মানুষ হতে চাওয়ার মাশুল কি বেকারত্ব? সরকারের উদাসীনতায় প্রশ্ন গানের সুরে!

মানুষ হতে চাওয়ার মাশুল কি বেকারত্ব? সরকারের উদাসীনতায় প্রশ্ন গানের সুরে!

 

কলকাতা:  দেশজুড়ে এখন শীতের আমেজ৷ শৈত্যের পারদ নামছে চড়চড়িয়ে৷ কিন্তু রাজ্য জুড়ে বয়ে চলেছে নির্বাচনের উষ্ণ স্রোত৷ বইছে গরম হাওয়া৷ ক্ষমতা দখলের লড়াই সামিল যুযুধান রাজনৈতিক শিবিরগুলির আক্রমণ ও পাল্টা আক্রমণে চড়ছে উষ্ণতার পারদ৷ ভোট টানতে রাজ্য সরকারের তুরুপের তাস ‘দুয়ারে সরকার’৷ একাধিক প্রকল্পে নাম লেখানোর চাবিকাঠি৷ কিন্তু চাকরি কোথায়? যাঁরা শিক্ষক হতে চেয়েছিলেন, তাঁরা আজও হবু হয়েই রয়ে গিয়েছেন৷ বেকারত্বের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দিতে ‘ব্যর্থ’ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার৷ দীর্ঘ প্রতিবাদ আন্দোলনেও চাকরি পাননি শিক্ষকরা৷ গানের ছন্দে উঠে এল তারই প্রতিবাদ৷ 

আরও পড়ুন- বনগাঁয় পড়ল ‘বাংলার মীরজাফর’ লেখা শুভেন্দুর ফ্লেক্স, জুতোর মালা পরিয়ে পুড়িয়ে দিল তৃণমূল কর্মীরা

ব্যঙ্গাত্মক সুরেই তাই বলা হয়েছে, ‘আইকম বাইকম তাড়াতাড়ি, হবু মাস্টার শ্বশুরবাড়ি, মাস্টার আজও হবুই আছে, দরজায় সরকার৷’ এই হবু মাস্টারদের ঝুলিতে রয়েছে বিএড-এর ডিগ্রি৷ রয়েছে বেসিক ট্রেনিং৷ কিন্তু তাঁদের কপালে চাকরি জোটেনি৷ দীর্ঘ প্রায় ৭ বছর ধরে থমকে ছিল উচ্চ প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া৷ মেধাতালিকায় অনিয়ম-সহ গুচ্ছ অভিযোগ তুলে দায়ের হয় মামলা৷ নিয়োগের উপর জারি করা হয় স্থগিতাদেশ৷ দীর্ঘ শুনানি পর্বের পর নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করে নতুন করে নিয়োগের রায় দেয় কলকাতা হাইকোর্ট৷ এই রায়ে বড়সড় ধাক্কা খায় রাজ্য সরকার৷ 

তাইতো বলা হচ্ছে, ‘আসল ছ্যাঁকা মন্ত্রী দিলেন, তোদের চাকরি কী দরকার? ওরে দরজায় সরকার৷ কড়া নেড়ে বলল তেড়ে তোদের চাকরি কী দরকার?’ শিক্ষিক নিয়োগের দবি তো রয়েছেই৷ পাশাপাশি রাজ্যে রয়েছে পার্শ্ব শিক্ষককে অবিলম্বে পূর্ণ শিক্ষকের মর্যাদা দিয়ে স্থায়ীকরণ এবং বেতন কাঠামো প্রদানের দাবি৷ দীর্ঘ দিন দফতরে দফতরে ঘুরেও সুবিচার পাননি এই পার্শ্বশিক্ষকরা৷ 

সরকারের দাবি, সব কিছু করে দেওয়া হয়েছে৷ ভাতা পাচ্ছেন রাজ্যের বেকার যুবকরা৷ সত্যিই তো চাকরি কি দরকার! দিনের পর দিন বাড়ির বাইরে থেকে রাত জেগে নিজেদের তৈরি করেছিলেন এই হবু শিক্ষকরা৷ কত রাত তাঁরা দু’চোখের পাতা এক করেননি, তার হিসেব নেই৷ শুধুমাত্র চাকরির আশাতেই তাঁদের দিন কেটেছিল৷ স্বপ্ন ছিল চাকরি পেলেই দূর হবে সংসারের অভাব অনটন৷ বিশ্বাস ছিল চাকরি পাবেই৷ গানের কথাতেও সেই প্রবল যন্ত্রণার কথা ফুটে উঠেছে৷ ‘দেখতে দেখতে ছ’টা বছর, সেই ছেলেটা গুনছে প্রহর, স্বপ্নগুলো দেয় ধর্না, শুনছে না সরকার৷ তোদের চাকরি কি দরকার?’’ 

আরও পড়ুন- ফের স্বমহিমায় গুরুং, বিনয় তামাং-অনিত থাপাকে পাহাড় ছাড়ার হুমকি গোর্খা নেতার

মানুষ হতে চাওয়ারই কি মাশুল এটা? না জানি কত ছেলে মেয়ের বাবা-মা চলে গিয়েছে৷ মাথার ঋণের বোঝা৷ হয়তো ভিটেটাও নেই৷ কিন্তু ‘সরকার বলছে চাকরি কি দরকার?’ রাজ্যে পরিবর্তনের উপহার হিসাবে কি রাজ্যের যুবক যুবতীদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে বেকারত্বের এই যন্ত্রণা? উঠেছে প্রশ্ন৷ পাঁচ লক্ষ শূন্য আসন পড়ে রয়েছে৷ কিন্তু সরকারের তাতে কোনও কেয়ার নেই৷ ‘বলছে উঠোন থাকবে বাঁকা, নাচতে জানা চাই!’

কিন্তু দশ বছর আগে বাম জমানায় অন্তত বছরে একবার শিক্ষকতায় নিয়োগ করা হত৷ এই আমলে সেই পাট ঘুঁচে গিয়েছে৷ শিক্ষকরাই সমাজের ভিত বুনবে৷ বিজ্ঞাপনের পিছনে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ না করে শিক্ষক নিয়োগ করা হলে অন্তত প্রাণে বাঁচতো অসংখ্য সংসার৷ ড. সৌমিক দাসের গানের কথায়, বাঁচার এই তাগিদ থেকেই আজ হয়তো অনেকেই বলছেন ‘ফের আকাশ হোক লাল’৷ ভাইরাল সেই গান৷ 


 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

three × four =