দেবময় ঘোষ: শিরোনামটি বিশেষ করে তাদের জন্যই যারা এতদিন পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির মুখ্যমন্ত্রীত্বের মুখ খুঁজছিলেন। আগামী মে মাসে বিজেপি যদি প্রথমবারের জন্য পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় আসতে পারে তবে মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে পদ্ম-শিবিরের প্রথম এবং সর্বোত্তম পছন্দ যে তিনিই হবেন তা নিয়ে পার্টির বৃহৎ অংশের কোনও দ্বি-মত নেই। যদিও, একটি রেজিমেন্টেড পার্টির ভোট-কৌশল এবং নিয়ম নিষ্ঠাকে গুরুত্ব দিয়ে দিলীপবাবুর নাম প্রকাশ্যে আনা হয়নি। কারণ, বিজেপির নিয়ম অনুযায়ী কোনও সংশ্লিষ্ট রাজ্যে নির্বাচন জয়ের পর সেই রাজ্যের বিধানসভায় পরিষদীয় দল সম্মিলিত ভাবে যে নাম প্রস্তাব করে কেন্দ্রীয় পার্টিতে পাঠায় সেই নামের উপরেই বিবেচনা করে মান্যতা দেওয়া হয়। এবং, সাম্প্রতিক কালে বিজেপি যে কটি রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনে জিতেছে , তার মধ্যে অসম এবং হরিয়ানা ছাড়া কোনও রাজ্যেই মুখ্যমন্ত্রী প্রার্থী কে তা নির্বাচনের আগে ঘোষণা করা হয়নি।
আরও উল্লেখযোগ্য ভাবে, কিছুদিন আগেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলে গিয়েছিলেন – পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি সরকার গড়ছেই। সেই সরকারের মুখ্যমন্ত্রী বাঙালি। এই বাংলায় জন্মেছেন। বাংলায় কথা বলেন। তার পর থেকেই আর অনেকের বিশেষ সন্দেহ নেই। কারণ দার্জিলিং থেকে দক্ষিণ ২৪ পরগনা ছুটে বেড়ান দিলীপ ঘোষ। অকৃতদার এই বিজেপি কর্মী শুধুই রাজ্যের সভাপতি নন – গেরুয়া শিবিরের জনপ্রিয়তম মুখ। এক সময়কার রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সঙ্ঘের অন্যতম সদস্য এখনও সঙ্ঘের চোখে প্রিয় ছাত্র। গত পাঁচ-ছ’বছরে বিজেপি যদি নিজের ক্ষমতায় কোনও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব কে এই বঙ্গে জনপ্রিয় করে থাকে – তিনি হলেন দিলীপ ঘোষ। তার রাজনৈতিক মেধা, ব্যক্তিত্ব বা বিতর্কিত ভাষণ নিয়ে প্রশ্ন থাকতেই পারে, কিন্তু আম-জনতার মনে তার জনপ্রিয়তা কে মান্যতা দিয়েছ স্বয়ং দিল্লির পার্টি নেতৃত্ব।
২০১৫ সালে বিজেপির রাজ্য সভাপতি হন দিলীপ ঘোষ। পার্টি সংবিধান অনুযায়ী ২০১৮ সালেই সভাপতি হিসাবে নিজের প্রথম অধ্যায় শেষ করেছেন। কিন্তু দল তাঁকে দ্বিতীয় অধ্যায়ের সূচনা করতে বলেছিল অনেক আগেই। পার্টি সংবিধান অনুযায়ী, একজন সভাপতি দুই বার পরপর তিন বছর করে সভাপতিত্ব করতে পারেন। কিংবা ৬ বছর টানা সভাপতিত্ব করতে পারেন – সেক্ষেত্রে যেটা আগে হবে সেটিই তার সভাপতিত্বের শেষ দিন হিসাবে ধরবে পার্টি। দিলীপ ঘোষের ক্ষেত্রে ২০২১ পর্যন্ত সভাপতির চেয়ারে থাকা নিশ্চিত করেছে পার্টি। কারণ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করার মুখ রাতারাতি তৈরি করা সম্ভব নয়। সেক্ষেত্রে মাত্র ৬ বছরের মধ্যে অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে নিজেকে এক অন্য উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছেন দিলীপবাবু। বিজেপি-জনতা তাকে মমতার বিকল্প ভাবছেন , পার্টির অন্য কেউ সেই দৌড়ে নেই।
২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষকেই ‘রেডি’ রাখতে চেয়েছিল বিজেপি। কিন্তু সাংসদ দিলীপ এবং রাজ্য সভাপতি দিলীপ – এই দুই সত্ত্বাকে কিছুটা আলাদা ভাবেই চাইত কেন্দ্রীয় পার্টি। পার্টি চাইত, সংসদে দাঁড়িয়ে পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক চিত্র তুলে ধরুক দিলীপ। সারা দেশ জানুক পশ্চিমবঙ্গের প্রতিটি গ্রামের কাহিনী। ঠিক এই ভাবেই দিলীপ ঘোষ সারা দেশের কাছেই বাঙালি হিসাবে প্রধান মমতা-বিরোধী মুখ হয়ে উঠুক। সেই কাজে বিজেপি অনেকটাই সফল। আগামী মে মাসে বিজেপি যদি পশ্চিমবঙ্গে সরকার তৈরি করার সুযোগ পায় তবে মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে দিলীপ ঘোষের শপথ বাক্য পাঠ করার ষোল আনা সম্ভাবনা রয়েছে।