কলকাতা: বাংলা দখলের লক্ষ্যে দেশের শাসকদলের কাছে রাজ্যের তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে ইস্যুগুলির মধ্যে অন্যতম ইস্যু হল রাজ্যে ঘটে চলা বিভিন্ন অপরাধমূলক ঘটনা। তবে ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো ২০১৮ সালের পরিসংখ্যানে ধারাবাহিক ভাবে এই নিয়ে দ্বিতীয়বারও দেশের মধ্যে সবথেকে নিরাপদ শহরের তকমা পেল মহানগরী কলকাতা। অর্থাৎ ২০ লক্ষেরও বেশি জনসংখ্যার এই কলকাতা শহর কম অপরাধপ্রবণ হিসেবে দেশের মধ্যে প্রথম স্থানে। সাম্প্রতিক পরিস্থিতির নিরিখে এই পরিসংখ্যান নিঃসন্দেহে একটি বড়সড় সাফল্য।
এই মূল্যায়ণ দেশের অন্যান্য বড় শহরগুলির তুলনায় প্রত্যক্ষ অপরাধের সংখ্যার ভিত্তিতে করা হয়েছে, যা কলকাতায় সর্বনিম্ন। আর এই সাফল্যের জন্য কলকাতা পুলিশকে অভিনন্দন জানার অনেক কারণ রয়েছে। বৃহত্তর মানবিক ও প্রযুক্তিগত নজরদারি, জনগোষ্ঠীর সচেতনতার জন্য কর্মসূচি, আরও বেশি টহলদারি, নাইট পুলিশিং এবং সিটি পুলিশ নিয়োগ এই জাতীয় পরিকল্পনাগুলিই এই ফলাফলের মূলে। যা পরবর্তীকালেও এই ধরনের পদক্ষেপে উৎসাহ যোগাবে। যদিও এই শহর ভারতীয় দণ্ডবিধির আওতায় সর্বনিম্ন অপরাধে প্রথম স্থান অধিকার করেছে, তবে পাশাপাশি আরো একটি সুখবর হলো, পরিসংখ্যান অনুযায়ী শহরের অপরাধপ্রবণতা দিন দিন কমছে যা এনসিআরবি-র মতে অত্যন্ত ভালো লক্ষণ।
যদিও অপরাধের ভিন্নতার ওপর নির্ভর করেই পরিসংখ্যান করা হয়। স্বাভাবিকভাবেই, অপরাধের বৈচিত্র এবং গুরুত্বের ভিত্তিতে, কোনও শহরের নিরাপত্তার মূল্যায়ন করার সময় কিছু ধরণের অপরাধ তুলনায় অনেক বেশি ভয়ঙ্কর হয়। কলকাতা শহরের ক্ষেত্রে এই পরিসংখ্যানে দেখা গেছে যে ধর্ষণ ও হত্যার মতো প্রত্যক্ষ অপরাধের দৃষ্টিকোণ থেকে সবচেয়ে নিরাপদ শহর কলকাতা। তবে আঘাত করা বা গুরুতর আঘাত করার মতো ঘটনার ক্ষেত্রে এই শহর তালিকার শীর্ষে রয়েছে। যদিও এই ঘটনাগুলির কোনও উদ্দেশ্যমূলক মারাত্মক পরিণতি নেই বা মৃত্যুর ঘটনাও নয়। তবে “আঘাত” করার মত অপরাধেরও ভিন্নতা আছে। অর্থাৎ এই আঘাত কতটা হিংস্র? যেমন একটি অ্যাসিড অ্যাটাকের মত ঘটনা গুরুতর আঘাতের মধ্যে পড়ে এবং সেদিক থেকে দুটি অ্যাসিড আক্রমণের ঘটনার সাক্ষী হিসেবে শহর কলকাতা তপ্রথম তিনটি শহরের মধ্যে আছে।
আর এখানেই মতবিরোধ। তাই পুলিশের কৃতিত্বের প্রশ্নে জনসাধারণের উপলব্ধিও বিবেচনাধীন। তাদের দৃষ্টিকোণ থেকে কোনও পরিবেশ যখন এতটা সহিংস থাকে তখন তাকে সবচেয়ে নিরাপদ বলা কতটা গ্রহণযোগ্য ? তবে মহিলাদের নিরাপত্তার প্রশ্নে কলকাতা শহর তুলনায় অনেকটাই নিরাপদ যখন এই শহরের বৃদ্ধরা সে তুলনায় অনেক বেশি আক্রান্ত। গত এক বছরে এই শহর ও শহরতলীতে বয়স্কদের নৃশংস ভাবে খুনের ঘটনা ঘটেছে ৭টি যা অনভিপ্রেত। তবুও চূড়ান্ত সমালোচনার মধ্যেও মানুষের নিরাপদ অনুভূতিই কম অপরাধপ্রবণ শহর হিসেবে কলকাতাকে শেষে পৌঁছে দিয়েছে।