যাদবপুর-কাণ্ডে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্ক তুঙ্গে! ধাক্কা খাবে ‘ইন্ডিয়া’ জোট?

যাদবপুর-কাণ্ডে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্ক তুঙ্গে! ধাক্কা খাবে ‘ইন্ডিয়া’ জোট?

cm-announces-salary-hike-for-bengal-anganwadi-workers

নিজস্ব প্রতিনিধি:ব যাদবপুরে মর্মান্তিক ছাত্র মৃত্যুর ঘটনাকেও এবার রাজনীতিকরণ করে ফেললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যা নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে জোর চর্চা শুরু  হয়েছে। ছাত্র মৃত্যুর পর সব মহল থেকে ঘটনার তীব্র নিন্দা করা হয়েছে। কিন্তু সেখানে বিষয়টির মধ্যে কেউ রাজনীতিকে জড়ানোর চেষ্টা করেননি। সেই জায়গা থেকে মুখ্যমন্ত্রী বিষয়টি নিয়ে যেভাবে বামেদের নিশানা করেছেন, তাতে হতবাক সবাই।

বিগত কয়েক দশক ধরেই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে বাম ছাত্র সংগঠনগুলির আধিপত্য রয়েছে। সেখানে শত চেষ্টাতেও যাদবপুরে বলার মতো প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি তৃণমূল। এই পরিস্থিতিতে ছাত্র মৃত্যুর ঘটনায় বামেদের তীব্র আক্রমণ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর দাবি এই ঘটনায় ‘মার্কসবাদী’রা জড়িত। বেহালায় ‘ফ্রিডম অ্যাট মিডনাইট’ কর্মসূচির মঞ্চ থেকে নদিয়ার বগুলার বাসিন্দা ওই  ছাত্রের মৃত্যুতে সোমবার দুঃখপ্রকাশ করার পাশাপাশি বিষয়টি নিয়ে বামেদের নিশানা করেছেন তিনি।‌গত বুধবার গভীর রাতে ছাত্রের  মৃত্যু হয়। এরপর মৃত ছাত্রের  বাবার সঙ্গে ফোনে কথা বলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই প্রসঙ্গ তুলে মমতা বলেছেন, “ছাত্রের বাবা বলেন, দিদি জানেন ও খুব কাঁদত। বলত আমার উপর অত্যাচার হচ্ছে। আমি যাব ঠিক করেছিলাম। বগুলা থেকে কলকাতা। বুঝতে পারিনি ওরা অত্যাচার করে আমার ছেলেকে ছাদ থেকে ফেলে দেবে।” এরপরই সুর চড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “কারা এরা? মার্কসবাদী! বড় বড় কথা বলছে। কখনও বিজেপি, কংগ্রেসের সঙ্গে ঘর করছে। তৃণমূল ওদের এক নম্বর শত্রু। বোধ বলে কিছু নেই। আবেগ, বিবেক নেই। ওখানে পুলিশ ঢুকতে দেয় না। সিসিটিভি লাগাতে দেয় না। যাদবপুর আতঙ্কপুর হয়ে গিয়েছে।”

সেই সঙ্গে ছাত্রমৃত্যুর ঘটনায় দুঃখপ্রকাশ করে মমতা বলেন, “আমি দুঃখিত, স্তম্ভিত। আমি সব জায়গায় গেলেও যাদবপুরে যাই না। ওরা পড়াশোনায় ভাল হতে পারে। কিন্তু শুধু পড়াশোনায় ভাল হলে হয় না। সবাই খারাপ না। পড়ুয়ারা ভাল। কিন্তু কয়েকটা আগমার্কা সিপিএম আছে। তারা মনে করে নতুন ছেলেমেয়েরা গ্রামবাংলা থেকে আসলেই অত্যাচার করা অধিকার। জামাকাপড় খুলে নিচ্ছে। আজও লজ্জা নেই।” উল্লেখ্য বিরোধীদের ‘ইন্ডিয়া’ জোটে তৃণমূলের সঙ্গে একই মঞ্চে সিপিএম থাকায় নীচুতলার বাম কর্মী-সমর্থকরা প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। এই পরিস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রী যেভাবে যাদবপুরে ছাত্র মৃত্যুর ঘটনায় বামেদের নিশানা করলেন, তার যথেষ্ট রাজনৈতিক তাৎপর্য আছে বলে মনে করা হচ্ছে। তাই প্রশ্ন উঠছে, এতে কি ‘ইন্ডিয়া’ জোট ধাক্কা খাবে? তৃণমূলের অন্য কোনও নেতা-নেত্রী যদি এমন কথা বলতেন তাতে হয়ত বিষয়টি নিয়ে এতটা বিতর্ক তৈরি হতো না। কিন্তু খোদ তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একথা বলায় নিঃসন্দেহে গোটা বিষয়টি অন্য মাত্রা পেয়েছে। সিপিএম যে মমতার বক্তব্যকে একেবারেই ভাল চোখে দেখছে না তা পরিষ্কার। তাই মমতার এই বক্তব্যের প্রভাব ‘ইন্ডিয়া’ জোটে পড়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা আছে। এমনিতেই ‘ইন্ডিয়া’ জোটে তৃণমূলের সঙ্গে থাকায় সিপিএমের নীচুতলায় বিদ্রোহ শুরু হয়ে গিয়েছে। সেই জায়গা থেকে মমতার এই বক্তব্য নিঃসন্দেহে তাতে ঘৃতাহুতি দিল।‌ তাই মমতার এই বক্তব্যের অভিঘাত ‘ইন্ডিয়া’ জোটে কতটা পড়ে, মমতা সম্পর্কে সিপিএম আরও কড়া অবস্থান নেয় কিনা, এখন সেটাই দেখার।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

2 + 15 =