কলকাতা: একবিংশ শতকে জাতপাত নিয়ে নিন্দনীয় ঘটনার ঘটল কলকাতার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক মেরিনা মুর্মুকে জাত তুলে আক্রমণ করা হল সোশ্যাল মিডিয়ায়। এ প্রসঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়া সহ সর্বত্র নিন্দার ঝড় উঠেছে। অধ্যাপিকা জানিয়েছেন এই পরিস্থিতিতে অনেকেই তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছেন। আবার অনেকেই তাঁর বিরুদ্ধে আক্রমণ চালিয়েছে। এই ঘটনায় রবিবার যাদবপুর ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন এবং অল বেঙ্গল ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন নিন্দায় সরব হয়েছে।
দেশজুড়ে এখন চলছে করোনা পরিস্থিতি। এর মধ্যে কলেজে বিশ্ববিদ্যালয়গুলি যাতে পরীক্ষা পিছিয়ে দেয় তার সমর্থনে ২ সেপ্টেম্বর ফেসবুকে লিখেছিলেন ইতিহাসের এই অধ্যাপিকা। সোশ্যাল মিডিয়ায় তিনি লিখেছিলেন, 'কারও জীবনের থেকে একটা শিক্ষাবর্ষ মূল্যবান হতে পারে না।' অধ্যাপিকা এই পোস্ট করার পরই শুরু হয় বিতর্ক। তাঁর সাঁওতাল ও আদিবাসি পরিচয় নিয়ে প্রথমে কটাক্ষ করেন এক ছাত্রী। তবে তিনি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী নন। বেথুন কলেজের বাংলা বিভাগের তৃতীয় বর্ষে পড়েন তিনি। সোশ্যাল মিডিয়ায় তিনি লেখেন, যাঁরা কোটা সংরক্ষণ নিয়ে ভাবেন তাঁদের মাথা থেকে এই ধরনের চিন্তা আসতে পারে। ওই ছাত্রী লিখেছেন যে মেরুনা মুর্মু আদিবাসী হওয়ার কারণেই পড়াশোনা এবং চাকরি ক্ষেত্রে সুযোগ সুবিধা পেয়েছেন।
আরও পড়ুন: করোনা আক্রান্ত মন্ত্রী, লকডাউন ভেঙে হোম-যজ্ঞে আরোগ্য কামনা তৃণমূল কর্মীদের
প্রসঙ্গত মেরুনা প্রেসিডেন্সি কলেজের ছাত্রী ছিলেন এবং দিল্লি জহরলাল নেহেরু ইউনিভার্সিটির গবেষক ছিলেন। বেথুন কলেজের ছাত্রীর মন্তব্যের পর রুখে দাঁড়ান তিনি। সরাসরি প্রশ্ন তোলেন, তাঁর আদিবাসী পদ্ধতির উপর ভিত্তি করে কীভাবে যোগ্যতা বিচার করা হল, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি। এই ঘটনার পর বেথুন কলেজের আরও কয়েকজনকে অধ্যাপিকাকে হেনস্তা করেন বলে অভিযোগ। তবে তাঁর পর বেথুন কলেজ স্টুডেন্ট কমিটির পক্ষ থেকে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। সেখানে জানানো হয়, এমন ঘটনা অত্যন্ত নিন্দনীয় এবং হতাশাজনক। তাদের কলেজের পড়ুয়া জানেন না যে ভারতে এখনও অনেকে জাতি ও বর্ণের নামে অনেক সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়। সে ক্ষেত্রে সংরক্ষণ অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। গোটা ঘটনাটিকে লজ্জাজনক এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সম্মানহানি বলে মন্তব্য করা হয়েছে বিবৃতিতে। বেথুন কলেজের সমস্ত পড়ুয়া তরফ থেকে ওই ছাত্রীর মন্তব্যের জন্য স্টুডেন্ট কমিটি নিন্দা জানাচ্ছে।
এই ঘটনার পর যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় টিচার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক পার্থপ্রতিম রায় জানিয়েছেন, ইতিহাসের ওই অধ্যাপিকার উপর আক্রমণ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্ত শিক্ষকদের ওপর আক্রমণ। প্রায় একইরকম বিবৃতি প্রকাশ করে ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন অল বেঙ্গল ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন।