হলদিয়া: বিধানসভা ভোটের আগে পশ্চিমবঙ্গের মানুষকে খুশি করতে বাংলায় ভাষণ দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। উত্তরাখণ্ডের বিপদের দিনেই বাংলায় সফরে এলেন প্রধানমন্ত্রী। হলদিয়ায় বিরাট জনসভায় শোনালেন বাংলার জয়গান। তাও আবার গোদা বাংলা ভাষায়। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ভরসা করে বাংলার মানুষ শুধু নির্মমতা পেয়েছে, বলে চড়া সুরে তৃণমূল সরকারকে আক্রমণ করেন তিনি।
বছরের শুরুতেই কালো দিন উত্তরাখণ্ডে। ধস নেমে নিখোঁজ বহু। এখনও পর্যন্ত মৃত ৩। এই অবস্থাতেও বাংলার সফর বাতিল করলেন না প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। অসম থেকে সোজা নামলেন হলদিয়া। যোগ দিলেন বিরাট জনসভায়। বক্তব্যের শুরুতেই উত্তরাখণ্ডের ঘটনায় শোক জ্ঞাপন করলেন তিনি। বাংলার মানুষের মন জয় করতে ভাষণ শুরু করলেন পরিষ্কার বাংলা ভাষায়। বললেন, “মেদিনীপুরের এই পবিত্র মাটিতে আসতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছি। শহীদ ক্ষুদিরাম ও মাতঙ্গিনীর রক্তে রক্তিম হয়েছে এই মাটি। এই মাটির বীর সন্তান বিদ্যাসাগর মহাশয় বাঙালিকে ‘বর্ণপরিচয়’ দিয়েছেন। ভারত-সহ গোটা দুনিয়াকে দিশা দেখানো বীর মনীষী, সাধকদের ভূমি বাংলাকে নতমস্তকে প্রণাম জানাই আমি।”
প্রধানমন্ত্রী আরও জানান, “শেষবার নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মজয়ন্তীতে বাংলায় এসেছিলাম। আজ হলদিয়া-সহ বাংলার বিকাশের সঙ্গে জড়িত কেন্দ্রগুলিতে ৫ হাজার কোটি টাকার শিলান্যাসে এসেছি। ভবিষ্যতে বাংলায় আরও যোজনা হবে, রোজগারের পথও তৈরি হবে। আধুনিক উড়ালপুল, উন্নত হলদিয়া ডক কমপ্লেক্স বিভিন্ন রকমের সুবিধার বিকাশ করবে। উড়ালপুল ছাড়াও গ্যাস ও ইন্ধনের সঙ্গে জড়িত তিনটি বড় প্রজেক্ট রয়েছে। এতে হলদিয়ার মানুষের খুব লাভ হবে।”
কিন্তু এত কিছুর পরেও সুকৌশলে শাসক দল তৃণমূল সরকারকে আক্রমণ করতে ভোলেননি প্রধানমন্ত্রী। তিনি বললেন, “বাংলা এসেছি একটা প্রশ্ন করতে চাই। পরাধীনতার সময় থেকেই বাংলা দেশের সবচেয়ে বিকাশিত রাজ্যগুলির মধ্যে অন্যতম ছিল। এখানকার সব রকম পরিকাঠামো দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ছিল। সেই সময়ে এখানে অনেক রোজগারের পথ ছিল। বাংলার মানুষ, কৃষক পরিশ্রমী। এখানকার জমি উর্বর। এখানকার ছাত্র-ছাত্রীরা বিদেশে চিরকালই আলাদা সম্মান পেয়ে এসেছে। কিন্তু ঠিক কী কারণে বাংলা সেই উন্নয়নের অগ্রগতি বজায় রাখতে পারল না?”
প্রধানমন্ত্রীর আরও বক্তব্য, “বাংলা আগে যেরকম ছিল যদি গত ১০ বছরে তার কিছু মাত্র বিকাশ হত তাহলে আজ বাংলা কোথা থেকে কোথায় চলে যেত। এই হলদিয়া বন্দর এককালে দেশের ব্যবসার মূলকেন্দ্র ছিল। কিন্তু এমন কী হয়ে গেল যাতে এই বন্দর তার গৌরব হারাল? কী হল যাতে দেশের বিভিন্ন বন্দর ব্যবসায় এগিয়ে গেল আর পশ্চিমবঙ্গ এত পিছিয়ে গেল? মমতা দিদিকে ভরসা করে বাংলার মানুষ শুধু নির্মমতা পেয়েছে, আর কিছু নয়।” ভোটের মুখে এভাবেই প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্নবানে শতচ্ছিন্ন তৃণমূলের রাজত্বকাল!