বিশ্বজিৎ পাল, ক্যানিং: সুন্দরবনের প্রবেশ দ্বার দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্যানিং শহর। এই শহরের ঐতিহাসিক গুরুত্ব বড় কম নয়। লর্ড ক্যানিংয়ের নামাঙ্কিত এই শহর। শহরে প্রধান জলের উৎস মাতলা নদী। মূলত বিদ্যাধরী, করতোয়া এবং আঠারোবাঁকি এই তিন নদীর মিলিত হয়েই মাতলা নদীর সৃষ্টি। দিনের পর দিন রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে পলি পড়ে নদীখাত অগভীর হয়ে পড়েছে।
ফলে জলের অভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সুন্দরবনের বিখ্যাত ম্যানগ্রোভ অরন্য। পাশাপাশি মাতলা নদীর খাতের ওপরে অবৈধ মাছের ভেড়িও প্রবল ক্ষতি করছে ম্যানগ্রোভের। নদীর বাঁধ কেটে নোনা জল ঢুকিয়ে ভেড়িতে চলছে অবৈধ মাছের চাষ। ম্যানগ্রোভের জঙ্গল ধ্বংস করে নদী খাতেই গড়ে উঠেছে অবৈধ ঘরবাড়ি। এলাকা জবরদখল করে চলছে দোকানপাট। অভিযোগ শাসকদলের একশ্রেণীর নেতার মদতে চলছে এই কাজ। ফলে লক্ষ লক্ষ টাকার মুনাফা ওই নেতাদের পকেটে ঢুকলেও পরিবেশের অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে। বিজেপির দক্ষিণ ২৪ পরগনা পূর্ব জেলা সম্পাদক সঞ্জয় নায়েক বিষয়টিতে শাসকদলের দিকেই আঙুল তুলেছেন।
ক্যানিং এসডিও অফিস, ক্যানিং-১ বিডিও অফিস, সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্প অফিস থেকে ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে চলছে এসব কাজ। অভিযোগ সব জেনেও নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন বিভাগীয় দফতরগুলি। এবিষয়ে বনমন্ত্রীকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন। মাতলা নদীর সংলগ্ন এলাকায় মাছের ভেড়িগুলির মধ্যে তৈরি হয়েছে ছোট ছোট ঘর। স্থানীয় মানুষের অভিযোগ এই ঘরগুলিতে অসামাজিক কার্যকলাপ চলতে থাকে। বেশ কয়েক বছর আগে মাতলা-২ অঞ্চলের রাজারলাট গ্রামের এক সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রী মাতলা নদীর পাড়ের এক ভেড়িতে গণধর্ষণের শিকার হয়। পুলিশ অভিযোগ পেয়ে তদন্তে নেমে ঘটনায় ৩ যুবককে গ্রেফতার করে।
ভেড়িকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ বাঁধলে গুলিতে মৃত্যু হয় এক যুবকের। গত ১৩ সেপ্টেম্বর মাছের ভেড়ির পাড় থেকে পুলিশ এক যুবতীর দেহ উদ্ধার করে। ফলে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে ক্যানিং জুড়ে। অবৈধ ভেড়ি ঘিরে অসামাজিক কার্যকলাপে চিন্তিত ক্যানিংয়ের মানুষ অবিলম্বে সমস্যার সমাধানের দাবি জানিয়েছেন। যদিও নির্বিকার প্রশাসন কতটা কাজ করবে তা নিয়ে সন্দিহান তারা।