কলকাতা: আশঙ্কাকে সত্যি করে নতুন সপ্তাহের শুরুতে রাজ্যে একলাফে অনেকটা বেড়ে গিয়েছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা।গত সপ্তাহে দ্বিতীয় দফার লকডাউন ঘোষণার সময় প্রধানমনন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী জানিয়েছিলেন সামনের দু সপ্তাহ খুব জরুরী ও আশঙ্কা জনক। সেকথা সত্যি প্রমাণ করে রবিবার থেকে সোমবার দুপুরের মধ্যে রাজ্যে আরও ৫৪ জনের দেহে করোনা ভাইরাসের অস্তিত্ব পাওয়া গিয়েছে ।এর মধ্যে রয়েছেন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আরও ৪ চিকিৎসক।মেডিক্যাল কলেজের প্রসূতি বিভাগে এক মহিলার করোনা ধরা পড়ার পর, ওই বিভাগে কর্মরতদের কোভিড-১৯ পরীক্ষা করা হয়। তাঁদের মধ্যে এখনও পর্যন্ত ৭ চিকিৎসকের রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে । তবে স্বস্তির খবর এই যে ৫৫ জনের রিপোর্ট এসেছে নেগেটিভ। এর মধ্যে চিকিৎসক ছাড়াও নার্স এবং স্বাস্থ্যকর্মীরা রয়েছেন। রাজ্যের করোনা মানচিত্রে এক ধাক্কায় সংক্রমণের হারে এতটা বৃদ্ধি এই প্রথম ।তবে বিশেষজ্ঞারা দাবি করেছেন বিগত কয়েক দিনে রাজ্যে করোনার নমুনা পরীক্ষার হার কিছুটা বেড়েছে। তাই আরও বেশি করে সংক্রণের ঘটনা সামনে আসছে।
মুখ্যসচিব রাজীব সিনহা এদিন নবান্নে জানিয়েছেন, বিশেষজ্ঞ কমিটি নতুন করে কোন রিপোর্ট না দেওয়ায় রাজ্যে করোনা মৃতের সংখ্যা ১২ই রয়েছে বলে তিনি জানান। গত ২৪ ঘণ্টায় সাতজন আক্রান্ত সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গিয়েছেন। মুখ্যসচিব জানিয়েছেন এপর্যন্ত রাজ্যে ৭৩ জন করোনা আক্রান্ত সুস্থ হয়ে উঠেছেন। তিনি জানান এদিন থেকে কলকাতা ও হাওড়ায় র্যাপিড টেস্ট শুরু হয়েছে। আগামী কাল থেকে অন্যান্য জেলাতেও তা শুরু হবে। এখনও পর্যন্ত রাজ্যে ৫৪৬৯ জনের নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। এদিকে টেস্টিং কিট নিয়েও কেন্দ্র রাজ্য চাপান-উতোর অব্যাহত। করোনার নমুনা পরীক্ষার জন্য কেন্দ্রের পাঠানো কিট ত্রুটিপূর্ণ থাকায় পরীক্ষা করতে সময় অনেক বেশি লাগছে বলে মুখ্যসচিব এদিন ফের অভিযোগ করেছেন। নবান্নে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, আগে এই পরীক্ষার কিট ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ভাইরোলজি থেকে আসলেও হঠাৎই তা পরিবর্তন করে নাইসেড থেকে পাঠানো হচ্ছে। অনেক কিট ত্রুটিপূর্ণ হওয়ায় নমুনা পরীক্ষার ফলাফল জানা যাচ্ছে না ।ত্রুটিপূর্ণ কিটগুলি দ্রুত পরিবর্তন করে দেওয়ার জন্য রাজ্যের তরফে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক কে চিঠি পাঠানো হয়েছে বলেও মুখ্য সচিব জানিয়েছেন।এছাড়া যে এলাকাগুলিতে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি, সেখানে আরও কড়া করে লকডাউন করা হবে ।তবে প্রশাসনের তরফে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিষের যোগান সুনিশ্চিত করার পরেই কোন এলাকাকে সম্পূর্ণভাবে লকডাউন করা হবে। সুফল বাংলার স্টল থেকেও ওই সব এলাকায় নানা অত্য়াবশ্যকীূয় পণ্য পৌঁছে দেওয়া হবে। মুখ্যসচিব বলেন, শুধু মাত্র আইনি পদক্ষেপ করে লকডাউন সফল করা মুশকিল। মানুষকে এর প্রয়োজনিয়তা অনুভব করে নিজেদের সচেতন হয়ে ঘরে থাকতে তিনি আবেদন জানান।এখন থেকে রাজ্যে দুপুর ১২টা পর্যন্ত মিষ্টির দোকান আর ফুলের দোকান খোলা রাখা হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।
অন্যদিকে মেডিক্যাল কলেজ সূত্রে খবর, রবিবার দুপুরে তিনজন চিকিৎসক ও দু’জন রোগীর শরীরে করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ে। ওই তিন চিকিৎসকের মধ্যে একজন আইসোলেশন ওয়ার্ডে কাজ করতেন বলে জানা গিয়েছে। বাকি দু’জন কাজ করতেন প্রসূতি বিভাগে। যে দু’জন রোগী সংক্রামিত হন, তাঁরা মেডিসিন বিভাগে ভর্তি ছিলেন বলে খবর। জানা গিয়েছে, সোমবার সকালেই ফের খবর পাওয়া যায়, আরও চারজন চিকিৎসক ও একজন রোগীর শরীরে সংক্রমণ ধরা পড়েছে। চারজন চিকিৎসকের মধ্যে একজন প্রসূতি বিভাগের সিনিয়র চিকিৎসক। বাকি তিনজন সেই বিভাগেরই ইন্টার্ন। অর্থাৎ আক্রান্ত সাত চিকিৎসকের মধ্যে ছ’জনই প্রসূতি বিভাগে কাজ করতেন। অন্যদিকে মেডিসিন ওয়ার্ডেই ভর্তি থাকা আর এক রোগীর শরীরে কোভিড ১৯ পজিটিভ পাওয়া যায়।হাসপাতাল সূত্রে খবর, দিন কয়েক আগে মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন নারকেলডাঙার বাসিন্দা এক প্রসূতি। সদ্যোজাত শিশু জন্ম নেওয়ার পর, তাঁর করোনার উপসর্গ দেখা যায়। পরীক্ষার পর জানা যায়, মা এবং শিশু দুজনে করোনা পজিটিভ। তত ক্ষণে ওই প্রসূতির সংস্পর্শে চলে এসেছেন সেখানকার চিকিৎসক-নার্স-স্বাস্থ্যকর্মীদের একাংশ। এরপর এই পরীক্ষা চালানো হয় কলকাতা মেডিকেল কলেজ এবং হাসপাতালে চিকিৎসক নার্স এবং স্বাস্থ্য কর্মীদের উপর।