভেচ্ছা জানিয়েছেন উপাচার্য সুরঞ্জন দাস।

জানা গিয়েছে বর্তমানে এই মডেলের উপর কাজ করছেন ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞরা। করোনা সংক্রমণে প্রবলভাবে ক্ষতিগ্রস্ত মার্কিন মুলুক৷ এই অবস্থায় করোনা মোকাবিলায় কম খরচে কী করে মেডিক্যাল যন্ত্র বা সামগ্রী তৈরি করা যায়, তার উপর প্রতিযোগিতার আয়োজন করে আমেরিকার ওই বিশ্ববিদ্যালয়৷ এই প্রতিযোগিতার উদ্যোক্তা ছিল সেন্টার ফর ইমার্জিং অ্যান্ড নেগলেগটেড ডিজিজ (সিইএনডি)। গবেষক, বিজ্ঞানী এবং পড়ুয়া মিলিয়ে ৮৪ জন অংশগ্রহণ করেছিলেন প্রতিযোগিতায়।

এই ৮৪ জন প্রতিযোগীকে নিয়ে ছোট ছোট দল তৈরি করা হয়। অন্বেষা এবং অচলের দলে ছিলেন আরও তিনজন। তবে তাঁরা ছিলেন অন্য দায়িত্বে৷ মূলত ভেন্টিলেটর তৈরির কাজ করেছেন এই দুই পড়ুয়া৷ মার্চের শেষে অনলাইনেই প্রেজেন্টেশন জমা দেন তাঁরা। মোট ১৪টি প্রস্তাব জমা পড়েছিল। সেখান থেকে অন্বেষাদের তৈরি ভেন্টিলেটরের মডেলটি বেছে নেন উদ্যোক্তাদের। তাঁদের মতে, এই মডেল বাকি ভেন্টিলেটরের থেকে অনেক বেশি নিখুঁত।

যাদবপুরের ওই দুই পড়ুয়া বলেন, এই যন্ত্র যেভাবে তৈরি করা হয়েছে, তাতে এয়ার ফ্লো সিস্টেমটি অনেকটাই নিয়ন্ত্রিত। এতে সেন্সর লাগানো হয়েছে৷ এই সেন্সর নানা রকমের কাজ নিয়ন্ত্রণ করবে। তাঁরা বলেন, একাধিক ভেন্টিলেটর ঘেঁটে দেখেছি আমরা৷ ওই ভেন্টিলেটরগুলিতে নানা ত্রুটি দেখা গিয়েছিল। আমরা চেয়েছিলাম নতুন রূপে ভেন্টিলেটরের ডিজাইন করতে এবং সেটা হয়েছে। এই মডেলের উপর এখন ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা শুরু করেছে। এই ভেন্টিলেটরকে আরও কী করে তা উন্নত করা যায়, কিংবা এর সঙ্গে নতুন কোনও বৈশিষ্ট্য যুক্ত করা যায় কি না, তা নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা চালাচ্ছেন আমেরিকার ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞরা। পরীক্ষা শেষ হলে এই ভেন্টিলেটর হাসপাতালে ব্যবহারের জন্য পাঠানো হতে পারে। এই ভেন্টিলেটরে ব্যবহৃত জিনিসের  দামের ভিত্তিতেই এই যন্ত্রের মূল্য ঠিক করা হয়েছে।

বিভাগীয় অধ্যাপক ও প্রাক্তন বিভাগীয় প্রধান পি ভেঙ্কটেশ্বরন বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে তামাম বিশ্বের চিকিৎসক থেকে সাধারণ মানুষ, সকলেই কম খরচে স্বাস্থ্যক্ষেত্রের পরিষেবা  চাইছেন৷ যাদবপুরের এই দুই পড়ুয়া কম খরচে ভেন্টিলেটর তৈরি করে সমাজের সাহায্যে এগিয়ে এসেছেন। করোনা যেভাবে থাবা বসিয়েছে, তাতে আগামীদিনে আরও ভেন্টিলেটর লাগবে। অল্প খরচে ভেন্টিলেটর তৈরি করা গেলে, উপকৃত হবে আমাদের রাজ্যের মানুষও৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *