অপরাধীদের ধরতে আগামী দিনে তদন্তকারীদের আরও কড়া চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে?

অপরাধীদের ধরতে আগামী দিনে তদন্তকারীদের আরও কড়া চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে?

নিজস্ব প্রতিনিধি: প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ বান্ধবী তথা মডেল অভিনেত্রী অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের দুটি ফ্ল্যাট থেকে কোটি কোটি টাকা উদ্ধার হতে দেখেছে গোটা রাজ্য। নগদ ৫০ কোটি টাকা-সহ প্রচুর সোনার গয়না উদ্ধার করেছিলেন ইডি অফিসাররা। যে ঘটনায় রাজ্য জুড়ে শোরগোল পড়ে যায়। ঘটনায় তীব্র অস্বস্তির মধ্যে পড়ে পার্থকে সঙ্গে সঙ্গে দল থেকে সাসপেন্ড করতে বাধ্য হয়েছিল তৃণমূল। পরবর্তীকালে বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগে তৃণমূলের একাধিক নেতা-বিধায়ক বা প্রশাসনিক কর্তাব্যক্তিরা গ্রেফতার হলেও কারও বাড়ি থেকেই এভাবে নগদ টাকা উদ্ধার হতে দেখা যায়নি।

সদ্য প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী তথা বর্তমান বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক গ্রেফতার হওয়ার পর সেই একই ভাবে দেখা গেল তাঁর বাড়ি থেকে কোনও নগদ টাকাই উদ্ধার হয়নি।  জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক আইনের ভাষায় অভিযুক্ত, এখনও তিনি দোষী প্রমাণিত হননি। অন্যান্য ধৃতদের ক্ষেত্রে একই কথা প্রযোজ্য। তবে এটা অস্বীকার করার উপায় থাকে না যে, কারও বাড়ি থেকে লক্ষ লক্ষ বা কোটি কোটি টাকা উদ্ধার হলে জনমানসে তার বড় প্রভাব পড়ে। আইনজ্ঞ মহল মনে করছেন এতে অভিযুক্তদের দোষী প্রমাণিত করতে সুবিধা হয় তদন্তকারী অফিসারদের। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করলে একাধিক দুর্নীতির ঘটনায় এখনও পর্যন্ত যাদের গ্রেফতার করেছে সিবিআই বা ইডি, তাঁদের মধ্যে পার্থের বান্ধবী ছাড়া কারও বাড়ি থেকেই নগদ টাকা উদ্ধার হতে দেখা যায়নি। তাই প্রশ্ন, যে সমস্ত অভিযুক্ত মনে করছেন তাঁদের  বাড়িতে তল্লাশি হতে পারে, তাঁরা কী সেটা আগাম আঁচ করে টাকা বা অন্যান্য নথিপত্র সরিয়ে ফেলছেন? সমস্ত ফুটপ্রিন্ট মুছে ফেলছেন তাঁরা?

ঘটনা হল অভিযুক্তদের মোবাইল ফোন ঘেঁটে হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাট থেকে প্রচুর তথ্য প্রমাণ হাতে পাচ্ছেন তদন্তকারীরা। তবে কী যারা দুর্নীতিতে যুক্ত তাঁরা নিজেদের মোবাইল ফোন থেকে সমস্ত তথ্যপ্রমাণ মুছে ফেলার কাজ বহু আগেই শুরু করে দিয়েছেন? উল্লেখ্য একাধিক দুর্নীতির ঘটনায় অভিযুক্তদের বাড়ি থেকে ডায়েরি উদ্ধার হয়েছে। জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক গ্রেফতার হওয়ার পরেও তাঁর এক ঘনিষ্ঠের বাড়ি থেকে মেরুন রঙের ডায়েরি উদ্ধার হয়েছে। সেখান থেকে বেহিসেবি লেনদেন সংক্রান্ত একগুচ্ছ চাঞ্চল্যকর তথ্য ইডি আধিকারিকরা হাতে পেয়েছেন বলে খবর। তবে কি আগামী দিনে যারা দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত হয়েছেন তাঁরা বাড়ি থেকে ডায়েরি-সহ অন্যান্য যাবতীয় তথ্য প্রমাণ মুছে ফেলবেন? এই প্রশ্ন স্বাভাবিকভাবেই উঠতে শুরু করেছে। সেক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় তদন্তকারীদের কাজটা যে নিঃসন্দেহে আরও কঠিন হয়ে যাবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তখন অপরাধীদের ধরতে আগের চেয়ে অনেক বেশি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে তাঁদের। তবে বর্তমান যুগে অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে মোবাইলের তথ্য প্রমাণ কেউ মুছে ফেললেও সেগুলি আবার পুনরুদ্ধার করা যায়। কিন্তু সেটা সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। এছাড়া বাড়িতে থাকা লেনদেন সম্পর্কিত ডায়েরি বা খাতা সরিয়ে ফেললেও তদন্তকারীদের কাজটা নিঃসন্দেহে কঠিন হয়ে পড়বে। তাই আগামী দিনে বিভিন্ন দুর্নীতির ঘটনার তদন্তে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী আধিকারিকরা কীভাবে এগোবেন, কীভাবে তথ্য প্রমাণ খুঁজে তদন্তের আরও গভীরে যেতে পারবেন তাঁরা, কীভাবে তাঁরা মিসিং লিঙ্কের সন্ধান করবেন, তা নিয়ে এখন থেকেই চর্চা শুরু হয়েছে। সেই কঠিন চ্যালেঞ্জ হাতে নিয়ে কীভাবে তাঁরা কাজ করেন সেটাই দেখার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *