কলকাতা: মহার্ঘ জ্বালানি। দিন দিন আরো বাড়ছে পেট্রোল এবং ডিজেলের দাম। নাভিশ্বাস উঠেছে সাধারণ মানুষের। আর আজ এই পেট্রোপণ্যের লাগামছাড়া মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদ করতে অভিনব পন্থা অবলম্বন করেছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। চিরাচরিত নিজের গাড়ি চেপে নয়, ব্যাটারি চালিত গাড়িতে নবান্নে পৌঁছান তিনি। জ্বালানির অত্যাধিক মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে কেন্দ্রীয় সরকারকে এক হাত নিয়ে তিনি বলেন, বিজেপি সরকার চাইছে সাধারণ মানুষের পকেট কেটে সকলকে অসহায় অবস্থার মধ্যে ফেলে দিতে। নির্বাচন এলেই তারা বলে বিনা পয়সায় গ্যাস দেবে, এদিকে রান্নার গ্যাস থেকে শুরু করে পেট্রোল-ডিজেলের দাম বেড়ে যাচ্ছে। তবে পেট্রোল-ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির পেছনে অন্যতম কারণ রাজ্য এবং কেন্দ্রের নেওয়া কর। সে ক্ষেত্রে এই মূল্যবৃদ্ধিতে বড় আয় হচ্ছে কেন্দ্র এবং রাজ্যের দুয়েরই। তাহলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই প্রতিবাদ কি যথার্থ? তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
হিসেব বলছে, কেন্দ্র সরকার এবং সমস্ত রাজ্য সরকার পেট্রোল-ডিজেলের দামে আলাদা করে নেয়। এ ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের থেকে কেন্দ্রীয় সরকার বেশি কর নিলেও সাধারণ মানুষকে করের টাকা দিতে হচ্ছে দু’জনকেই। দেখা যায়, লিটার প্রতি পেট্রলে সাধারণত রাজ্য সরকার ২০ টাকা কর নেয়, এদিকে কেন্দ্রীয় সরকার কর নেয় ৩৩ টাকা! পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে রাজ্য সরকার লিটার প্রতি পেট্রোলে উপার্জন করে ১৮.৪৬ টাকা এবং কেন্দ্রীয় সরকার উপার্জন করে ৩২.৯০ টাকা, অন্যদিকে ডিজেলের ক্ষেত্রে কেন্দ্রের আয় পশ্চিমবঙ্গ থেকে ৩১.৮০ টাকা এবং রাজ্যের আয় ১২.৭৭ টাকা! সুতরাং বোঝা যাচ্ছে সাধারণভাবে জ্বালানির যে দাম তার থেকে অনেক বেশি দাম সাধারন মানুষকে দিতে হচ্ছে শুধুমাত্র কেন্দ্র এবং রাজ্যের এত করের জন্য। এক্ষেত্রে যদি দুই সরকার করের বোঝা সাধারণ মানুষের ওপর থেকে কমিয়ে দেয় তাহলে জ্বালানির এত মূল্যবৃদ্ধি কখনোই সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গ লিটার প্রতি পেট্রোল এবং ডিজেলের দাম এক টাকা করে কমানো হয়েছে বলে আগেই জানিয়েছেন রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। পাশাপাশি তিনি কেন্দ্রীয় সরকারের এত বেশি করে নেওয়ার বিরুদ্ধেও আওয়াজ তুলেছেন।
তথ্য আরো বলছে, মহারাষ্ট্র থেকে শুরু করে মধ্যপ্রদেশ, মনিপুর, অন্ধপ্রদেশ, রাজস্থান, তেলেঙ্গানার মত অনেক রাজ্য থেকে কেন্দ্রীয় সরকার জ্বালানির লিটার প্রতি ৩৩ টাকাই কর নেয়। সে ক্ষেত্রে রাজ্যে জ্বালানির মূল দাম ৩০ টাকার কাছাকাছি হলেও কেন্দ্র এবং রাজ্যের কর মিলিয়ে তার দাম হয়ে যায় প্রায় ৯০-১০০ টাকার কাছাকাছি। এ ক্ষেত্রে দেখা গেছে রাজ্য সরকারের মধ্যে মহারাষ্ট্রের মুম্বই, থানে এবং নবী মুম্বই সবচেয়ে বেশি করে নেয়। পশ্চিমবঙ্গ বাকি রাজ্যের তুলনায় কম টাকা করে কর নিলেও সেখান থেকে লিটার প্রতি জ্বালানির এক টাকা করে কমিয়েছে। তবে কেন্দ্র এবং রাজ্যের মিলিত করের বোঝা যায় সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে এই বিষয়ে কোন সন্দেহ থাকতে পারে না। তবে দুই সরকারের করের পাশাপাশি ডিলারের কমিশনও একটা বড় ফ্যাক্টর। কারণ, সাধারণত আগে ডিলার কমিশন ৩ শতাংশ ছিল, ফেব্রুয়ারি ২০২১-এর হিসেব বলছে তা বেড়ে হয়েছে ৪ শতাংশ। উল্লেখ্য পশ্চিমবঙ্গের মতই রাজস্থান, অসম এবং মেঘালয় জ্বালানির দাম কমিয়েছে।