ন’মাস কাটে ‘জলঘুম’-এ! তিন মাস দেখা মেলে মুকুটমণিপুরের শতাব্দী প্রাচীন মন্দিরের

ন’মাস কাটে ‘জলঘুম’-এ! তিন মাস দেখা মেলে মুকুটমণিপুরের শতাব্দী প্রাচীন মন্দিরের

a12d6dde1ffce7f44184e7920a9241c7

কলকাতা: মুকুটমণিপুর৷ ভ্রমণ পিপাসু বাঙালির পর্যটনের এক জনপ্রিয় ডেস্টিনেশন৷ মুকুটমণিপুরের সুবিশাল জলাধারের আকর্ষণে ছুটে যান পর্যটকরা৷ কিন্তু, অনেকেই হয়তো জানেন না এই জলাধারের মধ্যে লুকিয়ে রয়েছে এক বিস্ময়৷ যার দেখা মেলে বছরে মাত্র তিনমাস৷

আরও পড়ুন- কালী বিতর্ক অব্যাহত, সাধকদের নিয়ে রাজ্যপালের কাছে শুভেন্দু

মুকুটমণিপুরের জলাধারের এক প্রান্তে দাঁড়িয়ে রয়েছে শতাব্দী প্রাচীন লক্ষ্মী-জনার্দনের মন্দির। তবে এই মন্দিরের বিশেষত্ব হল, ১২ মাস কেউ এই মন্দিরের দর্শন পায় না। কারণ, মাত্র তিন মাস জলের উপরে থাকে এই মন্দির। বাকি ৯ মাস ডুবে থাকে মুকুটমণিপুর জলাধারের নীচে। বর্ষার বৃষ্টি নামার পরেই কাঁসাই ও কুমারী নদীর জলস্তর বাড়তে থাকে৷ সেই জল ঢুকতে শুরু করে মুকুটমণিপুরের জলাধারে। সেই জলেই ডুবে যায় জলাধারের এক প্রান্তে থাকা এই শতাব্দী প্রাচীন মন্দির। গ্রীষ্মকালে জলস্তর নামলে ফের  লক্ষ্মী-জনার্দনের মন্দির জেগে ওঠে।

স্থানীয়দের কথায়, মুকুটমণিপুরে ঠিক যে জায়গায় জলাধারটি তৈরি করা হয়েছে আগে সেখানে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ১৭৩টি গ্রাম ছিল। এই গ্রামগুলির মধ্যে অন্যতম ছিল বড্ডি গ্রাম। আজ থেকে প্রায় ১০০ বছর আগে এই গ্রামের জমিদার সুবুদ্ধি পরিবারের উদ্যোগে চুন-সুরকি দিয়ে তৈরি করা হয় সুদৃশ্য এই লক্ষ্মী-জনার্দন মন্দির৷ চলত পূজা অর্চনাও৷ পরবর্তীতে মুকুটমণিপুর জলাধারের জন্য খননকার্য শুরু হলে সুবুদ্ধি পরিবার-সহ গোটা গ্রাম উচ্ছেদ করা হয়। সেই সময় মন্দির থেকে বিগ্রত সরিয়ে নিয়ে যায় সুবুদ্ধি পরিবার৷ থেকে যায় ঈশ্বরহীন মন্দির৷ জলাধার তৈরির সময় গ্রামের সমস্ত ঘরবাড়ি ভেঙে দেওয়া হলেও কোনও এক অজ্ঞাত কারণে অক্ষত থেকে যায় এই মন্দির। তবে জলাধার তৈরির পর থেকে বছরের ন’মাস তা লুকিয়ে থাকে জলের আড়ালে৷ 

ফি বছর শীতের মরসুমে মুকুটমণিপুরে ভিড় জমান অসংখ্য পর্যটক৷ বিশাল জলাধার ঘুরে দেখার পাশাপাশি তাঁরা ঘুরে দেখেন অদূরে থাকা পরেশনাথ পাহাড়, মুসাফিরানা ভিউ পয়েন্ট ও ডিয়ার পার্ক। তবে প্রচারের আলোয় আসেনি লক্ষ্মী-জনার্দনের এই খালি মন্দির৷  তাই অধিকাংশ পর্যটকেরই অদেখা থেকে যায় এই প্রাচীন স্থাপত্য৷ স্থানীয়দের কথায়, আমরা বছরের পর বছর এই মন্দির দেখে আসছি। তবে অদ্ভূত বিষয় হল, বছরের ৯ মাস জলের তলায় থাকলেও মন্দিরের কাঠামোতে তেমন কোনও ক্ষতি হয়নি। এই মন্দিরটি প্রচারের আলোয় এলে পর্যটকরা তা দেখার সুযোগ পাবেন৷