হাকিম নড়লেও হুকুম নড়ে না, কতটা চাপে অভিষেক? এবার কি কুন্তলের মুখোমুখি?

হাকিম নড়লেও হুকুম নড়ে না, কতটা চাপে অভিষেক? এবার কি কুন্তলের মুখোমুখি?

কলকাতা:  হাকিম নড়লেও হুকুম নড়ে না, কতটা চাপে অভিষেক? হাইকোর্টে বেঞ্চ বদল হলেও স্বস্তি পেলেন না অভিষেক! নিঃসন্দেহে অস্বস্তি বাড়ল তৃণমূলের! আদালতে স্বস্তি পেলেন না অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। কথায় বলে হাকিম নড়লেও হুকুম নড়ে না। কার্যত সেটাই স্পষ্ট হল আদালতের নির্দেশে। নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে ধৃত কুন্তল ঘোষের চিঠি সংক্রান্ত মামলায় বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের দেওয়া নির্দেশে কোনও স্থগিতাদেশ দিলেন না কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিনহা। এর পাশাপাশি রক্ষাকবচও পেলেন না অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।

অভিষেকের এই সম্পর্কিত আবেদন শুক্রবার খারিজ করে দিয়েছেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিনহা।  শুনানিতে অভিষেকের আইনজীবী আগের নির্দেশ পুনর্বিবেচনা করার পাশাপাশি তাঁর মক্কেলকে অন্তর্বর্তী রক্ষাকবচ দেওয়ার আবেদনও জানান। তদন্তকারী সংস্থা যাতে অভিষেকের বিরুদ্ধে চরম পদক্ষেপ করতে না পারে, সেই আবেদনও করেন অভিষেকের আইনজীবী। কিন্তু বিচারপতি সিনহা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন এখনই রক্ষাকবচ দেওয়া যাচ্ছে না। এ বিষয়ে বিচারপতি সিনহা বলেন, “আদালতের দরজা চব্বিশ ঘন্টা সাত দিন খোলা থাকবে। প্রয়োজন মনে করলেই আসতে পারেন। কিন্তু কোনও রক্ষাকবচ নয়৷”
 

কয়েক সপ্তাহ আগে কুন্তল ঘোষ ইডি এবং সিবিআইয়ের বিরুদ্ধে চাঞ্চল্যকর অভিযোগ করেছিলেন। কুন্তলের অভিযোগ ছিল দুর্নীতি মামলায় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম বলানোর জন্য তাঁকে নাকি ইডি এবং সিবিআই আধিকারিকরা চাপ দিচ্ছেন। এরপরই অভিযোগটি নিম্ন আদালতে চিঠি দিয়ে জানান কুন্তল। এর পাশাপাশি হেস্টিংস থানাতেও চিঠি দিয়ে পুলিশি হস্তক্ষেপ চান তিনি। আর সেই চিঠি সংক্রান্ত বিষয়টি নিয়েই কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন এ ব্যাপারে প্রয়োজনে সিবিআই এবং ইডি অভিষেককে জিজ্ঞাসাবাদ করতেই পারে।

কিন্তু তারপরেই শীর্ষ আদালতের নির্দেশে চিঠি সংক্রান্ত মামলা থেকে সরে যেতে হয় বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়কে। পরিবর্তে মামলাটি যায় বিচারপতি অমৃতা সিনহার এজলাসে। আর কুন্তল ঘোষের চিঠি-মামলা নিয়ে গত সোমবার গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণ শুনিয়েছিলেন বিচারপতি অমৃতা সিংহ। এই মামলায় তদন্তে সহযোগিতা করা উচিত অভিষেকের, এমনই মন্তব্য করেছিলেন বিচারপতি সিনহা।

শুধু তাই নয়, অভিষেককে এই মামলায় যুক্ত করারও নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি। অভিষেকের আইনজীবীদের উদ্দেশে সেদিন বিচারপতি বলেন, ”তদন্তের উপরে কেউ নন। আপনি তদন্তে সহযোগিতা করুন। তাতে অসুবিধার কী রয়েছে?” জবাবে অভিষেকের আইনজীবী বলেন, “এই মামলায় আমার বক্তব্য না শুনেই নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। কীভাবে তদন্তে নাম জড়িয়ে পড়েছে সেটা বোঝা যাচ্ছে না। কী অভিযোগ রয়েছে তা পরিষ্কার নয়।” পাল্টা বিচারপতি বলেছিলেন, “আমি তো এখনই বলছি না আপনার বিরুদ্ধে অভিযোগ সঠিক। কিন্তু তদন্তে আপনার সহযোগিতা করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।” এরপর অভিষেকের আইনজীবী বলেন, “আমরা সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিলাম। সেখানে কিছু নির্দেশ দিয়েছে। শীর্ষ আদালত অন্তর্বর্তী রক্ষাকবচ দিয়েছিল।” বিচারপতি সিনহা বলেছিলেন, “জনৈক বিচারপতির বিরুদ্ধে কিছু বলা হয়েছিল। সেই কারণে মামলা সরিয়ে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। কিন্তু মামলার বিষয় নিয়ে শীর্ষ আদালতের কোনও সুনির্দিষ্ট নির্দেশ নেই।”

আদালতের এমন নির্দেশে এটাই স্পষ্ট হয়েছে যে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় যে সমস্ত রায় দিয়েছিলেন সেখান থেকে এখনই স্বস্তি মিলছে না তৃণমূলের। অর্থাৎ আইন চলেছে তার নিজস্ব পথেই। মামলায় বেঞ্চ বদল হলেও নির্দেশে তফাৎ দেখা যায়নি। তবে কী এবার অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে জেরা করবে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা? এই চর্চা যথারীতি শুরু হয়েছে রাজ্য জুড়ে। যে বিষয়টির জন্য একেবারেই প্রস্তুত ছিল না তৃণমূল। এতে তৃণমূলের অস্বস্তি রাতারাতি বহু গুণে বেড়ে গিয়েছে। তাই আগামী দিনে কুন্তল ঘোষের চিঠি সংক্রান্ত মামলা ও অভিষেককে নিয়ে কলকাতা হাইকোর্ট আরও বড় নির্দেশ দেয় কিনা এখন তারই অপেক্ষা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

three × four =