কলকাতা: পূর্ব-পশ্চিম বা উত্তর-দক্ষিণ, চতুর্দিকে শুধু তৃণমূল আর তৃণমূল। পঞ্চায়েত নির্বাচনের ফলাফল দেখলে একটা কথাই বলতে হয়, রাজ্য জুড়ে চলেছে তৃণমূল ঝড়। তৃণমূলের দাপটে অস্তিত্ব সংকটে পড়ে গিয়েছে বিরোধীরা। যদিও বিরোধীদের দাবি ব্যাপক সন্ত্রাস ও রিগিং করে পঞ্চায়েত ভোটে জিতেছে তৃণমূল। এই আবহের মধ্যে ধর্মতলায় একুশে জুলাইয়ের সমাবেশ থেকে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্ট করে দিয়েছেন তাঁর পাখির চোখ এখন শুধুই দিল্লি। সদ্য যে বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’ গঠিত হয়েছে সে কথাই বারবার উঠে এসেছে মমতার বক্তব্যে।
কিন্তু মমতা যেভাবে কেন্দ্রীয় রাজনীতিকে বেশি ফোকাসে রাখতে চাইছেন সেটা কতটা পারবে তৃণমূল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। হাতে পর্যাপ্ত সংখ্যক সাংসদ না থাকলে দিল্লি রাজনীতিকে যে কন্ট্রোল করা যায় না, সেটা ভাল করেই জানেন তৃণমূল সুপ্রিমো। তাই আগামী লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গ থেকে তৃণমূলের কতজন জিতবেন তার উপরেই নির্ভর করছে মমতার কতটা প্রভাব থাকবে দিল্লির রাজনীতিতে।
২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে যথারীতি খুব ভাল ফল করেছিল তৃণমূল। ৩৪ শতাংশ আসনে নির্বাচন হয়নি। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে গিয়েছিলেন তৃণমূল প্রার্থীরা। এরপর যে ৬৬ শতাংশ আসনে ভোট হয়েছিল সেখানেও তৃণমূল ঝড় দেখা যায়। তবে ব্যাপক রিগিং ও সন্ত্রাসের অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। এবারের মতোই গতবারেও বিরোধীরা ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে সেই পঞ্চায়েত নির্বাচনের এক বছর পর অর্থাৎ ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলের আসন সংখ্যা ২২-এ নেমে আসে। রাতারাতি বিজেপির আসন বেড়ে হয়ে যায় ১৮। তাই রাজনৈতিক মহলের একাংশের প্রশ্ন, আগামী লোকসভা নির্বাচনেও এমন কিছু ঘটবে না তো? সেই সূত্রে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর দাবি চব্বিশের নির্বাচনে তৃণমূলের আসন সংখ্যা গতবারের অর্ধেক, অর্থাৎ ১১-এ নেমে আসবে।
পশ্চিমবঙ্গ ছাড়া অন্য কোনও রাজ্যে তৃণমূলের অস্তিত্ব নেই। কিন্তু এখন থেকেই তৃণমূল কেন্দ্রীয় রাজনীতিকে কন্ট্রোল করার চেষ্টা করছে বলে মনে করা হচ্ছে। সেক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গ থেকে প্রায় সমস্ত আসনে জিতলেও তৃণমূল কি কেন্দ্রীয় রাজনীতিকে কন্ট্রোল করতে পারবে? এই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
এ প্রসঙ্গে ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলের কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। সেবার পশ্চিমবঙ্গে ৪২টি আসনের মধ্যে তৃণমূল একাই পেয়েছিল ৩৪টি আসন। এরপর দিল্লি রাজনীতিকে কতটা কন্ট্রোল করতে পেরেছিল তৃণমূল? ২০১৯ সালের গোড়ার দিকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে জোট গঠনের চেষ্টা হয়েছিল। কলকাতার ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে বিরোধীদের মেগা সমাবেশ হয়। কিন্তু লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির আসন সংখ্যা আরও বেড়ে তিনশোর গণ্ডি পেরিয়ে যায়। তাই এখন থেকেই বিরোধী জোটকে তৃণমূল যেভাবে নেতৃত্ব দেওয়ার চেষ্টা করছে তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। আসলে পঞ্চায়েত নির্বাচনে অভূতপূর্ব সাফল্যের পর আত্মবিশ্বাসী তৃণমূলকে এমন ভূমিকায় দেখা যাচ্ছে। তবে তৃণমূলের সেই প্রচেষ্টা কতটা বাস্তবায়িত হবে সেটা সময়ই বলবে।