কলকাতা: রাজ্যের করোনা পরিস্থিতি নিয়ে শুক্রবার পুলিশ সুপার ও জেলা শাসকদের সঙ্গে ভিডিও বৈঠকে খোলাখুলি আলোচনা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ রাজ্যের বিভিন্ন জেলার পরিস্থিতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানালেন তিনি৷ কোনও রকম লুকোচাপা না করেই নবান্নের বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দেন, হাওড়ার অবস্থা খুবই স্পর্শকাতর৷ সংক্রমণ ঠেকাতে না পারলে গোষ্ঠী সংক্রমণের আশঙ্কা রয়েছে৷ সেই সঙ্গে ১৪ দিনের মধ্যে হাওড়াকে রেড জোন থেকে গ্রিন জোনে ফেরাতে হবে বলেও কড়া নির্দেশ তাঁর৷ হাওড়া ছাড়াও কলকাতার বেশ কিছু এলাকা রেড ডোন বলে চিহ্নিত হয়েছে৷ জটিল পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে উত্তর চব্বিশ পরগণাও৷
এদিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, কড়াভাবে বিষয়টি না দেখলে বিপদ আছে৷ হাওড়ার পরিস্থিতি ক্রমেই খারাপ হচ্ছে৷ কঠোর ভাবে লকডাউন না মানলে গোষ্ঠী সংক্রমণের দিকে এগিয়ে যাবে হাওড়া৷ প্রয়োজনে আপনাদের বাড়িতে খাবার পৌঁছে দেওয়া হবে৷ পুলিশ-প্রশাসন সব সময় আপনাদের পাশে আছে৷ কিন্তু কোনও ভাবেই বাড়ির বাইরে অযথা বেরনো যাবে না৷
বাজারে ঢোকার ক্ষেত্রেও বাধা নিষেধ থাকবে৷ মুখ্যমন্ত্রীর কড়া নির্দেশ, বাজারে ভিড় চলবে না৷ একটা দোকানে ৫ জনের বেশি দাঁড়াতে পারবেন না৷ প্রতিটি বাজারে স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা করতে হবে৷ বাজারে ঢোকার আগে এবং বাজার থেকে বেরনোর সময় হাত স্যানিটাইজ করতে হবে৷ মাস্ক পড়া বাধ্যতামূলক৷ মাস্ক না পরলে বাজারে ঢোকার অনুমতি মিলবে না৷ লকডাউন ঠিকমতো না মানলে নামানো হবে সশস্ত্র পুলিশ বাহিনী। বিশেষত ‘রেড জোন’-এ। হাওড়া ও কলকাতার কোথাও কোথাও পূ্র্ণ লকডাউন থাকবে বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি৷
মুখ্যমন্ত্রী জানান, পশ্চিমবঙ্গের ২৩টি জেলার মধ্যে ১০টি জেলায় এখনও সংক্রমণের কোনও খবর নেই৷ কিন্তু তা বলে এই সকল জেলাগুলিকে হালকা ভাবে নিলে চলবে না৷ প্রয়োজনীয় সতর্কতা মেনে চলতে হবে সকলকে৷ কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার, উত্তর দিনাজপুর, দক্ষিণ দিনাজপুর, মালদা , বীরভূম, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া , পূর্ব বর্ধমান এবং ঝাড়গ্রামে সংক্রমণ ছড়াতে পারেনি বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী৷
চিন্তা রয়েছে উত্তর ২৪ পরগনা নিয়েও। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, উত্তর চব্বিশ পরগণাতেই প্রথম থাবা বসিয়েছিল ডেঙ্গি৷ আবার করোনার সূত্রপাতও সেখানে৷ এই মুহূর্তে সীমান্ত লাগোয়া এই জেলাটি ‘রেড জোন’-এ রয়েছে। আগামী ১৪ দিনের মধ্যে উঃ চব্বিশ পরগণাকে ‘অরেঞ্জ জোন’-এ ফিরিয়ে আনতে হবে বলেও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। এই প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, মেদিনীপুরেও রেড জোন ছিল৷ কিন্তু তারা এখন অরেঞ্জ জোনে চলে এসেছে৷ ফলে চেষ্টা করলে সবটাই সম্ভব৷
এদিকে, রাতের অন্ধকারে সীমান্ত পেরিয়ে রাজ্যে ঢুকছে বাইরের লোক৷ বাড়ছে সংক্রমণের সম্ভাবনা৷ পুলিশ সুপারদের তাঁর কড়া নির্দেশ, কোথা দিয়ে কে আসছে নজর রাখতে হবে৷ প্রয়োজনে দিন-রাত কাজ করতে হবে৷ সীমান্ত দিয়ে কাউকে ঢুকতে দেওয়া যাবে না৷ তিনি আরও বলেন, করোনা মোকাবিলায় প্রথম থেকেই রাজ্য কাজ করছে৷ তার পরেও বিরোধীরা সমালোচনা করছে৷ প্যারা মিলিটারি কিসের প্রয়োজন? কলকাতা পুলিশ ও রাজ্য পুলিশ সমানে কাজ করে চলেছে৷ অন্যদিকে, জলপাইগুড়িতে বিএসএফ সাংসদদের নিয়ে ঘুরছে৷ প্রশাসনকে নিরপেক্ষ হতে হবে৷ এত ভয় কিসের?
জেলা শাসকদের উদ্দেশ্যে তাঁর নির্দেশ, প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা নিয়ে প্রতিদিন হাসপাতালগুলি পরিদর্শন করতে হবে৷ রেশন দোকানগুলি মনিটরিং করতে হবে৷
শিলিগুড়ির উপর বিশেষ নজর রাখার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এটি উত্তরবঙ্গের গেটওয়ে৷ বহু মানুষ এখানে আসেন৷ তাই শিলিগুড়ির উপর যেন কড়া নজর থাকে৷ লকডাউন ভাঙলেই আইন মেনে হবে শাস্তি৷